নতুন কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম যা একই সঙ্গে সেন্সিং এবং কম্পিউটিং কাজ করতে পারে

মানুষের চোখের অনুকরণে একটি নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসতে চলেছেন গবেষকরা। সাম্প্রতিক সময়ে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে, বিজ্ঞানীরা এমন হার্ডওয়্যার সিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করছেন যা একই সঙ্গে সেন্সিং, মেমরি এবং প্রসেসিং ফাংশন সম্পাদন করতে পারে। এজন্য, পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন একটি কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন যা একই সঙ্গে সেন্সিং এবং কম্পিউটিং কাজ করতে পারে।

এই নতুন প্ল্যাটফর্মটি মূলত ফোটোট্রানজিস্টরের একটি অ্যারে এবং একটি মেমরিস্টরের সমন্বয়ে গঠিত, যা একটি এমপি১আর (মেমরিস্টর-ফোটোট্রানজিস্টর) অ্যারে তৈরি করেছে। এটি প্রকৃতপক্ষে ঐতিহ্যবাহী ভিশন কম্পিউটিং সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে ডিজাইন করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী সিএমওএস ভন নিউম্যান আর্কিটেকচারের উপর ভিত্তি করে তৈরি সিস্টেমগুলো ডেটা রিডানড্যান্সি, উচ্চ শক্তি খরচ এবং প্রসেসিং দেরি ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছে। তবে, মানুষের চোখের মতো জীববৈজ্ঞানিক ভিশন সিস্টেম অত্যন্ত কার্যকর এবং মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা গবেষকদের বায়োইনস্পায়ার্ড ভিশন কম্পিউটিং পদ্ধতির দিকে মনোনিবেশ করতে অনুপ্রাণিত করেছে।

আরও পড়ুনঃ  কার্বন ন্যানোটিউব প্রযুক্তি যা স্টিলের তুলনায় ১৫,০০০ গুণ বেশি শক্তি সংরক্ষণ করতে পারে

গবেষকরা ২০×২০ ফোটোট্রানজিস্টর অ্যারে তৈরি করেছেন যা আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিক্রিয়া প্রদান করতে পারে। এই অ্যারেটি নীল আলোতে উত্তেজনা এবং লাল আলোতে নিস্তেজতার আচরণ প্রদর্শন করে। এটি একটি নতুন ধরণের মেমরিস্টর ব্যবহার করে যা টানটালাম (টা), টানটালাম অক্সাইড (টা অক্স), নিওবিয়াম অক্সাইড (এনবি অক্স) এবং টাংস্টেন (ডব্লিউ) পদার্থের স্তর দিয়ে তৈরি। এই মেমরিস্টরটি নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো প্রদান করে: একটি লিনিয়ার রেসিস্টিভ রিজিয়ন, ভোলাটাইল মেমরি এবং থ্রেশহোল্ড সুইচিং ক্ষমতা।

কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম
একটি রিকনফিগারেবল ইন-সেন্সর প্রসেসিং সিস্টেম, যা ২০×২০ ফোটোট্রানজিস্টর-মেমরিস্টর এবং ৩৬×৩২ ১টি১আর নন-ভোলাটাইল মেমরিস্টরের অ্যারের উপর ভিত্তি করে তৈরি। ছবিঃ ডাং এট আল

এই প্রযুক্তিটি একক ডিভাইসে অপটিক্যাল সেন্সিং, ডেটা প্রসেসিং এবং মেমরি ফাংশনগুলোর সংমিশ্রণ ঘটায়। এটি অত্যন্ত বহুমুখী এবং বিভিন্ন কাজ পরিচালনা করতে সক্ষম, যেমন স্থির এবং ইভেন্ট-ভিত্তিক চিত্র শনাক্তকরণ থেকে শুরু করে রঙিন চিত্র বিশ্লেষণ। এই সিস্টেমটি কনভলিউশনাল নিউরাল নেটওয়ার্ক (সিএনএন), রিকারেন্ট নিউরাল নেটওয়ার্ক (আরএনএন) এবং স্পাইকিং নিউরাল নেটওয়ার্ক (এসএনএন) সহ বিভিন্ন নিউরাল নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর এই বহুমুখিতা এটিকে বাস্তব জগতের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, এই প্ল্যাটফর্মটি একটি একক ডিভাইসে একাধিক নিউরাল প্রসেসিং নীতিকে একত্রিত করে সার্কিট ডিজাইন সহজতর করে। এর ফলে নেটওয়ার্কের জটিলতা হ্রাস, লেটেন্সি কমানো এবং শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এটি বিশেষত রিয়েল-টাইম চিত্র প্রক্রিয়াকরণের জন্য কার্যকর। গবেষক দলটি ভবিষ্যতে সিস্টেমের ঘনত্ব এবং কম্পিউটেশনাল দক্ষতা বাড়ানোর জন্য থ্রিডি ইন্টিগ্রেশন অর্জনে মনোনিবেশ করার পরিকল্পনা করছেন। একই সঙ্গে, তারা সিস্টেমটির শক্তি খরচ অপ্টিমাইজ করতে এবং আলোর পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীলতা উন্নত করতে চান।

ট্যাটুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের তরঙ্গ রিয়েল টাইম মনিটরিং

তারা আরও জানিয়েছেন যে, এই প্ল্যাটফর্মটি বায়োইনস্পায়ার্ড এবং মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম উভয়ের জন্য কাজ করে, যা ভিশন কম্পিউটিং-এ দুটি পদ্ধতির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। এর ফলে সার্কিট ডিজাইন আরও কার্যকর হয়েছে এবং শক্তি খরচ কমেছে। এই প্রযুক্তি বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্বয়ংচালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আধুনিক স্বয়ংচালিত গাড়ি এবং ড্রোনগুলোতে এমন সেন্সর প্রয়োজন হয় যা আলোর বিভিন্ন পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে। এই প্রযুক্তি সেই চাহিদা পূরণে সহায়ক হতে পারে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগক্ষেত্র হতে পারে স্বাস্থ্যসেবা খাত। বায়োমেডিক্যাল ইমেজিং এবং রোগ নির্ণয়ে এই প্রযুক্তি উচ্চমানের ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষত, চোখের রোগ নির্ণয় বা স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন জটিলতার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, এই প্রযুক্তি কেবল কম্পিউটিং শক্তি বৃদ্ধি করে না, এটি পরিবেশবান্ধবও। শক্তি খরচ কমানোর ফলে এটি পরিবেশের ওপর চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে। এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের শক্তি-দক্ষ এবং কম লেটেন্সি নিউরোমরফিক ভিশন সিস্টেমের উন্নয়নের পথ সুগম করবে। এটি উন্নত ভিশন এআই অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করতে পারে এবং কার্যক্ষমতা, কর্মক্ষমতা এবং স্কেলিবিলিটির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দিতে পারে।

গবেষকরা ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির আরও উন্নয়নে কাজ করবেন। তাদের লক্ষ্য হলো সিস্টেমটির ঘনত্ব আরও বাড়ানো, কার্যক্ষমতা উন্নত করা এবং এটি যাতে কম আলোতেও কার্যকর থাকে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে, তারা ত্রিমাত্রিক ইন্টিগ্রেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিস্টেমটির কম্পিউটিং ক্ষমতা আরও উন্নত করার পরিকল্পনা করেছেন। এই ধরণের উদ্যোগ আমাদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আরও পড়ুনঃ স্পর্শ ছাড়ায় বস্তু স্থানান্তর করা যাবে কিরিগামি ডিজাইন এবং ম্যাগনেটিক ফিল্ড ব্যবহার করে

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো