ডিপসিকের প্রভাব কাটিয়ে এনভিডিয়া শেয়ার আবারো বৃদ্ধি

নতুন প্রযুক্তির অগ্রগতি কখনো কখনো বড় কোম্পানিগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চীনা এআই স্টার্টআপ ডিপসিক সম্প্রতি তাদের উন্নত এআই মডেল তৈরির খবর প্রকাশ করলে এনভিডিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই কোম্পানিটির বাজার মূল্য ৭৫০ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। তবে, এই ধাক্কা সামলে উঠতে এনভিডিয়ার খুব বেশি সময় লাগেনি। শেয়ারের দাম কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছে, যদিও তা এখনও ৬% কম, যেখানে একই সময়ে নাসডাকের মূল্য তেমন পরিবর্তন হয়নি।

ডিপসিক দাবি করেছে, তারা কম্পিউটিং খরচ কমিয়ে একটি উন্নত এআই মডেল তৈরি করেছে। এই দাবি বাজারে এমন একটি ধারণা তৈরি করেছিল যে, ভবিষ্যতে এনভিডিয়ার ব্যয়বহুল চিপগুলোর চাহিদা কমে যেতে পারে। কিন্তু বাস্তব চিত্র বেশ ভিন্ন। এনভিডিয়ার বড় গ্রাহকরা এখনও তাদের প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছেন। বিশেষ করে অ্যামাজন, মেটা এবং গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ২০২৪ ও ২০২৫ সালে এআই অবকাঠামোতে বড় অঙ্কের মূলধনী ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছে।

অ্যামাজনের সিইও অ্যান্ডি জ্যাসি এনভিডিয়ার সাথে দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বের কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন। ২০২৫ সালে অ্যামাজনের মূলধনী ব্যয় ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার বড় অংশটাই এআই খাতে বিনিয়োগ করা হবে। এদিকে, এনভিডিয়ার ডেটা সেন্টার ব্যবসা, যেখানে এআই চিপ ও সেবা অন্তর্ভুক্ত, জানুয়ারি শেষে সমাপ্ত অর্থবছরে ১১৩ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

তবে, এনভিডিয়ার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে তাদের নতুন ব্ল্যাকওয়েল চিপের বাজারে আসা। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এই চিপগুলোর উচ্চ পরিমাণে সরবরাহ শুরু হতে নতুন অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। ফলে, এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালে এনভিডিয়ার বিক্রয়ে কিছুটা ধীরগতি দেখা যেতে পারে।

জেনসেন হুয়াং, এনভিডিয়ার সিইও, গত নভেম্বরে বলেছেন যে ব্ল্যাকওয়েল চিপ উৎপাদনের কাজ পূর্ণগতিতে চলছে। কিন্তু অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, চিপ সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়তে কিছুটা সময় লাগবে। এর ফলে, এনভিডিয়ার আগামী কয়েক মাসের আয়ের পূর্বাভাস প্রত্যাশার তুলনায় কম হতে পারে।

এনভিডিয়ার শেয়ারের মূল্য বর্তমানে এই বছরের সম্ভাব্য আয়ের তুলনায় প্রায় ৩২ গুণ বেশি দামে লেনদেন হচ্ছে, যেখানে ছয় মাস আগে তা ৪০ গুণের কাছাকাছি ছিল। এই মূল্যমান কিছুটা কম হওয়া বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশাকে বাস্তবসম্মত পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারে। অন্যদিকে, এনভিডিয়া এখনও অন্যান্য মেগা-ক্যাপ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর তুলনায় তুলনামূলক কম দামে লেনদেন করছে, যদিও তাদের রাজস্ব বৃদ্ধির হার অনেক বেশি।

ফ্যাক্টসেটের তথ্য অনুসারে, এনভিডিয়ার রাজস্ব ২০২৪ সালে ৫৩% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে অ্যাপল, মাইক্রোসফট ও অন্যান্য বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের গড় রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ১২.২%। এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার এনভিডিয়ার শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এখনও এনভিডিয়ার চিপ ও প্রযুক্তিতে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করছে। ডিপসিকের উদ্ভাবন বাজারে নতুন প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করলেও, এটি এখনই এনভিডিয়ার জন্য বড় কোনো হুমকি হয়ে ওঠেনি। বরং, এনভিডিয়ার দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং তাদের বড় গ্রাহকদের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি কোম্পানির ভবিষ্যৎ শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করছে।

এই পরিস্থিতিতে, এনভিডিয়ার সাম্প্রতিক মূল্যমান কিছুটা কম হওয়া আসলে তাদের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। এটি বিনিয়োগকারীদের বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা স্থাপন করতে সাহায্য করতে পারে এবং কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এনভিডিয়া সামনের সময়ে নতুন প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি বাজারের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কৌশল গ্রহণ করলে, তারা তাদের শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারবে।

এনভিডিয়া উন্নত গেমিং চিপ সহ আরো বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে সিইএস ২০২৫ সম্মেলনে

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো