এসএসডি কি? এসএসডি এবং এইচডিডির মধ্যে পার্থক্য

এসএসডি এর পুরো অর্থ হচ্ছে সলিড-স্টেট ড্রাইভ। এটি একটি ডেটা স্টোরেজ ডিভাইস যা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ডেটা সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এসএসডি-তে কোনো চলমান অংশ (যেমন: হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ বা এইচডিডি-এর মতো ডিস্ক বা মেকানিকাল হেড) থাকে না। বরং এটি ফ্ল্যাশ মেমোরি ব্যবহার করে ডেটা রিড ও রাইট করে। এ কারণে এসএসডি এইচডিডি-এর চেয়ে দ্রুত, টেকসই এবং শক্তিশালী।

এসএসডি তৈরির ইতিহাস

সলিড-স্টেট ড্রাইভ বা এসএসডি-এর ইতিহাস কয়েক দশক ধরে বিস্তৃত।

১৯৫০-এর দশক এসএসডি-এর ধারণার শুরুর সময়। এই সময় ফ্ল্যাশ মেমোরির পূর্বসূরী হিসেবে কিছু ড্রাম স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহার করা হতো। এগুলো ছিল বড় এবং ধীরগতির। ১৯৭০-এর দশকে সলিড-স্টেট স্টোরেজ প্রথমবারের মতো কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়। আইবিএম-এর মতো কোম্পানি তাদের মেইনফ্রেম কম্পিউটারে উচ্চগতির মেমরি ইউনিট হিসেবে এসএসডি-এর পূর্বসূরী ডিভাইস অন্তর্ভুক্ত করে। তবে এগুলো ছিল খুবই ব্যয়বহুল। ১৯৮০-এর দশকে আধুনিক এসএসডি-এর ভিত্তি গড়ে ওঠে। তশিবা এই সময় ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরি উদ্ভাবন করে, যা সাশ্রয়ী মূল্যে ডেটা সঞ্চয় করার নতুন উপায় উন্মোচন করে। ১৯৯০-এর দশকে এসএসডি-এর জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। সামরিক এবং উচ্চগতির ডেটা সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তায় এটি ব্যবহৃত হতে থাকে। ২০০০-এর দশকে এসএসডি প্রযুক্তি মূলধারার বাজারে প্রবেশ করে। বড় কোম্পানি যেমন ইন্টেল, স্যামসাং, এবং কিংস্টন তাদের এসএসডি পণ্য বাজারজাত করতে শুরু করে। বর্তমান সময় এসএসডি আজকের দিনে কম্পিউটার এবং ল্যাপটপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এসএসডি-এর দাম কমে এসেছে এবং এর পারফরম্যান্স ব্যাপক উন্নত হয়েছে।

এসএসডি কিভাবে কাজ করে?

এসএসডি একটি স্টোরেজ ডিভাইস, যা ডেটা সংরক্ষণের জন্য মেকানিক্যাল পার্টের পরিবর্তে নন-ভলাটাইল মেমোরি চিপ ব্যবহার করে। এটি ট্র্যাডিশনাল হার্ড ড্রাইভের চেয়ে দ্রুততর এবং টেকসই।

এসএসডি-এর প্রধান অংশ হলো ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরি। এটি ডেটা ইলেকট্রিক্যাল চার্জের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে, যা পাওয়ার সাপ্লাই ছাড়াও ডেটা ধরে রাখতে সক্ষম। এসএসডি থেকে ডেটা পড়ার জন্য কন্ট্রোলার একটি নির্দিষ্ট সেল চিহ্নিত করে এবং সেই ডেটা রিড করে।এসএসডি-তে ডেটা লেখার সময়, ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরি সেলে ইলেকট্রিক চার্জ পাঠিয়ে নির্দিষ্ট ডেটা সংরক্ষণ করা হয়। এসডি-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কন্ট্রোলার। এটি ডেটা পড়া, লেখা এবং পরিচালনা করে। এটি ডেটার অবস্থান নির্ধারণ এবং পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এসএসডি-এর বড় একটি সুবিধা হলো কম পাওয়ার ব্যবহার। কারণ এতে কোনো মুভিং পার্ট নেই।

এসএসডির প্রকারভেদ

এসএসডি বিভিন্ন প্রকারের হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

সাটা এসএসডি:

  • এটি পুরনো এবং প্রচলিত এসএসডি প্রকার।
  • সাটা ইন্টারফেস ব্যবহার করে।
  • সর্বাধিক গতি ৫৫০ এমবি/এস পর্যন্ত।

NVMe এসএসডি:

  • উচ্চ গতির জন্য উপযোগী।
  • PCIe ইন্টারফেস ব্যবহার করে।
  • গতি ৩৫০০ এমবি/এস বা তার বেশি।

এম.২ এসএসডি:

  • এটি ছোট এবং ল্যাপটপের জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়।
  • সাটা এবং NVMe উভয় প্রকারে পাওয়া যায়।

ইউ.২ এসএসডি:

  • এটি ডেটা সেন্টারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
  • বড় এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন।

External এসএসডি:

  • বাহ্যিক স্টোরেজ ডিভাইস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • ইউএসবি বা থান্ডারবোল্ট ইন্টারফেস ব্যবহার করে।

এসএসডির বৈশিষ্ট্য

  •  এসএসডি ডেটা পড়া ও লেখার ক্ষেত্রে এইচডিডি-এর তুলনায় অনেক দ্রুত।
  • এসএসডি কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যা ল্যাপটপের ব্যাটারির জন্য সুবিধাজনক।
  • এতে কোনো চলমান অংশ নেই, ফলে এটি বেশি টেকসই।
  • এইচডিডি-এর মতো কোনো শব্দ উৎপন্ন হয় না।
  • এসএসডি কম তাপ সৃষ্টি করে, যা ডিভাইসের জন্য উপকারী।
  • উন্নত প্রযুক্তির কারণে এসএসডি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার উপযোগী।
  • এটি হালকা এবং সহজে বহনযোগ্য।

এসএসডি এবং হার্ড ডিস্কের মধ্যে পার্থক্য

এসএসডি (Solid State Drive) এবং এইচডিডি (Hard Disk Drive) হলো দুটি স্টোরেজ ডিভাইস, যা ডেটা সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যগুলো হলো:

১। গতি:

  • এসএসডি: ডেটা পড়া এবং লেখার গতি অনেক বেশি। এটি সাধারণত ৫৫০ এমবি/এস থেকে ৩৫০০ এমবি/এস বা তার বেশি গতি প্রদান করে।
  • এইচডিডি: ডেটা পড়া এবং লেখার গতি অপেক্ষাকৃত কম, প্রায় ৫০ এমবি/এস থেকে ১৫০ এমবি/এস পর্যন্ত।

২। গঠন ও প্রযুক্তি:

  • এসএসডি: ফ্ল্যাশ মেমোরি ব্যবহার করে। এতে কোনো মেকানিক্যাল অংশ নেই।
  • এইচডিডি: চুম্বকীয় ডিস্ক এবং মেকানিক্যাল হেডের সাহায্যে ডেটা সংরক্ষণ করে।

৩। টেকসই:

  • এসএসডি: মেকানিক্যাল অংশ না থাকার কারণে বেশি টেকসই এবং কম নষ্ট হয়।
  • এইচডিডি: চলমান অংশ থাকায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং সহজে নষ্ট হতে পারে।

৪। তাপ উৎপন্ন:

  • এসএসডি: কম তাপ উৎপন্ন করে।
  • এইচডিডি: তুলনামূলক বেশি তাপ উৎপন্ন করে।

৫। শব্দ:

  • এসএসডি: নিঃশব্দে কাজ করে।
  • এইচডিডি: ঘূর্ণায়মান ডিস্কের কারণে শব্দ সৃষ্টি হয়।

৬। ওজন ও আকৃতি:

  • এসএসডি: হালকা এবং ছোট আকৃতির।
  • এইচডিডি: ভারী এবং বড় আকৃতির।

৭। পাওয়ার ব্যবহার:

  • এসএসডি: কম বিদ্যুৎ খরচ করে, যা ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফ বাড়াতে সাহায্য করে।
  • এইচডিডি: বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।

৮। দাম:

  • এসএসডি: একই স্টোরেজ ক্ষমতার জন্য এইচডিডি-এর তুলনায় বেশি ব্যয়বহুল।
  • এইচডিডি: সস্তা এবং স্টোরেজ ক্ষমতা অনুযায়ী সহজলভ্য।

৯। ব্যবহার:

  • এসএসডি: দ্রুত গতি এবং স্থায়িত্বের প্রয়োজনীয়তায় ব্যবহৃত হয়, যেমন গেমিং, ভিডিও এডিটিং এবং অপারেটিং সিস্টেমের জন্য।
  • এইচডিডি: সাধারণ ফাইল স্টোরেজ এবং ব্যাকআপের জন্য ব্যবহৃত হয়।

১০। জীবনকাল:

  • এসএসডি: ডেটা লেখার সীমাবদ্ধতা থাকলেও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে দীর্ঘস্থায়ী।
  • এইচডিডি: দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারে তবে মেকানিক্যাল অংশ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এসএসডি আধুনিক কম্পিউটিংয়ের জন্য একটি অপরিহার্য । এর উচ্চ গতি, কম বিদ্যুৎ খরচ এবং টেকসই বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে ডেটা সেন্টারের মতো জটিল কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। সঠিক এসএসডি নির্বাচন করে আপনার কম্পিউটিং এর অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করতে পারেন।
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো