যুক্তরাষ্ট্রের এআই কোম্পানি ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার টেক জায়ান্ট কাআকোর মধ্যে একটি নতুন চুক্তির স্বাক্ষর হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে কাআকো তাদের নতুন এআই সেবার জন্য ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। কাআকো, যা দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম বড় ডিজিটাল কোম্পানি, এর মাধ্যমে অনলাইন ব্যাংকিং, ট্যাক্সি হেলিং অ্যাপ এবং জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম কাআকাওটকের সাথে হাজার হাজার ব্যবহারকারীর কাছে উন্নত প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই অংশীদারিত্বের পেছনে একটি বৃহত্তর প্রেক্ষাপট রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বী ডিপসিক-এর উচ্চ কর্মদক্ষতা ও নিম্ন খরচের প্রস্তাবনা বিশ্বব্যাপী এআই শিল্পে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ডিপসিক-এর কার্যকারিতাকে দেখে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এআই ডেভেলপারদের জন্য এটি এক প্রকার সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন। ডিপসিক-এর এই উদ্ভাবনী ও দ্রুতগতির উন্নয়ন ওপেনএআই সহ অন্যান্য কোম্পানিকে তাদের প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক কৌশল পুনর্বিবেচনা করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অন্যদিকে, ওপেনএআই নিজেও বর্তমানে একটি বৃহৎ উদ্যোগের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষণা করা ‘স্টারগেট ড্রাইভ’-এ জড়িত হয়েছেন। এই ড্রাইভের উদ্দেশ্য হলো আগামী দিনে এআই খাতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা, যার জন্য প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে আমেরিকা এআই প্রযুক্তিতে নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে চায়।
স্যাম অল্টম্যান শুধুমাত্র কাআকোর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য নয়, বরং দক্ষিণ কোরিয়ার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি কোম্পানির সাথে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন। অল্টম্যান এসকে গ্রুপের চেয়ারম্যান চেই তাই-ওন এবং এসকে হাইনিক্সের সিইও কাক নোহ-জং-এর সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে এআই মেমরি চিপ, যেমন হাই ব্যান্ডউইথ মেমরি (HBM) নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া, অল্টম্যান সাম্ভাব্যভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার আরও বিশিষ্ট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, যেমন স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের চেয়ারম্যান লি জে-ইয়ং-এর সাথেও সাক্ষাৎ করেছেন।
কিছু বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তি বিশ্লেষক ডিপসিক-এর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের এআই শিল্পে বিদ্যমান প্রতিযোগিতার কথা উল্লেখ করেছেন। ডিপসিক-এর ক্ষেত্রে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, এরা কিছুটা চ্যাটজিপিটি-এর মতন বিদ্যমান এআই মডেলের আচরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্যাটার্ন অনুকরণ করে চলছে। এই প্রক্রিয়াকে ‘ডিস্টিলেশন’ বলা হচ্ছে, যেখানে ছোট মডেলগুলো বড় মডেলের থেকে শিক্ষা নিয়ে তাদের কার্যপ্রণালী অনুসরণ করে।
একই সঙ্গে, ওপেনএআই সাম্প্রতিক সময়ে বৌদ্ধিক সম্পত্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু বিতর্ক ও আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। বিশেষ করে, তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই দাবি করছেন যে, ওপেনএআই কপিরাইটকৃত উপাদান অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করেছে, যা আইনি ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেও, বিতর্ক এখনো পুরোপুরি সমাধান হয়নি। এআই মডেল তৈরির ক্ষেত্রে কপিরাইট আইন ও বৌদ্ধিক সম্পত্তির সঠিক ব্যবহারের বিষয়টি সবসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ওপেনএআই সম্প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছিল যে, চীনা কোম্পানিগুলো তাদের উন্নত এআই মডেলগুলোর নকল তৈরি করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
কথিত তথ্যানুযায়ী, কাআকো ও ওপেনএআই-এর অংশীদারিত্বের মূল লক্ষ্য হলো এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের জীবনে নতুন ধরণের অভিজ্ঞতা যোগ করা। কাআকোর একাধিক সেবার সাথে চ্যাটজিপিটি-এর ইন্টিগ্রেশন নিশ্চিত করবে যে, ব্যবহারকারীরা সহজে এবং দ্রুত যোগাযোগ ও তথ্য লাভ করতে পারবে। এছাড়া, এই অংশীদারিত্ব দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহৎ বাজারে উন্নত এআই সেবার প্রসার ঘটাতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই চুক্তি শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সহযোগিতার একটি দিক তুলে ধরে না, বরং এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার খাতে একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ইঙ্গিত দেয়। যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনা প্রতিদ্বন্দ্বী ডিপসিক-এর মধ্যে প্রতিযোগিতা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। প্রযুক্তির এই প্রতিযোগিতায় উন্নত ও নিরাপদ এআই সেবার জন্য বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলোকে নিজেদের কৌশল, বিনিয়োগ এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার নতুন মাত্রা সন্ধান করতে হচ্ছে।
ওপেনএআই-এর চুক্তির সাথে সাথে, অন্যান্য প্রধান এআই কোম্পানিগুলোও নিজেদের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী ধারণা বিশ্ব বাজারে প্রতিপাদনের চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে, দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানির সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা ও পরস্পরের সহযোগিতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। দেশের অর্থনীতি ও প্রযুক্তির উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে এ ধরনের উদ্যোগগুলো একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
এই নতুন চুক্তির ফলে, কাআকো ও ওপেনএআই উভয়েই তাদের নিজ নিজ বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে সক্ষম হবে। এআই প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ও এর বাণিজ্যিক প্রয়োগ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও নতুন উদ্ভাবনী ধারণা ও উদ্যোগের আশা করা যায়। এ ক্ষেত্রে, সমগ্র প্রযুক্তি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মিলিতভাবে কাজ করতে হবে যাতে করে উন্নত প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
ওপেনএআই তাদের নতুন এআই “reasoning” মডেল o3-mini প্রকাশ করেছে