জাপানের গবেষকরা রোবটের মুখের অভিব্যক্তি প্রকাশের নুতন পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছেন

রোবট প্রযুক্তির উন্নতি দিন দিন আরও বাস্তবসম্মত হয়ে উঠছে। জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করেছেন যা অ্যান্ড্রয়েড রোবটের মুখের অভিব্যক্তিকে আরও স্বাভাবিক করে তুলতে পারে। এই নতুন পদ্ধতিতে রোবট বিভিন্ন আবেগ যেমন “উত্তেজিত” বা “ঘুমকাতুরে” ভাব প্রকাশ করতে পারবে।

এতদিন পর্যন্ত, অ্যান্ড্রয়েড রোবটগুলোর মুখের অভিব্যক্তি তৈরি করতে “প্যাচওয়ার্ক মেথড” ব্যবহার করা হত। এতে রোবটের জন্য বিভিন্ন মুখভঙ্গির তথ্য আগেভাগে প্রস্তুত করা হতো এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সেগুলো পরিবর্তন করা হত। তবে এই পদ্ধতিতে অভিব্যক্তির মধ্যে অস্বাভাবিকতা থেকে যেত, কারণ এক্সপ্রেশনগুলোর মাঝে স্বাভাবিক পরিবর্তন নিশ্চিত করা কঠিন ছিল।

গবেষকরা নতুন যে প্রযুক্তিটি তৈরি করেছেন, সেটি “ওয়েভফর্ম মুভমেন্ট” নামক পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন মুখভঙ্গির অঙ্গভঙ্গিকে পৃথক তরঙ্গ হিসেবে ধরা হয়। যেমন, “শ্বাস নেওয়া”, “চোখের পলক ফেলা” বা “হাই তোলা” – এই সব ক্রিয়াগুলোকে আলাদা আলাদা তরঙ্গরূপে বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর এই তরঙ্গগুলো মুখের সংশ্লিষ্ট অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একসঙ্গে কাজ করে, ফলে স্বাভাবিক ও প্রাণবন্ত মুখভঙ্গি তৈরি হয়।

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রোবটের অভিব্যক্তি আরও সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিশেষ করে, রোবটের অভ্যন্তরীণ অবস্থা বা মনের ভাব অনুযায়ী মুখভঙ্গির পরিবর্তন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে। এই তরঙ্গ-ভিত্তিক পদ্ধতি রোবটকে তার চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে আরও স্বাভাবিকভাবে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে। ফলে, রোবটের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ আরও স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক মনে হবে।

এই গবেষণার অন্যতম প্রধান গবেষক হিশাশি ইশিহারা বলেন, “আমাদের প্রযুক্তির মাধ্যমে রোবটের মুখের অভিব্যক্তি আরও বাস্তবসম্মত হবে। অভ্যন্তরীণ অবস্থা ও বাইরের পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুখভঙ্গি পরিবর্তন হবে, যা রোবটকে আরও জীবন্ত করে তুলবে।”

গবেষক দলের সিনিয়র সদস্য কোইচি ওসুকা মনে করেন, “যদি রোবট স্বাভাবিকভাবে মুখভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারে এবং তার মনের অবস্থা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে, তাহলে মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ আরও স্বাভাবিক হবে। এই প্রযুক্তি রোবটকে শুধু যন্ত্র হিসেবে নয়, বরং একটি অনুভূতি সম্পন্ন সত্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।”

এই নতুন প্রযুক্তির ফলে যোগাযোগ রোবটের কার্যকারিতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে, গ্রাহকসেবা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং ব্যক্তিগত সহায়ক রোবটগুলোর ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। একজন ব্যবহারকারী যদি রোবটের মুখভঙ্গি দেখে তার অনুভূতি বুঝতে পারেন, তবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ আরও স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।

এই পদ্ধতির অন্যতম সুবিধা হলো, এটি পূর্বনির্ধারিত মুখভঙ্গির পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রোবটের অনুভূতি প্রতিফলিত করে। ফলে, রোবটের আচরণ আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাভাবিক ও প্রাণবন্ত বলে মনে হবে। গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে এবং অ্যান্ড্রয়েড রোবটগুলো মানুষের মতো আরও স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগ করতে পারবে।

বর্তমানে, রোবটিক্স প্রযুক্তি ক্রমশ উন্নত হচ্ছে এবং এই নতুন গবেষণা সেই অগ্রগতিরই অংশ। ভবিষ্যতে রোবট যদি মানুষের আবেগ বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম হয়, তাহলে মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর ও কার্যকর হতে পারে। এই প্রযুক্তি শুধু গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বাস্তব জীবনে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ আরও ব্যাপকভাবে ঘটবে।

গবেষকদের মতে, এই প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে রোবটকে কেবল একটি যন্ত্র হিসেবে নয়, বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এটি বিশেষ করে সেবা খাতে, যেমন বয়স্কদের সহায়তা, শিশুদের শিক্ষাদান, এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সব মিলিয়ে, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যে নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেছেন, তা রোবটিক্স জগতে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। এটি রোবটকে আরও স্বাভাবিক ও বাস্তবসম্মত করে তুলবে, যা ভবিষ্যতে মানুষের সঙ্গে রোবটের সম্পর্কের ধরণ পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।

তথ্যসূত্রঃ সাইটেকডেইলি

অ্যাপল তৈরি করেছে রোবট ল্যাম্প যা মানুষের মত অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো