ট্যাটুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের তরঙ্গ রিয়েল টাইম মনিটরিং

গবেষকরা একটি নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেছেন যা মস্তিষ্কের তরঙ্গ পর্যবেক্ষণকে অনেক সহজ এবং কার্যকর করতে সাহায্য করবে। এটি একটি তরল কালি যা সরাসরি মাথার ত্বকে প্রিন্ট করা যায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপ নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তিটি বর্তমান EEG (ইলেকট্রোএনসিফালোগ্রাফি) পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি আরামদায়ক এবং কম পরিশ্রমী। এই নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মস্তিষ্কের তরঙ্গ সঠিকভাবে ট্র্যাক করা সম্ভব, এবং এটি চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে।

মস্তিষ্কের তরঙ্গ পর্যবেক্ষণের জন্য সাধারণত EEG ব্যবহৃত হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যা মস্তিষ্কের তরঙ্গ এবং কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে ইলেকট্রোড ব্যবহার করা হয়, যা মাথার ত্বকে লাগিয়ে মস্তিষ্কের তরঙ্গ সিগন্যাল সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এই পদ্ধতিতে অনেক সময় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় এবং এটি রোগীদের জন্য বেশ অস্বস্তিকর হতে পারে। এছাড়া, EEG পদ্ধতিতে ইলেকট্রোড গেঁথে বেশ কয়েকটি স্থান সিলেক্ট করা হয়, যা কিছুটা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যথাদায়কও হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ পোর্টেবল রক্তচাপ মাপার যন্ত্র যা অটোমেটিক রক্তচাপ পরিমাপ করবে

এই সমস্যাগুলো দূর করার জন্য গবেষকরা একটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে মস্তিষ্কের তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ আরো সহজ এবং কার্যকর হতে পারে। এই প্রযুক্তি হল ই-ট্যাটু, যা সরাসরি মাথার ত্বকে প্রিন্ট করা হয় এবং এটি মস্তিষ্কের তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। এই ই-ট্যাটু তৈরি করতে ব্যবহৃত তরল কালি বিশেষ ধরনের কনডাকটিভ পলিমার থেকে তৈরি, যা মস্তিষ্কের তরঙ্গ সঠিকভাবে ট্র্যাক করতে সাহায্য করে।

ই-ট্যাটুর প্রযুক্তি বর্তমান EEG পদ্ধতির তুলনায় অনেক সহজ এবং কম সময় নেয়। এটি ডিজিটাল কন্ট্রোলড ইনকজেট প্রিন্টার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, যা মাথার ত্বকে সরাসরি প্রিন্ট করা যায়। এতে কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি নেই এবং এটি রোগীদের জন্য বেশ আরামদায়ক। ই-ট্যাটু তৈরির জন্য যে তরল কালি ব্যবহৃত হয়, তা মাথার ত্বকের উপর লেগে শুকিয়ে গেলে এটি মস্তিষ্কের তরঙ্গ সঠিকভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম। এর ফলে, মস্তিষ্কের তরঙ্গ সংক্রান্ত সিগন্যাল অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব হয় এবং এটি সাধারণ EEG পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।

গবেষকরা ই-ট্যাটুর প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন যে, এটি EEG পদ্ধতির সাথে তুলনা করলে অনেক বেশি সুবিধাজনক। তারা ৫ জন অংশগ্রহণকারীর মাথায় ই-ট্যাটু প্রিন্ট করেছেন এবং তাদের মাথার পাশে সাধারণ EEG ইলেকট্রোডও যুক্ত করেছেন। তারপর তারা দুটি পদ্ধতির তুলনা করেছেন এবং দেখেছেন যে, ই-ট্যাটু সিগন্যাল সংক্রান্ত কার্যকারিতা অনেক বেশি নির্ভুল এবং দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীল থাকে। সাধারণ EEG ইলেকট্রোডে ৬ ঘণ্টার পর সিগন্যালগুলো শুকিয়ে যাওয়ার ফলে বেশ কিছু ইলেকট্রোডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, কিন্তু ই-ট্যাটুর ক্ষেত্রে সিগন্যাল ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকে। এটি প্রমাণ করে যে, ই-ট্যাটু প্রযুক্তি বর্তমান EEG পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।

গবেষকরা আরো একটি উন্নতি করেছেন। তারা ই-ট্যাটু প্রযুক্তিতে ইলেকট্রোডগুলির সংযোগে ব্যবহৃত তারের পরিবর্তে প্রিন্ট করা লাইন ব্যবহার করেছেন, যা সিগন্যালের গতিপথে কোনো নতুন সিগন্যাল গ্রহণ না করেই মূল সিগন্যালকে পরিবহণ করতে সক্ষম। এর ফলে, ই-ট্যাটু প্রযুক্তি অনেক বেশি কার্যকর এবং নির্ভরযোগ্য হয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যতে একেবারে ওয়্যারলেস EEG সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হবে, যা রোগীদের জন্য আরও বেশি সুবিধাজনক হবে।

এছাড়া, গবেষকরা ই-ট্যাটু প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করার পরিকল্পনা করছেন। তারা এই প্রযুক্তিতে ওয়্যারলেস ডেটা ট্রান্সমিটার সংযুক্ত করার চিন্তা করছেন, যাতে পুরো EEG সিস্টেমটি ওয়্যারলেস হয়ে যায়। এটি রোগীকে আরো আরামদায়ক এবং কার্যকর অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। বর্তমানে, ব্রেইন-কোম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) ডিভাইসগুলোর মধ্যে বেশ বড় এবং ভারী হেডসেট ব্যবহৃত হয়, যা ব্যবহারকারীদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। ই-ট্যাটু প্রযুক্তি সেই ধরনের বড় ডিভাইসগুলির প্রয়োজনীয়তা মেটাতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মস্তিষ্কের তরঙ্গ সরাসরি মাথায় প্রিন্ট করা ইলেকট্রনিক সেন্সর ব্যবহার করে ট্র্যাক করা সম্ভব, যার ফলে BCI প্রযুক্তি আরো সহজ এবং কার্যকর হয়ে উঠবে।

এমআরএনএ চিকিৎসার মাধ্যমে ইনজেকশন ছাড়াই ঔষধ সেবন

ই-ট্যাটু প্রযুক্তি শুধুমাত্র মস্তিষ্কের তরঙ্গ পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে নয়, বরং এর আরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এটি ভবিষ্যতে মেডিকেল ডিভাইসগুলির জন্য একটি বড় অগ্রগতি হতে পারে। যেমন, এটি চর্ম রোগের নির্ণয়, হৃদপিণ্ডের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সিগন্যাল মাপতে ব্যবহার করা হতে পারে। এছাড়া, এটি চিকিৎসা এবং গবেষণার জন্য আরও দ্রুত এবং নির্ভুল ডাটা প্রদান করতে সক্ষম হবে। এছাড়া, ই-ট্যাটু প্রযুক্তি শরীরের বিভিন্ন স্থানে যেমন পেশীতে, বুকে, কিংবা কাঁধে প্রিন্ট করে শরীরের বিভিন্ন সিগন্যাল ট্র্যাক করতে পারে। এই প্রযুক্তিটি বিভিন্ন চিকিৎসা এবং মনিটরিং পদ্ধতির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে, যেমন হৃদরোগ, ব্রেন স্ট্রোক, বা অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারগুলির পর্যবেক্ষণ।

গবেষকরা এই প্রযুক্তি উন্নত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন। তারা আরও উন্নত পলিমার এবং কনডাকটিভ উপকরণ ব্যবহার করে এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। ভবিষ্যতে, যদি এটি আরো উন্নত হয়, তবে এটি বিভিন্ন ধরনের রোগ এবং অবস্থার দ্রুত শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটাতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ইলেকট্রনিক জিহ্বা : খাবারের সতেজতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নতুন প্রযুক্তি

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো