এমআইটি ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি রোবট মৌমাছি যা ফুলের পরাগায়ণ নিয়ন্ত্রণ করে ফসলের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি করতে পারে

মৌমাছি প্রকৃতির অমূল্য উপহার। এরা শুধু মধু দেয় না, বরং ফুলের পরাগায়ণ করে ফল-ফুল উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়ে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জলবায়ু পরিবর্তন, কীটনাশক এবং রোগের কারণে মৌমাছি বিলুপ্তির মুখে। তাই বিজ্ঞানীরা এ সমস্যা সমাধানে নিয়ে এসেছেন এক নতুন ধারণা রোবট মৌমাছি। এমআইটি-এর গবেষকরা এমন রোবট মৌমাছি তৈরি করেছেন যা প্রকৃত মৌমাছিদের মতোই কার্যকরভাবে পরাগায়নের কাজ করতে পারে। রোবট মৌমাছিগুলো কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে আরও কার্যকর পদ্ধতি প্রদান করতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে কৃষকরা মাল্টিলেভেল গুদামে ফল এবং শাকসবজি চাষ করতে পারবেন। এটি একদিকে উৎপাদন বাড়াবে এবং অন্যদিকে পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজের নেতিবাচক প্রভাব কমাবে।

আরও পড়ুনঃ পিঁপড়ার মতো মাইক্রো রোবট দল যা তার ওজনের ২০০০ গুন ভারী বস্তু বহন করতে সক্ষম

এমআইটি-এর বিজ্ঞানীদের তৈরি এই রোবট মৌমাছিটি ছোট আকারের উড়ন্ত একটি যন্ত্র, যা আগের সংস্করণের তুলনায় বেশি টেকসই এবং দক্ষ। এটি ১,০০০ সেকেন্ড বা প্রায় ১৭ মিনিট পর্যন্ত বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। এই রোবটগুলো একটি পেপারক্লিপের চেয়েও হালকা এবং খুব দ্রুতগতিতে উড়তে পারে। এমনকি, এটি ডাবল ফ্লিপ এবং শরীর ঘুরিয়ে বিভিন্ন কৌশল দেখাতে সক্ষম। নতুন নকশা অনুযায়ী রোবট মৌমাছির কৃত্রিম ডানাগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে যান্ত্রিক চাপ কমে এবং এটি আরও টেকসই হয়।

কৃত্রিম ডানাগুলো নরম অ্যাকচুয়েটর দিয়ে তৈরি, যা ইলাস্টোমারের স্তর এবং কার্বন ন্যানোটিউব ইলেকট্রোডের সমন্বয়ে গঠিত। এই ডানাগুলো দ্রুত সংকুচিত এবং প্রসারিত হয়ে যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন করে এবং ডানা ফাঁপানোর কাজ করে। তবে আগের মডেলগুলোতে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির কারণে ডানাগুলো বেঁকে যেত, যা রোবটের দক্ষতা কমিয়ে দিত। নতুন নকশায় এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।

এছাড়া, নতুন নকশায় একটি লম্বা ডানার কবজা তৈরি করা হয়েছে, যা ডানার গতির সময় টর্সনাল চাপ কমায়। ২ সেন্টিমিটার লম্বা এবং মাত্র ২০০ মাইক্রন ব্যাসের এই কবজা তৈরি করা গবেষকদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। এটি তৈরির জন্য একটি বহু ধাপের লেজার কাটিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিটি ডানার কবজা সঠিকভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

গবেষক দলের প্রধান কেভিন চেন জানান, নতুন রোবট মৌমাছি ৩৫ সেন্টিমিটার প্রতি সেকেন্ড গতিতে উড়তে পারে। এটি অত্যন্ত নির্ভুলভাবে উড়ার পথ নির্ধারণ করতে সক্ষম, যার ফলে এই রোবটটির মাধ্যমে যেকোনো শব্দও তৈরি করা যায় উড়ন্ত অবস্থায় । এই উদ্ভাবন আগের যে কোনো রোবটিক মৌমাছির তুলনায় ১০০ গুণ বেশি দীর্ঘ সময় ধরে উড়তে সক্ষম। চেন বলেন, “এই উদ্ভাবন আমাদের আরও দূরবর্তী সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যেমন পরাগায়নে সহায়তা প্রদান।”

পরবর্তী পর্যায়ে গবেষকরা এই রোবটকে আরও দীর্ঘ সময় ধরে উড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। তারা চান এটি ১০,০০০ সেকেন্ড বা প্রায় ৩ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম হোক। পাশাপাশি, রোবটগুলো যাতে একটি ফুলের কেন্দ্র থেকে টেকঅফ এবং ল্যান্ড করতে পারে, সেই প্রযুক্তি উন্নয়নের পরিকল্পনাও রয়েছে। ভবিষ্যতে রোবটগুলোতে ছোট ব্যাটারি এবং সেন্সর স্থাপন করা হবে, যা এগুলোকে ল্যাবের বাইরে উড়তে এবং চলাচল করতে সক্ষম করবে। চেন এবং তার দল মনে করেন, তাদের উদ্ভাবিত রোবটিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনেক সম্ভাবনা তৈরি হবে। আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে রোবটগুলোতে সেন্সর, ব্যাটারি এবং কম্পিউটিং সক্ষমতা সংযোজনই তাদের প্রধান লক্ষ্য।

ইলেকট্রনিক জিহ্বা : খাবারের সতেজতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নতুন প্রযুক্তি

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো