নেগেটিভ সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে সাম্প্রতিক কিছু কোয়ান্টাম গবেষণার মাধ্যমে। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে কিছু নির্দিষ্ট পদার্থের মধ্যে আলো এমনভাবে আচরণ করে যা প্রচলিত সময় ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অনেক সময় আলো কোনো পদার্থে প্রবেশের আগেই নির্গত হচ্ছে বলে মনে হয়। এই ঘটনাকে “নেগেটিভ সময়” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে এটি একসময় বিজ্ঞানীদের কাছে শুধু একটি বিভ্রম বা তাত্ত্বিক ধারণা হিসেবেই বিবেচিত ছিল। সম্প্রতি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এফ্রেইম স্টেইনবার্গের নেতৃত্বে একটি গবেষণা দল এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা পরিচালনা করেছে। গবেষকরা দাবি করছেন যে নেগেটিভ সময় শুধুমাত্র তাত্ত্বিক নয়, বরং এটি মাপা সম্ভব। তাদের পরীক্ষাগারে বিশেষ আয়না, তার, এবং লেজার ব্যবহারের মাধ্যমে ফোটনের সঙ্গে পরমাণুর মিথস্ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়। তারা দেখতে পান যে ফোটন পরমাণু দ্বারা শোষিত হয়ে পুনরায় নির্গত হওয়ার সময়কাল কিছু ক্ষেত্রে শূন্যের কম বলে মনে হয়।
আরও পড়ুনঃ বিজ্ঞানীরা রহস্যময় ডার্ক কমেট এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করেছেন
নেগেটিভ সময় এবং এর ব্যাখ্যা
গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে এই পর্যবেক্ষণকে সময়ে পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। বরং এটি কোয়ান্টাম প্রক্রিয়ার একটি জটিল প্রভাব। আলো কখনো কণা এবং কখনো তরঙ্গ হিসেবে আচরণ করে। এই দ্বৈত আচরণের ফলস্বরূপ ফোটন বিভিন্ন অবস্থানে একসঙ্গে উপস্থিত থাকতে পারে এবং তাদের সময়কাল পরিমাপ করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।
নেগেটিভ সময় নিয়ে গবেষণাগুলো বিশেষ কোনো বিরোধ সৃষ্টি করেনি, কারণ এটি আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের নিয়ম ভঙ্গ করে না। এই পরীক্ষায় কোনো বস্তু আলোর গতির চেয়েও দ্রুত চলে না, বরং এটি সময়ের পরিমাপের একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স এমন একটি ক্ষেত্র যা আমাদের প্রচলিত সময়, স্থান এবং বাস্তবতার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। এই গবেষণাটি আরও গভীর পর্যবেক্ষণের সুযোগ তৈরি করেছে। আলো কণা এবং তরঙ্গ উভয় আচরণের প্রদর্শন করে। কখনো এটি একাধিক স্থানে একসঙ্গে থাকতে পারে এবং কখনো এটি এমন পরিমাপ প্রদর্শন করে যা আমাদের প্রচলিত বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে ফোটন পরমাণুর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করার সময় যে শোষণ এবং নির্গমনের প্রক্রিয়া ঘটে, তার সময়কাল কখনো শূন্যের নিচে যেতে পারে। এই ধরনের পর্যবেক্ষণ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি নতুন বিষয় তুলে ধরেছে।
এই গবেষণার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সময়কাল পরিমাপ করা। আলো এবং পদার্থের মিথস্ক্রিয়া এতই সূক্ষ্ম যে একে সঠিকভাবে নির্ণয় করা অত্যন্ত জটিল। লেজার এবং পরিশীলিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও গবেষকরা স্বীকার করেছেন যে এটি একটি সূক্ষ্ম এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এমনকি গবেষণার ভাষাও অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝির জন্ম দিতে পারে। “নেগেটিভ সময়” শব্দটি এমন একটি ধারণা যা কিছু বিজ্ঞানীর মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। তবে গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন যে এটি সময়ের গতিপথ পরিবর্তন বা সময়ে পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনা নয়।
গবেষণাটি প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। জার্মান তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী সাবিন হসেনফেল্ডার বলেন, “এই পরীক্ষার নেগেটিভ সময় আসলে সময়ের প্রকৃত গতিপথের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি কেবল ফোটনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এবং তাদের পর্যায়ের পরিবর্তন সম্পর্কে।” অনেকেই মনে করেন, “নেগেটিভ সময়” শব্দটি গবেষণার প্রকৃত তাত্পর্যকে কিছুটা অতিমাত্রায় উপস্থাপন করে। তবে এটি নতুন আলোচনা এবং গবেষণার পথ খুলে দিয়েছে।
গবেষণার প্রধান এফ্রেইম স্টেইনবার্গ বলেছেন, “আমরা এমন একটি পদ্ধতির কথা চিন্তা করেছি যা আমাদের ফলাফলগুলো বর্ণনা করতে সহায়ক। যদিও এই আবিষ্কারের তাত্ক্ষণিক কোনো ব্যবহারিক প্রয়োগ নেই, এটি কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের নতুন সম্ভাবনা উন্মোচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।” ভবিষ্যতে এই গবেষণা হয়তো সময় এবং বাস্তবতার গভীরতর ধারণা প্রদান করতে পারে। তবে গবেষকরা এও বলেছেন যে এই পর্যবেক্ষণকে নিয়ে অতিরিক্ত প্রত্যাশা না করাই ভালো।
অবিশ্বাস্য এক কোয়াজিপার্টিকেল আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা : যার ভর শূন্য