কেন গুগল ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি হতে যাচ্ছে ?

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গুগল ভাঙতে চাচ্ছে এবং প্রস্তাব দিয়েছে ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি করতে। বিচারক আমিত মেহতার রায়ের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানে গুগলকে বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই রায় গুগলের পুরো কার্যক্রমে পরিবর্তন আনার কারণ হতে পারে এবং এতে কোম্পানির শেয়ারের মূল্য ব্যাপকভাবে পতন ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ অভিযোগ করেছে যে, গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে একচ্ছত্র আধিপত্য সৃষ্টি করতে প্রায় ১০ বছর ধরে প্রতিযোগিতাকে নষ্ট করেছে। বিশেষ করে গুগল মোবাইল ফোন এবং ওয়েব ব্রাউজারে তাদের সার্চ ইঞ্জিনকে ডিফল্ট হিসাবে স্থাপন করে বিশাল অর্থ ব্যয় করে। বিচার বিভাগ গুগলকে এই ধরনের চুক্তি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে এবং ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিচার বিভাগ বলেছে যে ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি করলে এটি অন্য সার্চ ইঞ্জিনের জন্য আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে পারবে।

গুগলের সবচেয়ে বড় আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে, এবং ক্রোম ব্রাউজার এই আয় বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ক্রোম ব্রাউজার গুগলের বিজ্ঞাপন ব্যবসায় অনেকটা সাহায্য করে। এছাড়া, ক্রোমের মাধ্যমে গুগল তার প্রধান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেবা জেমিনি ব্যবহারকারীদের কাছে পরিচিত করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে ক্রোম বিক্রি করা হলে গুগল তার বিজ্ঞাপন ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ক্রোমের মতো বড় একটি ব্রাউজার বিক্রির প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠিন হতে পারে, কারণ বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিও এ ধরনের লেনদেনে অংশ নিতে পারবে না।

আরও পড়ুনঃ ২০২৪ সালের সেরা অ্যাপ ও গেমগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে গুগল

যদিও বিচারক মেহতার রায় বাস্তবায়ন করা হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়, গুগল ইতিমধ্যে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে আইনি লড়াই দীর্ঘায়িত হতে পারে। পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন এই মামলাটি কীভাবে দেখবে তা এখনো অনিশ্চিত, কারণ মামলাটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় শুরু হয়েছিল এবং পরে বাইডেন প্রশাসন এটি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

গুগল অবশ্য এই ধরনের পদক্ষেপকে আমেরিকার নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার জন্য হুমকি বলে দাবি করেছে। গুগলের প্রধান আইন কর্মকর্তা কেন্ট ওয়াকার জানিয়েছেন যে, এ ধরনের পদক্ষেপ আমেরিকার প্রযুক্তি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং ছোট ব্যবসা ও বিকাশকারীদের ক্ষতি করতে পারে। তিনি আরও বলেছেন যে, বিচার বিভাগের এই ধরনের পদক্ষেপ অভূতপূর্ব সরকারি হস্তক্ষেপের উদাহরণ হতে পারে।

বিচার বিভাগ গুগলকে আরও নির্দেশ দিতে চেয়েছে যে তারা যেন অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিনকে প্রাধান্য না দেয়। যদিও বিচার বিভাগ অ্যান্ড্রয়েডও বিক্রি করার প্রস্তাব দেয়নি, তবে এটি পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, যদি গুগলের কার্যক্রমে কোনো অনিয়ম দেখা যায় তবে এটি ভবিষ্যতে বিক্রি করার নির্দেশও দেওয়া হতে পারে।

এছাড়া বিচার বিভাগ গুগলকে তার সার্চ ইঞ্জিনে প্রাপ্ত তথ্যগুলো প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ভাগাভাগি করার নির্দেশ দিয়েছে। গুগল সার্চ ইঞ্জিনের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে যে নীতি গ্রহণ করে তা আরও স্বচ্ছভাবে উপস্থাপনের কথাও বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলে গুগলের ব্যবসা মডেল পরিবর্তিত হতে পারে এবং এর ফলে আয়ের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে।

আরও পড়ুনঃ এবার জিমেইল গোপন রেখেই কাজ করতে পারবেন, গুগল এর নতুন ফিচার শিল্ডেড ইমেইল

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গুগলকে তাদের সার্চ ইঞ্জিন ডিফল্ট হিসাবে স্থাপন করা এবং মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের চুক্তিগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে অ্যাপলের আইফোনের মতো ডিভাইসেও গুগলকে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসাবে রাখা বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, গুগলকে নিজের পরিষেবাগুলো যেমন ইউটিউব এবং নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্ল্যাটফর্ম জেমিনিকে প্রাধান্য দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

এই ধরনের নির্দেশনা দেওয়ার পেছনে কারণ হলো গুগলের অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে একচেটিয়া সুবিধা অর্জন করেছে। বিচার বিভাগ বলেছে যে, এই সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং গুগলকে এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে হবে। বিচার বিভাগের দাবি অনুযায়ী গুগল যদি এই শাস্তিগুলো মেনে চলে, তাহলে ক্রোম ব্রাউজারকে ছয় মাসের মধ্যে বিক্রি করতে হবে। তবে গুগল অবশ্যই এই ধরনের শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করবে, যা আইনি লড়াইকে আরও দীর্ঘায়িত করবে।

এটি ঠিক যে, গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বী ডাকডাকগো বিচার বিভাগের এই ধরনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা মনে করে গুগলকে তার দীর্ঘদিনের অবৈধ কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া দরকার, যাতে বাজারে প্রতিযোগিতা পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায়।

এই ঘটনা মাইক্রোসফটের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যখন প্রায় ২৫ বছর আগে মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। সে সময় মাইক্রোসফটকে ভেঙে ফেলার আদেশ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে আপিল আদালত সেই আদেশ প্রত্যাহার করে। গুগলের ক্ষেত্রেও বিচারক মেহতা এ ধরনের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিচ্ছুক হতে পারেন।

বিচার বিভাগের এই পদক্ষেপ, যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে গুগলের ব্যবসার উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এবং প্রযুক্তি জগতের একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে। গুগল ইতিমধ্যে তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেবা জেমিনির মাধ্যমে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা নিচ্ছে। বিচার বিভাগ গুগলকে নির্দেশ দিয়েছে যাতে অন্যান্য ওয়েবসাইট তাদের কনটেন্ট গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতে না পারে।

এই ধরনের শাস্তি বাস্তবায়িত হলে গুগলের আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে, কারণ শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন থেকে গুগলের ৩০০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এই বছর। তবে বিচার বিভাগের দাবি হলো গুগল অবৈধ উপায়ে এসব সুবিধা অর্জন করেছে এবং প্রতিযোগিতাকে নষ্ট করেছে।

অ্যান্ড্রয়েড ১৬ ডেভেলপার প্রিভিউতে লঞ্চ করেছে গুগল

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো