একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল পর্যবেক্ষণে উদ্ভুত কিছু তথ্য পেয়েছে নাসা

ব্ল্যাক হোল (সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল) মহাকাশের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং গুরত্বপূর্ণ ঘটনা, যা বিজ্ঞানের জগতে অত্যন্ত আগ্রহের একটি বিষয়। এটি এমন এক জায়গা যেখানে মহাকর্ষ এতটাই প্রবল যে আলোক রশ্মিও তা থেকে পালাতে পারে না। সম্প্রতি, একটি বিশেষ ব্ল্যাক হোল, যার নাম ১ইএস ১৯২৭+৬৫৪, বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এটি প্রায় এক মিলিয়ন সূর্যের ভরের সমান এবং পৃথিবী থেকে ১০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে একটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত।

২০১৮ সালে এমআইটি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন যে এই ব্ল্যাক হোলের কোরোনা একটি উজ্জ্বল প্লাজমার মেঘ হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায় এবং কয়েক মাস পর পুনরায় গঠিত হয়। কোরোনার এমন আচরণ আগে কখনো দেখা যায়নি। এটি বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কোরোনার এই পরিবর্তন কীভাবে ঘটে, তা বোঝার জন্য গবেষণার উপর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুনঃ জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ৬.৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের ৪৪টি নক্ষত্র শনাক্ত করে ইতিহাস গড়েছে

এর পরে বিজ্ঞানীরা এই ব্ল্যাক হোল পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন এবং দেখতে পান এটি আবারও একটি অদ্ভুত আচরণ প্রদর্শন করছে। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে, ব্ল্যাক হোলটি একটি নতুন ধরণের চ্যালেঞ্জিং বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করছে, যা এ ধরনের ঘটনা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল থেকে নির্গত এক্স-রে ফ্ল্যাশের একটি অদ্ভুত প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দেখেন যে এই ফ্ল্যাশগুলো প্রথমে ১৮ মিনিট অন্তর অন্তর ঘটছিল এবং ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি ৭ মিনিটে একবার ঘটতে শুরু করে। এই ধরনের পরিবর্তন আগে কোনো ব্ল্যাক হোলে দেখা যায়নি। এক্স-রে ফ্ল্যাশের এই ধাঁধার সমাধান করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মডেল পরীক্ষা করেন। তাদের মতে, একটি সাদা বামন তারা (white dwarf) এই ঘটনাটির জন্য দায়ী হতে পারে।

সাদা বামন একটি মৃত তারার অত্যন্ত ঘন এবং ছোট অবশিষ্টাংশ। এটি এতটাই শক্তিশালী এবং ঘন হয় যে এটি ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন যে এই সাদা বামনটি ব্ল্যাক হোলের প্রান্ত থেকে মাত্র কয়েক মিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থান করছে। ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষীয় শক্তি সাদা বামনকে নিজের দিকে টেনে নিচ্ছে, কিন্তু সাদা বামন তার বাইরের স্তর ছেড়ে দিয়ে ব্ল্যাক হোল থেকে নিজেকে রক্ষা করছে।

গবেষকরা অনুমান করছেন, সাদা বামনটি ব্ল্যাক হোলের এত কাছে থাকায় এটি অত্যন্ত দ্রুত বেগে আবর্তিত হচ্ছে। এর ফলে, এক্স-রে ফ্ল্যাশের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ঘটনা মহাবিশ্বের সবচেয়ে চরম শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্যের একটি উদাহরণ।

যদি সাদা বামনটি ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি থেকে ঘুরতে থাকে, তবে এটি মহাকর্ষীয় তরঙ্গ উৎপন্ন করবে। এই তরঙ্গগুলো ভবিষ্যতে নাসা-র লেজার ইন্টারফেরোমিটার স্পেস অ্যান্টেনা (লিসা) এর মতো উন্নত পর্যবেক্ষণ যন্ত্র দ্বারা সনাক্ত করা যাবে। লিসা ২০৩০-এর দশকে চালু হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এবং এটি এই ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য দিতে সক্ষম হবে।

ব্ল্যাক হোল কি কেন ও কিভাবে? ব্ল্যাক হোল এর পুরো ইতিহাস

একটি বিশেষ বিষয় হল, লিসা-এর মতো টেলিস্কোপ এই সিস্টেমের গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর হবে। এটি আমাদের মহাবিশ্বের গঠন এবং গতিশীলতার গভীরতম রহস্যগুলো উন্মোচনে সহায়তা করবে।

এই ব্ল্যাক হোল এবং তার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমাদের মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় এবং চরম পরিবেশ সম্পর্কে অনেক কিছু শিখতে সাহায্য করছে। বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতেও এই ব্ল্যাক হোলটি পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবেন, কারণ এটি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য প্রদান করছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, এই ধরনের পর্যবেক্ষণ কেবল ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে নয়, বরং মহাবিশ্বের সাধারণ গঠন সম্পর্কেও আমাদের জ্ঞান বাড়াবে। “এই ব্ল্যাক হোল আমাদের প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখিয়ে চলেছে,” বলেছেন এমআইটি-এর গবেষক মেগান মাস্টারসন। “আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হলো এটি নিয়ে আরও গভীর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া এবং মহাবিশ্বের অজানা বিষয়গুলোকে খুঁজে বের করা।”

এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, ব্ল্যাক হোল এবং এর চারপাশের বস্তুগুলোর মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া কীভাবে কাজ করে। এটি মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও গভীরতর জ্ঞান দেবে।

৮০ বছর পর নোভা সংগঠিত হতে পারে “টি করোনাই বোরেলিস” নক্ষত্রে

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো