ড্রোন এবং স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলির মতো চলমান যন্ত্রগুলির সমন্বয় করতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ব্যবহার করা যেতে পারে, যা আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে কোয়ান্টাম তথ্য ব্যবহার করে এই যন্ত্রগুলি সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াই একে অপরের সাথে সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম হতে পারে। এই গবেষণা ভবিষ্যতে লজিস্টিক ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ করে তুলতে পারে, যার ফলে ডেলিভারির খরচ কমে আসবে এবং স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের জন্য সীমিত ব্যান্ডউইথের কার্যকরী ব্যবহার সম্ভব হবে।
ইউনিভার্সিটি অফ কেন্টের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে কোয়ান্টাম তথ্য ব্যবহার করে ড্রোন এবং স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের মতো মোবাইল যন্ত্রের চলাচলকে সিঙ্ক্রোনাইজ করা সম্ভব হতে পারে। এই গবেষণায় কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণ জ্ঞানকে অতিক্রম করে।
আরও পড়ুনঃ প্রথমবারের মত পূর্ণ-মেকানিক্যাল কিউবিট তৈরি করেছে সুইজারল্যান্ডের গবেষকরা
গবেষক দলটি, যার নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ কেন্টের স্কুল অফ ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনমির পিএইচডি ছাত্র জশ টাকার, ‘কোয়ান্টাম কয়েন’ বা কিউবিটের মাধ্যমে ড্রোন এবং অন্যান্য যন্ত্রগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছেন। এই কিউবিটগুলি যন্ত্রগুলিকে একে অপরের সাথে সমন্বয় করতে সাহায্য করে, এমনকি যখন তারা দূরে সরে যায় এবং সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ থাকে না তখনও।
এই গবেষণার জন্য দলটি IBM এর তৈরি একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বাস্তব কিউবিট ব্যবহার করেছে। কিউবিটগুলি সুপারকন্ডাক্টিং পদার্থের তৈরি এবং এগুলি এমন তাপমাত্রায় রাখা হয় যা আন্তঃনাক্ষত্রিক শূন্যতার থেকেও ঠান্ডা। এই বিশেষ অবস্থার কারণে কিউবিটগুলি কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী আচরণ করে, যা তাদের একে অপরকে প্রভাবিত করতে দেয়, এমনকি কোনো প্রকার যোগাযোগ বা স্পর্শ ছাড়াই।
এই গবেষণাটি ‘নিউ জার্নাল অফ ফিজিক্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে দেখানো হয়েছে যে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তি চলমান যন্ত্রগুলির মধ্যে সমন্বয়কে ইতিবাচকভাবে উন্নত করতে পারে। বর্তমান সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনই কোয়ান্টাম প্রযুক্তিও সমন্বয় সাধনে নতুন দিক নির্দেশ করতে সক্ষম হবে।
জশ টাকার বলেন, “আমাদের গবেষণা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংকে বাস্তব জগতে প্রয়োগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। আমাদের ফলাফলগুলি কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সম্ভাব্য ব্যবহারিক প্রয়োগের একটি পথ দেখায়, পাশাপাশি এই প্রযুক্তি বর্তমান কোয়ান্টাম হার্ডওয়্যারে কী কী চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা নিয়েও আলোকপাত করে।”
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের এমন ব্যবহারের ফলে চলমান যন্ত্রগুলির মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব হবে, যেখানে প্রচলিত যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হবে না। এতে করে ড্রোন এবং স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের মধ্যে দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও তারা একে অপরের সাথে তথ্য বিনিময় করতে পারবে। এর ফলে লজিস্টিক সেবা আরও দ্রুত এবং খরচ সাশ্রয়ী হবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ড্রোন বা স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের মতো চলমান যন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হলে এর অনেক ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা যাবে। যেমন, ডেলিভারি ড্রোনগুলির মধ্যে সমন্বয় করে একটি বড় এলাকার পণ্য দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সরবরাহ করা যাবে। এছাড়া স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলির মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে ট্রাফিক সমস্যার সমাধান এবং দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে।
তবে এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কোয়ান্টাম হার্ডওয়্যার এখনও উন্নয়ন পর্যায়ে রয়েছে এবং এর কার্যকারিতা প্রমাণ করার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। বর্তমান কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং এগুলি পরিচালনা করতে অনেক জটিলতা রয়েছে। তাছাড়া, কিউবিটগুলিকে স্থিতিশীল রাখা এবং তাদের মধ্যে নির্ভুল যোগাযোগ নিশ্চিত করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু এই সব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের এই ব্যবহার ভবিষ্যতে আমাদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। চলমান যন্ত্রের মধ্যে কোয়ান্টাম সমন্বয় ভবিষ্যতের লজিস্টিক, পরিবহন, এবং অন্যান্য পরিষেবাকে আরও কার্যকর করে তুলতে পারে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ৮-ফোটন কিউবিট চিপ কোয়ান্টাম কম্পিউটিং তৈরি করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার ইঞ্জিনিয়াররা
এই গবেষণাটি দেখিয়েছে যে কোয়ান্টাম তথ্য কিভাবে চলমান যন্ত্রগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে সাহায্য করতে পারে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হলে এটি আমাদের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত এবং নিরাপদ করে তুলতে পারবে। যদিও এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে গবেষকদের আশা, অদূর ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।