সাতোশি নাকামোতো কে তার নতুন তথ্য উঠে এসেছে

বিটকয়েনের স্রষ্টা সাতোশি নাকামোতো কে? এই প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা। প্রযুক্তি ও আর্থিক বিশ্বের অন্যতম বড় রহস্য এই নামটি। সম্প্রতি কিছু নতুন তথ্য উঠে এসেছে, যা এই রহস্য উদঘাটনের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। তবে, সত্যিই কি সাতোশির পরিচয় প্রকাশিত হতে চলেছে, নাকি এটি আরও একটি অনুমান, সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা কঠিন।

২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো নামক এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যেখানে প্রথমবারের মতো বিটকয়েনের ধারণা তুলে ধরা হয়। এরপর ২০০৯ সালে তিনি বিটকয়েন নেটওয়ার্ক চালু করেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি এই প্রকল্পের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু এরপর থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যান।

বিগত বছরগুলোতে সাতোশির পরিচয় নিয়ে অসংখ্য তত্ত্ব ও গবেষণা হয়েছে। কিছু গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ ধারণা করেছেন যে সাতোশি নাকামোতো একক ব্যক্তি নন, বরং একদল গবেষকের ছদ্মনাম। অন্যদিকে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তিনি একজনই এবং অত্যন্ত দক্ষ একজন প্রোগ্রামার ও ক্রিপ্টোগ্রাফার।

সম্প্রতি কয়েনবেসের পরিচালক কনর গ্রোগান দাবি করেছেন যে তিনি সাতোশির ওয়ালেটগুলো বিশ্লেষণ করেছেন এবং দেখেছেন যে সাতোশি সম্ভবত সর্বশেষ ২০১৪ সালে অনচেইন সক্রিয় ছিলেন। আরও একটি তথ্য হলো, সাতোশি সম্ভবত কানাডিয়ান বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করেছিলেন, যা পরবর্তীতে ক্রাকেন এক্সচেঞ্জ অধিগ্রহণ করে। এই তথ্যের ভিত্তিতে গ্রোগান মনে করেন যে ক্রাকেনের প্রতিষ্ঠাতা জেসি পাওয়েল বা অন্য কেউ সাতোশির প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারেন। তবে, এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

সাতোশি নাকামোতোর ওয়ালেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে তিনি প্রায় ১.১ মিলিয়ন বিটকয়েন ধারণ করেন, যা বর্তমান বাজারমূল্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে। এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সাতোশি কখনোই এই বিটকয়েন খরচ করেননি বা স্থানান্তর করেননি। এটি আরও বেশি রহস্য তৈরি করেছে।

সাতোশির পরিচয় নিয়ে বেশ কিছু ব্যক্তি সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন নিক সাবো, যিনি স্মার্ট কন্ট্রাক্ট প্রযুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ। অনেকে মনে করেন, তিনিই সাতোশি, কারণ তার লেখাগুলোর ভাষা ও স্টাইল সাতোশির গবেষণাপত্রের সাথে অনেকটাই মেলে। তাছাড়া, ডোরিয়ান নাকামোটো নামে একজন জাপানি বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যক্তিকেও একসময় সাতোশি বলে সন্দেহ করা হয়েছিল, যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।

আরেকজন আলোচিত ব্যক্তি ক্রেগ রাইট, যিনি নিজেকে সাতোশি দাবি করেছেন। তবে, ব্লকচেইন সম্প্রদায়ের বড় অংশ তার দাবিকে অবিশ্বাস করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এইচবিও থেকে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশিত হয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে যে সাতোশির প্রকৃত পরিচয় উন্মোচিত হয়েছে। তবে, এই তথ্যচিত্রে যাকে সাতোশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তিনি এই দাবিকে অস্বীকার করেছেন।

সাতোশির পরিচয় বের করার চেষ্টা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? এর একটি বড় কারণ হলো, যদি সাতোশির পরিচয় প্রকাশ পায় এবং তিনি তার বিটকয়েন স্থানান্তর করেন, তাহলে এটি বাজারে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক বিনিয়োগকারী মনে করেন, সাতোশির সম্পদ স্থানান্তরের অর্থ হতে পারে, তিনি হয়তো বিটকয়েন বিক্রি করবেন, যা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে সাতোশির পরিচয় গোপন থাকাই ভালো। বিটকয়েনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি বিকেন্দ্রীভূত। এর মানে হলো, এটি কোনো একক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে নেই। সাতোশির পরিচয় প্রকাশ পেলে হয়তো এই ধারণাটি দুর্বল হয়ে পড়বে এবং এটি বিটকয়েনের গ্রহণযোগ্যতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

কিন্তু সাতোশি যদি একদিন নিজেই ফিরে আসেন? এটা অনেকের কল্পনার বিষয় হলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

সংক্ষেপে বলা যায়, সাতোশি নাকামোতোর পরিচয় আজও রহস্যাবৃত। যদিও নতুন কিছু তথ্য সামনে এসেছে, তবে তা সম্পূর্ণ প্রমাণিত নয়। ভবিষ্যতে এই রহস্য উন্মোচিত হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।

সাতোশি নাকামোতো রহস্য: পিটার টডের নাম উঠে এলো এইচবিও ডকুমেন্টারিতে

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো