ল্যাপটপ ক্রয় করার পূর্বে অবশ্যই যে বিষয়গুলো আপনার জানা প্রয়োজন

কোন কাজের জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো? ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায়? বর্তমানে সবচাইতে ভালো ল্যাপটপ কোনটি? এই সব বিষয় আজ জানতে পারবেন। আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন। ল্যাপটপ ক্রয় করার পূর্বে কিছু বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। কারণ ল্যাপটপ এমন একটি ডিভাইস, যা আপনি সাধারণত দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যবহার করেন, এবং সঠিক ল্যাপটপ বেছে না নিলে এটি আপনার কাজের প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হতে পারে। নিচে ল্যাপটপ ক্রয়ের পূর্বে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

ল্যাপটপ ক্রয় করার পূর্বে যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন

প্রথমেই ভাবুন, আপনি ল্যাপটপটি কী কাজে ব্যবহার করবেন। ল্যাপটপ কেনার উদ্দেশ্যটি নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ: যদি শুধু ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ভিডিও দেখা, এবং মাইক্রোসফট অফিসের কাজের জন্য ল্যাপটপ প্রয়োজন হয়, তবে উচ্চ ক্ষমতার ল্যাপটপের প্রয়োজন নেই। আর যদি আপনি গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, কোডিং, বা অন্যান্য পেশাদার কাজ করেন, তবে উচ্চ ক্ষমতার প্রসেসর, ভালো গ্রাফিক্স কার্ড, এবং বেশি র‌্যাম থাকা জরুরি। আবার গেমিংয়ের জন্য শক্তিশালী গ্রাফিক্স কার্ড, উচ্চ রিফ্রেশ রেট স্ক্রীন, এবং উন্নত কুলিং সিস্টেমের ল্যাপটপ দরকার হবে। লেপটপ ক্রয় করার পূর্বে যেসব বিষয় যাচাই করতে হবে তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

  • প্রসেসর (CPU): ল্যাপটপের প্রসেসর (সিপিইউ) এর ক্ষমতা সরাসরি এর কর্মক্ষমতা নির্ধারণ করে। ইন্টেল আই-৩/আই-৫/আই-৭ বা এএমডি রাইজেন ৩/৫/৭ দৈনন্দিন কাজের জন্য আই-৩ বা রাইজেন ৩ যথেষ্ট। কিন্তু মাল্টিটাস্কিং বা হেভি অ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্য আই-৫ বা রাইজেন ৫ উত্তম। আই-৭ বা রাইজেন ৭ পেশাদার কাজ বা গেমিংয়ের জন্য এই ধরনের উচ্চ ক্ষমতার প্রসেসর প্রয়োজন।
  • র‌্যাম: র‌্যাম (র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমরি) নির্ধারণ করে আপনার ল্যাপটপ কত দ্রুত মাল্টিটাস্কিং করতে পারবে। ৪জিবি র‌্যাম সাধারণত দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট। ৮GB র‌্যাম মাল্টিটাস্কিং এবং কিছু পেশাদার কাজের জন্য ভালো। ১৬জিবি বা তার বেশি র‌্যাম গেমিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, এবং ভারী সফটওয়্যারের জন্য প্রয়োজন।
  • স্টোরেজ (এইচডিডি vs এসএসডি): ল্যাপটপে স্টোরেজ দুটি প্রকার হতে পারে: এইচডিডি (হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ) এবং এসএসডি (সলিড স্টেট ড্রাইভ)। এইচডিডি সাধারণত সস্তা এবং বড় স্টোরেজ ক্যাপাসিটি দেয়, কিন্তু ধীরগতি। এসএসডি অনেক দ্রুত এবং কর্মক্ষমতা উন্নত করে, তবে দাম একটু বেশি। হাইব্রিড স্টোরেজ কিছু ল্যাপটপে এইচডিডি এবং এসএসডি উভয়ের মিশ্রণ থাকে। এসএসডি-তে অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপ্লিকেশন রাখা হয়, আর এইচডিডি-তে ফাইলগুলো সংরক্ষণ করা হয়।
  • গ্রাফিক্স কার্ড (জিপিইউ): গ্রাফিক্স কার্ড, বিশেষ করে যদি আপনি গেম খেলেন বা ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ করেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। ইন্ট্রিগেটেড জিপিইউ সাধারণত সাধারণ কাজের জন্য যথেষ্ট। ডেডিকেটেড জিপিইউ গেমিং, ৩ডি মডেলিং, বা ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য প্রয়োজন, যেমন এনভিডিয়া বা এএমডি এর গ্রাফিক্স কার্ড।
  • ব্যাটারি লাইফ: যদি আপনি ল্যাপটপটি বেশি সময় চার্জ ছাড়া ব্যবহার করতে চান, তবে ব্যাটারি লাইফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৩-৫ ঘণ্টা সাধারণত সস্তা ল্যাপটপগুলোর জন্য। ৬-১০ ঘণ্টা অধিকাংশ ল্যাপটপ এই পরিসরে থাকে, যা দিনভর কাজের জন্য যথেষ্ট। ১০ ঘণ্টার বেশি বিশেষত আল্ট্রাবুক এবং কিছু প্রিমিয়াম ল্যাপটপের জন্য প্রযোজ্য।
  • স্ক্রিন সাইজ ও রেজোলিউশন: ল্যাপটপের স্ক্রিন সাইজ এবং রেজোলিউশন কাজের সুবিধার জন্য প্রয়োজন। ১৩ ইঞ্চি বহনযোগ্যতা বেশি, তবে স্ক্রিন ছোট। ১৫ ইঞ্চি মানসম্মত ভারসাম্য, বড় স্ক্রীন এবং বহনযোগ্যতা। ১৭ ইঞ্চি বড় স্ক্রিন, কিন্তু কম্পিউটার হিসেবে বেশি কার্যকর। ফুল এইচডি (১৯২০x১০৮০) বা তার বেশি ভিডিও এডিটিং বা গেমিংয়ের জন্য ভালো।
  • কীবোর্ড ও টাচপ্যাড: ল্যাপটপের কীবোর্ড এবং টাচপ্যাড ব্যবহারযোগ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাকলিট কীবোর্ড অন্ধকারে টাইপিংয়ের জন্য প্রয়োজন। এরগনোমিক ডিজাইন দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করার জন্য আরামদায়ক।
  • পোর্ট এবং সংযোগযোগ্যতা: আপনার ল্যাপটপে কতগুলো এবং কোন ধরনের পোর্ট আছে সেটাও বিবেচনা করতে হবে। ইউএসবি টাইপ-িএ এবং টাইপ-সি অধিকাংশ ডিভাইসের জন্য দরকার। এইচডিএমআই বা ডিসপ্লেপোর্ট এক্সটার্নাল মনিটর সংযোগের জন্য।ইথারনেট পোর্ট দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগের জন্য।
  • অপারেটিং সিস্টেম: উইনডোজ বহুল ব্যবহৃত এবং অধিকাংশ সফটওয়্যার সমর্থিত। ম্যাকওএস অ্যাপল এর ডিভাইসের জন্য, বিশেষত ক্রিয়েটিভ প্রফেশনালদের জন্য ভালো। লিনাক্স উন্নত ব্যবহারকারীদের জন্য এবং ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য।
  • ব্র্যান্ড ও ওয়ারেন্টি: ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করে ল্যাপটপের মান এবং দাম নির্ভর করে। বর্তমানে সবচাইতে ভালো ব্র্যান্ড হচ্ছে ডেল, এইচপি, লেনোভো, আসুস, অ্যাপল, এসার, ইত্যাদি। ওয়ারেন্টি ১-৩ বছরের ওয়ারেন্টি থাকে, এবং এক্সটেন্ডেড ওয়ারেন্টি পাওয়া যায় কিনা দেখুন।
  • বাজেট: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার বাজেট। বাজারে বিভিন্ন দামের ল্যাপটপ আছে, তবে আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট অনুযায়ী সঠিকটি বেছে নেওয়া উচিত।

এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে আপনি সহজেই আপনার প্রয়োজনের জন্য সেরা ল্যাপটপটি বেছে নিতে পারবেন। ল্যাপটপ কেনার আগে এই বিষয়গুলো যাচাই করে নেওয়া অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ল্যাপটপ কিনবো নাকি ডেক্সটপ কিনব? কোনটি ভালো হবে আপনার জন্য

Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো