অ্যামাজন বর্তমানে তাদের মহাকাশ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বের অবহেলিত অঞ্চলগুলোতে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে। ১৯৯৪ সালে জেফ বেজোসের গ্যারেজে অনলাইন বুক মার্কেটপ্লেস হিসেবে যাত্রা শুরু করা কোম্পানিটি আজকে একটি বিশ্বমানের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে, যার মাধ্যমে হাজার হাজার স্যাটেলাইট পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পটির নাম “প্রজেক্ট কুইপার,” যার লক্ষ্য হলো বিশ্বের কম ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এমন এলাকা এবং ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা।
আজকের বিশ্বে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। স্কুল, হাসপাতাল, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সংস্থাগুলোতে ইন্টারনেট ছাড়া কার্যক্রম পরিচালনা প্রায় অসম্ভব। তবে, পৃথিবীতে এখনো কোটি কোটি মানুষ রয়েছে, যাদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা নেই বা দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগের কারণে সমস্যায় পড়ছে। অ্যামাজনের মতে, এই প্রযুক্তিগত অসমতা পৃথিবীর অবহেলিত এবং সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলগুলোকে একটি বড় প্রতিযোগিতামূলক অসুবিধার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। প্রজেক্ট কুইপার এ পরিস্থিতি পরিবর্তন করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ যুক্তরাজ্যের গবেষকরা ওয়্যারলেস প্রযুক্তিতে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে
বিশ্বের এমন অনেক অঞ্চল রয়েছে, বিশেষ করে বড় বড় শহরের মধ্যেও, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল বা নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অনেক এলাকাতেও ইন্টারনেট সংকট রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যামাজনের সিয়াটল সদর দপ্তরের ৬০ মিনিট দূরে গাড়ি চালিয়ে গেলে ইন্টারনেট সিগনাল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এ ধরনের এলাকায় প্রচলিত মাটিভিত্তিক ফাইবার বা ওয়্যারলেস সংযোগ স্থাপন করা ব্যয়বহুল এবং ভৌগোলিক কারণে বেশ জটিল হয়ে ওঠে। স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড এই ফাঁকগুলো পূরণ করতে পারে, তবে এর জন্য বিশেষ প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন প্রয়োজন।
অ্যামাজনের মতে, এই প্রকল্পটির তিনটি প্রধান অংশ রয়েছে: গ্রাউন্ড ইন্সট্রাকচার, স্যাটেলাইট এবং কাস্টমার টার্মিনাল। প্রথমত, গ্রাউন্ড ইন্সট্রাকচার বা ভূমিভিত্তিক অবকাঠামো, যেখানে গেটওয়ে অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হয়। এই অ্যান্টেনাগুলো নিরাপদে গ্রাহকদের ডেটা স্যাটেলাইটে প্রেরণ করে এবং সেখান থেকে ডেটা গ্রহণ করে। এছাড়াও, টেলিমেট্রি, ট্র্যাকিং এবং কন্ট্রোল অ্যান্টেনাগুলো স্যাটেলাইটগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক এই গেটওয়েগুলিকে ইন্টারনেট, ক্লাউড এবং অন্যান্য নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করে।
প্রকল্পটির দ্বিতীয় অংশ হলো স্যাটেলাইট। এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে কাজ করবে এবং গ্রাহক এবং গেটওয়ে অ্যান্টেনার মধ্যে ডেটা ট্রাফিক প্রেরণ করবে। এই প্রকল্পের তৃতীয় অংশ হলো কাস্টমার টার্মিনাল, যা প্রজেক্ট কুইপারের গ্রাহকরা ইন্টারনেট সেবা গ্রহণের জন্য ব্যবহার করবে।
যখন কেউ “স্যাটেলাইট কনস্টেলেশন” শব্দটি শোনে, তখন অনেকের মনে ইলন মাস্কের স্টারলিংকের কথা মনে পড়তে পারে। স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলোকে রাতের আকাশে প্রায়ই একত্রে চলতে দেখা যায়। বেজোসের প্রজেক্ট কুইপারেও একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রজেক্ট কুইপারের মাধ্যমে ৩,০০০ এরও বেশি স্যাটেলাইট পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ স্টারলিংক ইন্টারনেট কি? স্টারলিংক ইন্টারনেট বাংলাদেশে কখন আসবে?
অ্যামাজন তাদের প্রথম দুটি প্রোটোটাইপ স্যাটেলাইট ২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর উৎক্ষেপণ করেছে। উৎক্ষেপণ সফল হওয়ায়, কোম্পানি ২০২৫ সালের প্রথম দিকে স্যাটেলাইট কনস্টেলেশন স্থাপনের পরিকল্পনা করছে এবং একই বছর পরে বাণিজ্যিক সেবা চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও এখনো কোনো মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি, তবে অ্যামাজন জানিয়েছে যে তারা এই প্রকল্পের মূল নীতির মধ্যে একটি হলো সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা।
অ্যামাজন জানিয়েছে যে, গ্রাহকদের প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী ভিন্ন হতে পারে, এবং সেবা ও মূল্যের কাঠামো প্রতিটি অঞ্চলের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এমন দেশগুলোতে যেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা দুর্বল, সেখানে কম খরচে সেবা প্রদান করা হতে পারে। এটি দেখায় যে প্রজেক্ট কুইপার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যা বিশ্বের সকল মানুষের জন্য ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে চাইছে।