মেটা তাদের নিজস্ব এআই চালিত প্রোফাইলগুলোকে বন্ধ করে দিচ্ছে

মেটা, বিশ্বের অন্যতম বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, সম্প্রতি তাদের তৈরি এআই-চালিত ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলগুলো মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৩ সালে চালু হওয়া এই প্রোফাইলগুলো শুরুতে ব্যবহারকারীদের মাঝে কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল, তবে পরবর্তীতে বিতর্কের মুখে পড়ে। মেটা প্রথম এই এআই প্রোফাইলগুলো চালু করেছিল ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। এই প্রোফাইলগুলো মূলত স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি ছবি পোস্ট করত এবং ব্যবহারকারীদের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বার্তার উত্তর দিত। কিন্তু ২০২৪ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে বেশিরভাগ প্রোফাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবুও কিছু প্রোফাইল থেকে যায়, যেগুলো নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। বিশেষত, মেটা’ এর এক নির্বাহী, কনার হেইস, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এআই প্রোফাইলগুলো নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানালে বিষয়টি আবারো জনসাধারণের নজরে আসে।

এই এআই প্রোফাইলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল “লিভ” এবং “কার্টার”। লিভ নিজেকে “একজন গর্বিত কৃষ্ণাঙ্গ মা, যিনি ভিন্ন যৌন পরিচয় নিয়ে জীবনযাপন করেন, দুই সন্তানের মা এবং সত্য বলার প্রবক্তা” হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল এবং কার্টার নিজেকে সম্পর্ক পরামর্শদাতা হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। এই প্রোফাইলগুলো ব্যবহারকারীদের সঙ্গে বার্তা বিনিময়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করত এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিত। তবে, কিছু ব্যবহারকারী এআই প্রোফাইলগুলোর উন্নয়নকারী দলের বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিতর্ক শুরু হয়।

আরও পড়ুনঃ ফেসবুক মেটা এবার নিয়ে এসছে নতুন বৃহৎ এআই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (LLAMA)

একটি ঘটনায়, ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক কারেন আত্তিয়াহ’র প্রশ্নের জবাবে লিভ জানায় যে, তার উন্নয়নকারী দলটি মূলত সাদা পুরুষদের দ্বারা গঠিত এবং এতে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এটি লিভের পরিচয়ের সাথে একটি বড় ব্যবধান সৃষ্টি করেছিল। ব্যবহারকারীরা বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা শুরু করলে ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং ব্যবহারকারীরা দেখতে পান যে, এই প্রোফাইলগুলো ব্লক করা যাচ্ছিল না।

পরবর্তীতে মেটা এই এআই প্রোফাইলগুলো দ্রুত মুছে ফেলে। মেটা’র মুখপাত্র লিজ সুইনি জানান, এটি একটি প্রযুক্তিগত সমস্যা ছিল এবং এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রোফাইলগুলো মুছে ফেলা হয়। সুইনি আরও ব্যাখ্যা করেন যে, এই প্রোফাইলগুলো ২০২৩ সালের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের অংশ ছিল এবং এগুলো মানব দ্বারা পরিচালিত হতো। তবে, মেটা’র এই সিদ্ধান্তের পরেও ব্যবহারকারীরা নিজেদের এআই চ্যাটবট তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা যেমন একটি “থেরাপিস্ট” চ্যাটবট তৈরি করতে পারেন, তেমনই অন্যান্য কাজের জন্য চ্যাটবট তৈরি করতে পারেন। নভেম্বর ২০২৪ সালে গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, একটি থেরাপিস্ট বট ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত এবং মানসিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিত।

মেটা’র এই উদ্যোগ প্রযুক্তির উন্নতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলেও, এটি দেখিয়ে দিয়েছে যে, এআই-চালিত প্রোফাইল তৈরির ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা এবং প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলোর সমাধান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতা বজায় রাখা এবং প্রযুক্তিগত ত্রুটি এড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন। মেটা’র এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোর জন্য একটি শিক্ষণীয় দিক হিসেবে কাজ করবে।

এআই-চালিত প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও সতর্কতা প্রয়োজন। মেটা’র এই অভিজ্ঞতা একটি উদাহরণ যে, প্রযুক্তি যত উন্নতই হোক না কেন, মানবিক দিক বিবেচনা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, যখন এটি এমন একটি বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত যা মানুষের পরিচয় এবং সংস্কৃতির সাথে জড়িত। এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারে যদি এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়। মেটা’র এআই প্রোফাইল প্রকল্পটির মাধ্যমে বোঝা যায় যে, প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বও গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রোফাইল বা চ্যাটবট কেবল প্রযুক্তির নিদর্শন নয়, এটি মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি মাধ্যম। অতএব, প্রযুক্তি ও সামাজিক সংবেদনশীলতার সমন্বয় ভবিষ্যতের এআই-চালিত প্রকল্পগুলোকে সফল করতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুনঃ মার্ক জুকারবার্গের মেটাভার্স নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত: মেটাভার্স অবশেষে জীবনের চিহ্ন দেখাচ্ছে

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে? এর বিস্তারিত তথ্য

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো