মোবাইল চুরি হলে খুঁজে পাওয়ার উপায়

মোবাইলফোন এখন মানুষের জীবনের প্রতিদিনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেটি ছাড়া বর্তমানে একটি মূহুর্তও ভাবা যায়না। যেখানে আমাদের খুবি গুরুত্বপূর্ণ ছবি, ব্যক্তিগত তথ্য, এবং ডকুমেন্ট সংরক্ষিত থাকে। তাই হঠাৎ করে ফোনটি চুরি হয়ে গেলে বা খুঁজে না পেলে মানুষ দ্রুত আতঙ্কিত হয়ে পরে। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে, এখন এমন কিছু সহজ উপায় আছে যা ব্যবহার করে হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হয়ে যাওয়া ফোনের অবস্থান সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। আজ এমন ৩টি মোবাইল চুরি হলে খুঁজে পাওয়ার উপায় এর টিপস এন্ড ট্রিকস শেয়ার করবো যেগুলো ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার ফোনটি খুঁজে বাহির করতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ মোবাইলে চার্জ জনিত যত সমস্যা ও তার সমাধান

১. গুগল ফাইন্ড মাই ডিভাইস ব্যবহার (অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য)

গুগল ফাইন্ড মাই ডিভাইস হলো অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি টুল যেটি ব্যবহার করে চুরি হওয়া ফোনের লোকেশন খুবি সহজে ট্রেক করা যায়। এটি ব্যবহার করার উপায়গুলো হলো:

  • প্রথম ধাপ: আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সেটিংস অপশনে গিয়ে “Find My Device” অপশনটি চালু করে নিন।
মোবাইল চুরি হলে খুঁজে পাওয়ার উপায়
মোবাইলের সেটিংস অপশনে গিয়ে সার্চ করুন।
মোবাইল চুরি হলে খুঁজে পাওয়ার উপায়
“Find My Device” অপশনটি চালু করে নিন।

যদি আপনার ফোনে এটি না থাকে তাহলে প্লে ষ্টোর থেকে “Find My Device” অ্যাপটি নামিয়ে নিন।

মোবাইল চুরি হলে খুঁজে পাওয়ার উপায়
“Find My Device” অ্যাপটি ইন্সটল করে অন করে নিন।
  • দ্বীয়ত ধাপ: এবার আপনার ফোনের লোকেশন এবং ইন্টারনেট সবসময় অন করে রাখবেন।
  • তৃতীয় ধাপ: এই ধাপটি হচ্ছে ফোন চুরি হওয়ার পরের ধাপ। ফোন চুরি হয়েগেলে যেকোনো মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটারের থেকে এই ওয়েবসাইটটির মধ্যে প্রবেশ করবেন (https://www.google.com/android/find) প্রবেশ করার পর আপনার ফোনে থাকা ইমেইল আইডিটি দিয়ে লগইন করুন। এরপর নিচের ছবিটির মত দেখতে পাবেন।
মোবাইল চুরি হলে খুঁজে পাওয়ার উপায়
“Find My Device” এর ওয়েবসাইট ভার্সন।

এখানে আপনি ৩টি অপশন দেখতে পাবেন ১. Sound Sensing (এটির মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনে সাউন্ড তৈরি করতে পারবেন)। ২. Lock (এটির মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনটি লক করে ফেলতে পারবেন)। ৩. Phone Link_Erase (এটির মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনের সমস্তকিছু ডিলেট করে ফেলতে পারবেন)। আর ডান পাশে আপনার ফোনের রিয়াল লোকেশন দেখতে পাবেন। মনে রাখবেন আপনার ফোনের লোকেশন যদি অন না থাকে তাহলে আপনার ফোনের রিয়াল লোকেশন দেখা যাবেনা। এই সিস্টেমটা তাৎক্ষনিকভাবে অনেক কার্যকর।

স্মার্টফোনের যত্ন নেওয়ার ১০ টি সেরা টিপস এন্ড ট্রিকস: আপনার ফোন নতুন থাকবে সবসময়

আই-ক্লাউড ব্যবহার (আইফোনের জন্য)

iCloud এর Find My iPhone ফিচার ব্যবহার করে চুরি হওয়া iPhone খুঁজে পাওয়া সম্ভব। উপায়গুলো হলো:

  • প্রথম ধাপ: অন্য একটি iOS ডিভাইস বা কম্পিউটার থেকে iCloud ওয়েবসাইটে (https://www.icloud.com/find) যান বা Find My অ্যাপটি ব্যবহার করুন।
  • লগইন করুন: চুরি হওয়া iPhone এর সাথে লিঙ্ক করা Apple ID দিয়ে লগইন করুন।
  • অবস্থান দেখুন: আপনার iPhone এর অবস্থান মানচিত্রে দেখাবে যদি সেটি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকে।
  • নিয়ন্ত্রণ: আপনি ডিভাইসটি রিং করতে পারেন, লক করতে পারেন, বা ডেটা মুছে ফেলতে পারেন যাতে অন্য কেউ ডিভাইসটির অপব্যবহার না করতে পারে।

এই পদ্ধতিগুলো মোবাইল খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী এবং সহজ উপায়।

২. মোবাইল ট্র্যাকার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে

মোবাইল ট্র্যাকার অ্যাপ্লিকেশন হলো এমন কিছু অ্যাপ যা ডিভাইসের অবস্থান শনাক্ত করতে সহায়তা করে। চুরি হওয়া মোবাইল খুঁজে পেতে এই অ্যাপগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নিচে মোবাইল ট্র্যাকার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করার বিস্তারিত প্রক্রিয়া আলোচনা করা হলো:

  • চুরি হওয়ার আগে ইনস্টলেশন: মোবাইল ট্র্যাকার অ্যাপগুলি ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন চুরি হওয়ার আগে এগুলো মোবাইলে ইনস্টল করে রাখা। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মোবাইল ট্র্যাকার অ্যাপগুলোর মধ্যে রয়েছে Cerberus, Prey, Family Locator, Life360, এবং অন্যান্য।
  • অ্যাপের সেটআপ: এই ধরণের অ্যাপগুলি ইনস্টল করার পর আপনাকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে এবং সেটিংস থেকে ডিভাইস ট্র্যাকিং চালু করতে হবে। কিছু অ্যাপ আপনাকে অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য মোবাইলের লোকেশন, মেসেজ, ক্যামেরা ইত্যাদি অ্যাক্সেস করতে বলবে।

মোবাইল ট্র্যাকার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার

  • মোবাইল চুরি হয়ে গেলে আপনাকে একটি অন্য মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে অ্যাপের ওয়েবসাইটে বা অন্য ডিভাইসে ইনস্টল করা অ্যাপের মাধ্যমে লগইন করতে হবে। লগইন করতে নিজের তৈরি করা অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন।
  • লগইন করার পর আপনি আপনার মোবাইলের বর্তমান অবস্থান দেখতে পাবেন। অ্যাপটি মোবাইলের জিপিএস, মোবাইল নেটওয়ার্ক, এবং ওয়াইফাই ব্যবহার করে মোবাইলটির অবস্থান শনাক্ত করে।
  • অনেক মোবাইল ট্র্যাকার অ্যাপে অতিরিক্ত কিছু সুবিধা থাকে যেমন:
    • রিং করা: মোবাইলটিকে রিং করতে পারবেন, এমনকি মোবাইলটি সাইলেন্ট মোডে থাকলেও।
    • লক করা: মোবাইলটির ডেটা সুরক্ষার জন্য আপনি দূর থেকে মোবাইলটি লক করতে পারবেন।
    • ডেটা মুছে ফেলা (Wipe Data): চুরি হওয়া মোবাইলের ডেটা যাতে কেউ অপব্যবহার করতে না পারে, এজন্য সমস্ত ডেটা মুছে ফেলার অপশনও পাওয়া যায়।
    • ছবি তোলা: কিছু অ্যাপ মোবাইলের ফ্রন্ট এবং ব্যাক ক্যামেরা ব্যবহার করে চোরের ছবি তুলতে পারে এবং আপনাকে ইমেইলে পাঠাতে পারে।
    • মেসেজ পাঠানো: ডিভাইসটিতে একটি মেসেজ পাঠানোর সুবিধা থাকে, যেমন আপনি চোরকে সতর্ক করার জন্য একটি বার্তা পাঠাতে পারেন।

কম্পিউটার স্পিড বাড়বে ১০০% এই ১০টি টিপস এন্ড ট্রিকস ফলো করলে

 ট্র্যাকার অ্যাপের সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা

  • সুবিধা:
    • মোবাইল ট্র্যাকিং দ্রুত এবং সহজ উপায়।
    • রিয়েল-টাইম অবস্থান দেখতে পাওয়া যায়।
    • ডিভাইস লক বা ডেটা মুছে ফেলার মাধ্যমে তথ্য সুরক্ষিত রাখা যায়।
    • ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে চোরের ছবি তোলার মাধ্যমে চুরির ঘটনা প্রমাণ করা যায়।
  • সীমাবদ্ধতা:
    • মোবাইল চুরি হওয়ার আগে এই অ্যাপ ইনস্টল করা না থাকলে কাজ করবে না।
    • মোবাইল বন্ধ বা ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে ট্র্যাক করা কঠিন।
    • অনেক অ্যাপ ব্যবহারের জন্য প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন প্রয়োজন হয়।

জনপ্রিয় মোবাইল ট্র্যাকার অ্যাপস

  • Cerberus: অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য প্রিমিয়াম ট্র্যাকার অ্যাপ যা চুরি প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন সুবিধা দেয়, যেমন গোপনে ছবি তোলা, ডিভাইস লক করা, রিং করা ইত্যাদি।
  • Prey: Prey একটি মাল্টিপ্লাটফর্ম ট্র্যাকিং অ্যাপ যা অ্যান্ড্রয়েড, iOS, এবং Windows ডিভাইসের জন্য কাজ করে। এটি আপনার মোবাইলের লোকেশন জানায় এবং অন্যান্য অনেক বৈশিষ্ট্য দেয়।
  • Life360: পরিবার সদস্যদের অবস্থান জানার জন্য এটি জনপ্রিয় একটি ট্র্যাকার অ্যাপ। এটি মোবাইল চুরি হলে তার অবস্থান দেখতেও সাহায্য করে।

৩. মোবাইলের IMEI নম্বর দিয়ে পুলিশে রিপোর্ট করা

যদি আপনি উপরোক্ত উপায়গুলো মোবাইল চুরি হওয়ার পূর্বে না করে থাকেন তাহলে আপনাকে সর্বশেষ মোবাইলের IMEI নম্বর দিয়ে পুলিশে রিপোর্ট করতে হবে।

IMEI (International Mobile Equipment Identity) নম্বর হলো প্রতিটি মোবাইল ডিভাইসের একটি অনন্য পরিচিতি নম্বর, যা চুরি হওয়া মোবাইল খুঁজে পেতে সাহায্য করে। IMEI নম্বর দিয়ে পুলিশে রিপোর্ট করার ধাপগুলো হলো:

  • IMEI নম্বর সংগ্রহ করুন: চুরি হওয়ার আগে আপনার মোবাইলের IMEI নম্বর জানা থাকলে তা সংগ্রহ করুন। এই নম্বরটি ফোনের বক্স, ক্রয় রসিদ, অথবা *#06# ডায়াল করে পাওয়া যায়।
  • পুলিশে রিপোর্ট করুন: নিকটস্থ থানায় গিয়ে আপনার মোবাইল চুরির রিপোর্ট করুন। রিপোর্টে মোবাইলের বিস্তারিত বিবরণ ও IMEI নম্বর দিন।
  • মোবাইল অপারেটরকে জানান: পুলিশের রিপোর্ট কপি নিয়ে আপনার মোবাইল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করুন এবং IMEI নম্বর দিয়ে ডিভাইসটি ব্লক করার অনুরোধ করুন।
  • ট্র্যাকিং: পুলিশ ও মোবাইল অপারেটর চুরি হওয়া মোবাইলটি ট্র্যাক করে অবস্থান শনাক্ত করতে পারে এবং অপারেটর ব্লক করতে পারে যাতে অন্য কেউ সেটি ব্যবহার করতে না পারে।

এই প্রক্রিয়ায় মোবাইল খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এবং অন্য কেউ চুরি করা মোবাইলটি সহজে ব্যবহার করতে পারে না।

মোবাইল চুরি হয়ে গেলে হতাশ না হয়ে উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে মোবাইল ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করুন। সঠিক প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় টুল বা অ্যাপ ব্যবহার করলে চুরি হওয়া মোবাইল পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। তাই এখনি আপনার মোবইলে উপরোক্ত সেটিংসগুলো করে রাখুন।

আমি পার্যনালভাবে আপনাদের সাজেস্ট করবো- গুগল ফাইন্ড মাই ডিভাইস এই সার্ভিসটা ব্যবহার করার জন্য।

সম্পর্কিত পোস্ট: মেমোরি ফুল আর কখনো দেখাবেনা: ফোন মেমোরি বাড়িয়ে নিন খুবি সহজে

Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো