aনতুনত্ব এবং ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সফল প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র নিজেদের শিল্পের মধ্যে অগ্রসর হওয়ার জন্য নয়, বরং নতুন বাজারেও প্রবেশ করার জন্য নতুনত্বকে ব্যবহার করে। বর্তমান সময়ে ব্যবসার পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ, তাই টিকে থাকতে হলে নতুনত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া অপরিহার্য।
ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধিতে নতুনত্বের গুরুত্ব
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সফল ব্যবসায়ীরা তাদের বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে নতুন পণ্য, সেবা, প্রক্রিয়া বা ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের বড় একটি অংশ মনে করে, আগামী এক বছরে ব্যবসার বৃদ্ধির জন্য নতুনত্ব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। বিশেষ করে যেসব খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে, যেমন জ্বালানি খাত, সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো নতুনত্বের মাধ্যমে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এমনকি খুচরা বিক্রির মতো শিল্পেও, যেখানে ব্যবসার মডেল পরিবর্তনের তাগিদ তুলনামূলক কম, সেখানে ৩০% এর বেশি প্রতিষ্ঠান নতুনত্বকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হিসেবে দেখছে।
শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুনত্বের কৌশল
সব প্রতিষ্ঠানই তাদের মূল ব্যবসাকে প্রসারিত করতে চায়, তবে সবচেয়ে সফল প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিল্পের সীমানার বাইরেও নতুনত্বের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সফল প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ৬৩% বেশি সম্ভাবনা রাখে নতুন শিল্পে প্রবেশ করার এবং ৫০% বেশি সম্ভাবনা রাখে ভৌগোলিকভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করার।
সাধারণত, ব্যবসার ৮০% প্রবৃদ্ধি একটি প্রতিষ্ঠানের মূল শিল্প থেকেই আসে, তবে নতুনত্ব এই বৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তাইওয়ানভিত্তিক একটি কোম্পানি (TSMC) চিপ উৎপাদন শিল্পকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। তারা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদন সেবা প্রদান করা শুরু করে, পাশাপাশি চিপের ঘনত্ব বাড়িয়ে তাদের আয় প্রতিবছর ১৭% বৃদ্ধি করেছে। একইভাবে, অ্যাপল তাদের নতুন পণ্য যেমন iPod, iPad এবং Apple Watch-এর মাধ্যমে পুরো প্রযুক্তি শিল্পকে পরিবর্তন করেছে।
নতুনত্বের মাধ্যমে প্রসারণ
শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূল ব্যবসাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নতুন শিল্পেও প্রবেশ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিযোগীদের তুলনায় ৭৮% বেশি সম্ভাবনা রাখে নতুন শিল্পে ব্যবসা গড়ে তোলার এবং ৬৮% বেশি সম্ভাবনা রাখে অন্য শিল্প থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করার। বিশ্বের শীর্ষ ২০টি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান তাদের মূল শিল্পে নতুনত্বের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে অথবা নতুন বাজার সৃষ্টি করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ সময় ধরে নতুনত্বে বিনিয়োগ করেছে এবং এটি তাদের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুনত্বের কৌশল
সফল প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুনত্বের কিছু নির্দিষ্ট কৌশল রয়েছে:
১। নতুনত্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা: সফল প্রতিষ্ঠানগুলো সব সময় নতুনত্বকে অগ্রাধিকার দেয় এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য নতুন ধারণা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে। তারা মন্দার সময়েও নতুনত্বের ওপর জোর দেয়, যাতে দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনায় উৎসাহিত করে এবং নতুন পণ্য বা সেবার মাধ্যমে বাজারে পার্থক্য তৈরি করে। এভাবে তারা ক্রেতাদের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে এবং প্রতিযোগীদের তুলনায় এগিয়ে থাকতে পারে।
২। শক্তিশালী দিকগুলোকে সম্প্রসারণ করা: সফল প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিশেষ দক্ষতাগুলোকে নতুন খাতে প্রয়োগ করে। যেমন, উৎপাদন দক্ষতা, মেধাস্বত্ব, গ্রাহক সংযোগ ইত্যাদিকে নতুন বাজারে কাজে লাগায়।
৩। দ্রুত প্রবৃদ্ধির সুযোগ গ্রহণ করা: যেসব শিল্প দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে নতুনত্বের মাধ্যমে বাজার দখলের সুযোগ নেওয়া তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং লাভজনক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা অনেক সময় লাভজনক হতে পারে।
৪। নিজের ব্যবসাকে বদলে ফেলা: কিছু প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র বাজারের প্রবণতা অনুসরণ করে না, বরং নিজেরাই নতুন প্রবণতা তৈরি করে। তারা উদ্ভাবনী চিন্তাধারার মাধ্যমে প্রচলিত কাঠামো পরিবর্তন করে এবং ব্যবসায় নতুন দিক উন্মোচন করে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্ডুরিল ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে নতুন পদ্ধতি চালু করে প্রচলিত ব্যয় কাঠামোকে বদলে দিয়েছে, যা শিল্পে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
৫। অধিগ্রহণ এবং একীভূতকরণের মাধ্যমে দ্রুত বৃদ্ধি: শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তি ও মেধাস্বত্ব অধিগ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ায়। তারা নতুন বাজারে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো চিহ্নিত করে এবং সেগুলো অর্জনের পরিকল্পনা করে।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই যদি দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি চায়, তবে নতুনত্বে বিনিয়োগ করা জরুরি। সফল প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু নিজেদের শিল্পেই নতুনত্বের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে না, বরং নতুন বাজারেও প্রবেশ করে। তারা নতুন পণ্য, ব্যবসায়িক মডেল এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্পকে পরিবর্তন করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। তাই, যেকোনো প্রতিষ্ঠান যদি তাদের প্রতিযোগীদের তুলনায় এগিয়ে থাকতে চায়, তবে তাদের নতুনত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
যে কোনো কোম্পানির উদ্ভাবনী প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধি করার ৫টি উপায়