চীনের পুলিশ বিভাগ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ দমন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বদা উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা সম্প্রতি একটি হাই-টেক রোলিং রোবটকে জননিরাপত্তা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে যাকে এখন অনেকেই রোবট পুলিশ বলে চিনে। এই রোবটটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ দমন এবং কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করতে সক্ষম।
রোবটটির বৈশিষ্ট্য
এই গোলাকার রোবটটি দেখতে একদমই সায়েন্স ফিকশন সিনেমার যন্ত্রের মতো। এর গঠন এবং কার্যক্ষমতা অত্যন্ত উন্নত। এটি ১২৫ কেজি (২৭৫ পাউন্ড) ওজনের এবং মাত্র ২.৫ সেকেন্ডে ৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে পৌঁছাতে পারে। এর ব্যালেন্সিং সিস্টেম এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা এটি কখনোই উল্টে পড়ে না। রোবটটির শরীরে ক্যামেরা, আলো, স্পিকার এবং নেট গান সংযুক্ত রয়েছে। এর সাহায্যে এটি যে কোনো পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং জনতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। রোবটটি টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপের ক্ষমতাসম্পন্ন, যা জনসমাগমে অশান্তি প্রশমনে কার্যকর।
আরও পড়ুনঃ ভিডিও দেখে সার্জারি করবে রোবট
রোবটের উদ্ভাবন এবং ডিজাইন
ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোল সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এই রোবটটি ডিজাইন করেছে। এটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে এমন পরিবেশে কাজ করার জন্য যেখানে প্রচলিত চাকাযুক্ত বা পা-যুক্ত রোবট ব্যর্থ হতে পারে। এটি মডুলার পদ্ধতিতে ডিজাইন করা হয়েছে, যার ফলে এটি শত্রু শনাক্তকরণ, ট্র্যাকিং এবং আটক করার কাজ করতে পারে। এছাড়া, এটি প্রতিকূল পরিবেশে যেমন চরম তাপমাত্রা বা আঘাতজনিত পরিস্থিতিতেও কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম।
পুলিশের কার্যক্রমে রোবটের ভূমিকা
ওয়েনঝু শহরের পুলিশ বিভাগ প্রথমবারের মতো এই রোবটটিকে পেট্রোলিং কার্যক্রমে ব্যবহার শুরু করে। রোবটটি জনাকীর্ণ এলাকায় পেট্রোলিং করতে সক্ষম, যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে কাজ করা অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। চেংদু শহরের একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে দেখা গেছে, রোবটটি সংঘর্ষ রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সিমুলেটেড ঘটনার সময় রোবটটি আলো ফ্ল্যাশ করে এবং স্পিকারের মাধ্যমে বলে: “যদি আপনি লড়াইয়ে জিতেন, তবে জেলে যাবেন; যদি হারেন, তবে হাসপাতালে।” এই সতর্কবার্তা দিয়ে এটি কাছাকাছি থাকা পুলিশদের ঘটনাস্থলে ডাকার জন্য বার্তা পাঠায়।
চীনের প্রযুক্তি উদ্যোগ
চীন তাদের পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকীকরণ করতে এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্যক্ষমতা বাড়াতে নতুন নতুন উদ্ভাবনে জোর দিচ্ছে। মার্চ মাসে, চীনের পাবলিক সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় এবং ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি মন্ত্রণালয় একটি ঘোষণা দেয়, যেখানে পুলিশে রোবটের ব্যবহারের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহ খুঁজে বের করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এই উদ্যোগে সীমানা সুরক্ষা, প্রমাণ সংগ্রহ, তদন্ত প্রক্রিয়া এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের মতো ক্ষেত্রে রোবট ব্যবহারের উদাহরণ তুলে ধরা হয়। ভবিষ্যতে, এই উদাহরণগুলো চীনের বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রদর্শনী এবং কর্মশালায় উপস্থাপন করা হবে।
সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলায় রোবটের ভূমিকা
চীনের এই রোবট কেবলমাত্র অপরাধ দমন নয়, বরং জনসচেতনতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উদাহরণস্বরূপ, জনাকীর্ণ এলাকায় রোবটের উপস্থিতি জনতাকে সচেতন এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখে। পাশাপাশি, এটি দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের তথ্য সরবরাহ করে।
বিড়ালের চোখ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রোবট ও ড্রোনের ভিশন সিস্টেম তৈরি
সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া
যদিও এই রোবটটির প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলি অত্যাধুনিক, তবে কিছু সমালোচক এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সামাজিক মিডিয়ায় অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে রোবটটির গতি খুব কম এবং এটি অপরাধীদের ধরা বা আটক করার জন্য যথেষ্ট কার্যকর নয়। তবে প্রযুক্তিবিদরা বলছেন যে এটি ভবিষ্যতে আরও উন্নত হবে এবং পুলিশের কাজকে সহজতর করবে। চীন সরকারের এই উদ্যোগগুলি শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নয় বরং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। গোলাকার রোবটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের ভবিষ্যৎ পুলিশের কাজকে আরও সহজ ও কার্যকর করার সম্ভাবনা তৈরি করছে। এই ধরনের উদ্ভাবনগুলি আমাদের সমাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তার একটি উদাহরণ।
এই প্রবন্ধে আলোচনা করা বিষয়গুলো থেকে বোঝা যায় যে চীন সরকার আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কতটা আগ্রহী এবং তারা কিভাবে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশের কার্যক্ষমতা বাড়াতে চাচ্ছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে এই ধরনের উদ্যোগগুলি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও বেশি সফল হবে।
আরও পড়ুনঃ ইলেকট্রনিক জিহ্বা : খাবারের সতেজতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নতুন প্রযুক্তি