কার-টি (CAR-T) সেল থেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার নিরাময়ের নতুন সম্ভাবনা

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই ধরনের কার-টি (CAR-T) সেল তাদের নিজস্ব ভিন্ন কৌশলে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে। এই গবেষণাটি টেক্সাসের বেইলর কলেজ অফ মেডিসিন এবং টেক্সাস চিলড্রেনস ক্যান্সার সেন্টারের গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত হয়। গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল কার-টি সেলের ভিন্ন ভিন্ন সংকেত ব্যবস্থার কার্যক্রম এবং তার মাধ্যমে ক্যান্সার ধ্বংসের প্রক্রিয়া উদঘাটন করা।

কার-টি সেল হলো এমন এক ধরনের প্রতিরক্ষা কোষ যা মানুষের শরীরে ক্যান্সার কোষ শনাক্ত ও ধ্বংস করতে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়। এই কোষগুলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। গবেষকরা এই থেরাপি আরও উন্নত করতে কার-টি সেলের মলিকিউলার ডায়নামিক্স, অর্থাৎ তাদের আণবিক গতিবিধি, নিয়ে বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন।

আরও পড়ুনঃ কিভাবে স্ট্রেস ব্রেনকে আবার খুশিতে রুপান্তর করা যায় এমনি এক উদ্ভুদ চিকিৎসা আবিষ্কার করেছেন UCSF বিজ্ঞানীরা

গবেষণায় দুই ধরনের কার-টি সেলের তুলনা করা হয়েছে। প্রথমটি হলো সিডি২৮.-কার-টি সেল, যাকে তুলনা করা হয়েছে এক জন স্প্রিন্টারের সাথে। এটি দ্রুত গতিতে কাজ করে এবং খুব অল্প সময়ে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম। তবে এর কার্যক্রম স্বল্পমেয়াদি। দ্বিতীয়টি হলো ৪-১বিবি.-কার-টি সেল, যাকে একজন ম্যারাথন দৌড়বিদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এটি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম এবং ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে ক্রমাগত কার্যকর থাকে।

গবেষকরা কার-টি সেলের কার্যক্রম বুঝতে গিয়ে “ইমিউন সিন্যাপস” নামক এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নজর দিয়েছেন। এটি হলো সেই জায়গা যেখানে কার-টি সেল এবং ক্যান্সার কোষ পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সিডি২৮.-কার-টি সেল তাদের মলিকিউল দ্রুত ইমিউন সিন্যাপসের মধ্য দিয়ে সরিয়ে নেয়। এর ফলে তারা অল্প সময়ে একাধিক ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে পারে। অন্যদিকে, ৪-১বিবি-কার-টি সেল ইমিউন সিন্যাপসে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ধরে থাকে। এটি একই সাথে একাধিক টি সেলের কার্যক্রমকে সমন্বিত করে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে একটি টেকসই প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল কার-টি সেলের লিপিড র‍্যাফট নামক বিশেষ কোষীয় অঞ্চলের কার্যক্রম পরীক্ষা করা। লিপিড র‍্যাফট হলো কোষের বাইরের ঝিল্লি অংশ যেখানে মলিকিউলার ইন্টারঅ্যাকশন ঘটে। গবেষকরা দেখেছেন যে, সিডি২৮.-কার-টি সেল লিপিড র‍্যাফটের মধ্য দিয়ে দ্রুত কাজ করে এবং এর ফলে তা একাধিক ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে সক্ষম হয়। বিপরীতে, ৪-১বিবি.-কার-টি সেল এই অঞ্চলে দীর্ঘ সময় ধরে থাকে এবং ধীর কিন্তু ক্রমাগত কার্যক্রম চালায়।

এই গবেষণার ফলে কার-টি সেলের কার্যকারিতা এবং তাদের মলিকিউলার ডায়নামিক্স নিয়ে মূল্যবান তথ্য পাওয়া গেছে। এই তথ্যের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কার-টি সেল থেরাপি আরও উন্নত করা সম্ভব হবে। বিশেষত, কঠিন টিউমার যেগুলো চিকিৎসায় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, সেগুলোর বিরুদ্ধে এই থেরাপি আরও কার্যকর হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকর থেরাপি তৈরির জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কার-টি সেল ব্যবহার করা হতে পারে।

এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ড. নাবিল আহমেদ, যিনি বেইলর কলেজ অফ মেডিসিন এবং টেক্সাস চিলড্রেনস হসপিটালের হেমাটোলজি ও অঙ্কোলজি বিভাগের অধ্যাপক। তার মতে, ক্যান্সার কোষ অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং তাদের প্রতিরোধ করতে আমাদের থেরাপিগুলো আরও উন্নত করতে হবে। ভবিষ্যতে কার-টি সেলের কার্যক্রম আরও নমনীয় করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে এটি কঠিন এবং আক্রমণাত্মক ধরনের টিউমারের বিরুদ্ধে কার্যকর হয়।

গবেষণায় আরও অনেক বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন, যারা বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত। এই গবেষণাটি জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, স্ট্যান্ড আপ টু ক্যান্সার এবং আরও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পরিচালিত হয়। গবেষণার মাধ্যমে কার-টি সেল থেরাপির সম্ভাবনাগুলো আরও প্রসারিত হয়েছে এবং এর ফলে ক্যান্সার চিকিৎসায় একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।

এই গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যতে ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ক্যান্সার কোষের জটিলতাকে পরাজিত করার জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং থেরাপি তৈরির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

টি ব্যাগ থেকে নির্গত মাইক্রোপ্লাস্টিক মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে আমাদের স্বাস্থ্যের

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো