কুরআনের পরিচয়
কুরআন হলো ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, যা আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে অবতীর্ণ করেছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উপর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এটি অবতীর্ণ করা হয়েছে। কোরআনের মূল ভাষা হলো আরবি। এটি মুসলিমদের জন্য শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রে পথনির্দেশনা প্রদানকারী এক অভূতপূর্ব গ্রন্থ। কোরআন মানুষের জীবনধারা, আখলাক (নৈতিকতা), সমাজ ও রাষ্ট্রের নীতি, এমনকি বিজ্ঞান ও প্রকৃতির রহস্য পর্যন্ত স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন, “এই কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা পথ প্রদর্শনকারি মুত্তাকীদের জন্য।” (সুরা বাকারা: ২)
কুরআন শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষাই দেয় না, বরং পৃথিবী, মহাবিশ্ব এবং এর সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে এমন কিছু জ্ঞান প্রদান করে যা বিজ্ঞানীরা পরে আবিষ্কার করেছেন। আজকের আধুনিক বিজ্ঞান যখন মহাবিশ্বের সৃষ্টি, জীবনের উৎপত্তি এবং অন্যান্য জটিল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করছে, তখন আমরা দেখতে পাই যে, কোরআনে সেই বিষয়গুলো বহু শতাব্দী আগেই বলা হয়েছে।
কুরআন ও বিজ্ঞান: সাদৃশ্য ও সত্যের মিলন
বিজ্ঞান সবসময় পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। কোরআন এমন একটি গ্রন্থ যা বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন আবিষ্কারের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও কুরআন ও বিজ্ঞান বই নয়, এটি এমন অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য সরবরাহ করেছে যা পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে। কোরআনের বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো এমন সময়ে অবতীর্ণ হয়েছে যখন মানুষ আধুনিক বিজ্ঞানের কিছুই জানতো না।
কুরআনে মহাবিশ্বের সৃষ্টির বিবরণ: “তিনি (আল্লাহ) আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, তারপর আরশের উপরে অবস্থান করেছেন।” (সুরা হাদিদ: ৪)। আধুনিক বিজ্ঞানও বলে যে মহাবিশ্ব একটি ক্রমান্বিত প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে। বিগ ব্যাং তত্ত্ব এই ধারণাকে সমর্থন করে এবং বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে মহাবিশ্বের সৃষ্টি একটি বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে হয়েছে। কোরআনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, “যারা অবিশ্বাসী তারা কি চিন্তা করে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী উভয়ই একীভূত ছিল, তারপর আমি তাদের পৃথক করলাম।” (সুরা আম্বিয়া: ৩০)। বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বকে আধুনিক যুগে প্রমাণিত করেছেন।
জীবনের উৎপত্তি
জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, “আমি পানি থেকে প্রতিটি জীবন্ত বস্তু সৃষ্টি করেছি। তারা কি তবুও বিশ্বাস করবে না?” (সুরা আম্বিয়া: ৩০)। বিজ্ঞানও বলে যে পৃথিবীতে জীবনের শুরু পানি থেকে হয়েছিল। প্রাথমিক জীবাণুগুলো পানির মধ্যে ছিল এবং ধীরে ধীরে তাদের বিবর্তন ঘটেছে। এই তথ্য কোরআনে বহু শতাব্দী পূর্বে বলা হয়েছে, যা আজকের আধুনিক বিজ্ঞানে প্রমাণিত হয়েছে।
ভ্রূণের বিকাশ
মানব ভ্রূণের বিকাশ নিয়ে কোরআনে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা বিজ্ঞানীদের অবাক করে দেয়। কোরআনে বলা হয়েছে, “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্র থেকে। তারপর তাকে করেছি একবিন্দু বীর্য, যা স্থাপন করি সুরক্ষিত স্থানে। তারপর আমি বীর্যকে জমাট রক্তে পরিণত করেছি। তারপর সেই জমাট রক্তকে করেছি এক খণ্ড মাংস, তারপর সেই মাংস থেকে সৃষ্টি করেছি অস্থি, এরপর অস্থির উপরে পরিয়েছি মাংস। তারপর তাকে করেছি নতুন রূপে। অতএব মহিমান্বিত আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তাদের মধ্যে সর্বোত্তম।” (সুরা মুমিনুন: ১২–১৪)। আধুনিক বিজ্ঞান ভ্রূণের বিকাশের এই পর্যায়গুলোর সত্যতা প্রমাণ করেছে, যা প্রথম আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।
পৃথিবীর আকৃতি
কোরআনে পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, “তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীকে ডিমের আকৃতি দিয়েছেন।” (সুরা নাযিয়াত: ৩০)। যদিও প্রাচীনকালে মানুষ বিশ্বাস করতো পৃথিবী সমতল, কিন্তু কোরআন বলেছে যে পৃথিবী ডিম্বাকৃতির মতো, যা পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন।
পর্বতমালা ও প্লেট টেকটনিক
পর্বতমালা ও তাদের ভূমিকা নিয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, “আমি পৃথিবীতে স্থাপন করেছি দৃঢ় পর্বতমালা যাতে তারা (মানুষ) আন্দোলিত না হয়।” (সুরা আম্বিয়া: ৩১)। বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে পর্বতমালা পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা প্লেট টেকটনিকের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ভূমিকম্পের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়।
বায়ুমণ্ডল ও পরিবেশ
কোরআনে বলা হয়েছে, “আমি আকাশকে রক্ষা করেছি এক সুরক্ষিত ছাদ হিসেবে।” (সুরা আম্বিয়া: ৩২)। এখানে আকাশ বলতে বায়ুমণ্ডল বোঝানো হয়েছে যা পৃথিবীকে মহাকাশের ক্ষতিকারক বিকিরণ থেকে রক্ষা করে। বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি ও মহাকাশের বিভিন্ন বিপদ থেকে আমাদের সুরক্ষা দেয়।
কোরআন শুধুমাত্র ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, বরং বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদর্শিত তথ্যের সত্যতাও প্রমাণ করেছে। কোরআনে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো এমন সময়ে দেওয়া হয়েছিল, যখন মানুষের পক্ষে এসব তথ্য জানার কোনো উপায় ছিল না। কোরআন ও বিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে এবং কোরআন যে আল্লাহ প্রদত্ত অলৌকিক গ্রন্থ, তা প্রমাণ করতে বিজ্ঞানেরও কোনো দ্বিমত নেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি আমার নিদর্শনগুলো তাদেরকে চারদিক হতে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে দেখাবো, যতক্ষণ না তাদের কাছে স্পষ্ট হয় যে এটা সত্য।” (সুরা ফুসসিলাত: ৫৩)।
মেমোরি ফুল আর কখনো দেখাবেনা: ফোন মেমোরি বাড়িয়ে নিন খুবি সহজে
কুরআনের গুরুত্ব ও প্রভাব
কোরআন শুধুমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি মানব জীবনের সকল দিক সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করে। এটি মানুষের জীবনযাত্রা, পারিবারিক সম্পর্ক, নৈতিকতা, সমাজ, রাজনীতি এবং অর্থনীতি সম্পর্কেও বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়। কোরআন মানবজাতির জন্য শান্তি ও সৌহার্দ্যের পথ দেখায়। কোরআনের শিক্ষা মানুষের নৈতিক উন্নয়নে সহায়ক, যা মানুষকে অন্যায় ও পাপ থেকে দূরে রাখে।
কোরআনের শিক্ষা মানুষের আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তির জন্য অপরিহার্য। এটি মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালবাসার অনুভূতি জাগ্রত করে, যা তাদেরকে সৎ পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। কোরআন মানুষের চিন্তা–চেতনা ও কর্মে শুদ্ধতা আনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য