টয়োটা তাদের নতুন উদ্ভাবনী প্রকল্প সিইউই-এর মাধ্যমে প্রযুক্তির দুনিয়ায় এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে টয়োটা-র নয়জন ইঞ্জিনিয়ার নিজেদের সময় ব্যয় করে তৈরি করেছেন একটি বিশেষ ধরনের রোবট, যা বাস্কেটবল খেলতে পারে। এই রোবটটি শুধু খেলাই নয়, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডও অর্জন করেছে।
সিইউই প্রকল্পের যাত্রা ২০১৭ সালে, টয়োটা-র ইঞ্জিনিয়াররা নিজেদের ইচ্ছায় এই প্রকল্পে যুক্ত হন। প্রথমদিকে, এই রোবটটি ছিল সহজ কিছু যন্ত্রাংশের সমন্বয়, যা লেগো ব্রিকস ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এর পরবর্তী সংস্করণে ধাপে ধাপে উন্নতি ঘটিয়ে সিইউই এখন এক উচ্চতর স্তরে পৌঁছেছে। সর্বশেষ সংস্করণ, সিইউই৬, এখন দেখতে একজন প্রফেশনাল বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের মতো। রোবটটির উচ্চতা ৬ ফুট ১০ ইঞ্চি, যা তাকে একটি পাওয়ার ফরোয়ার্ড বা সেন্টারের মতো করে তুলেছে।‘
আরও পড়ুনঃ মানুষের মস্তিষ্কে সংখ্যা প্রক্রিয়াকরণের সঠিক স্থান নির্ণয় করেছেন বিজ্ঞানীরা
প্রথম গিনেস রেকর্ড সিইউই৩ নামের রোবটটি ২০১৯ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে “একটি হিউম্যানয়েড রোবটের দ্বারা সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিক ফ্রি থ্রো” শিরোনামে স্বীকৃতি পায়। এই রেকর্ড অর্জনে রোবটটি ৬ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটে ২০২০টি ফ্রি থ্রো সফলভাবে সম্পন্ন করেছিল। টোকিও অলিম্পিকের বছরের সাথে মিল রেখে রেকর্ডটি ২০২০ নম্বরে থামানো হয়েছিল।
সিইউই-এর স্বাধীন গতিশীলতা সিইউই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য ছিল রোবটটির স্বাধীনভাবে চলাচল এবং বল নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি করা। সিইউই৪ সংস্করণে রোবটটি নিজের ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে এবং বল তুলতে সক্ষম হয়। সিইউই৫ সংস্করণে এটি ড্রিবল করার মতো একটি জটিল কাজও করতে পারে। যদিও এটি এখনও মানুষের মতো মসৃণভাবে ড্রিবল করতে পারে না, তবে তার শুটিং দক্ষতা অনেক বেশি নির্ভুল। দীর্ঘ দূরত্ব থেকে শুটিং টয়োটা সিইউই৬ রোবটটি “একটি হিউম্যানয়েড রোবটের দ্বারা সবচেয়ে দূর থেকে বাস্কেটবল শুট” শিরোনামে আরেকটি গিনেস রেকর্ড অর্জন করে। এটি ২৪.৫৫ মিটার (৮০ ফুট ৬ ইঞ্চি) দূর থেকে বাস্কেটবল নেট করার কৃতিত্ব দেখায়। প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় এটি সফলভাবে শটটি সম্পন্ন করে।
রোবটটি কিভাবে কাজ করে? সিইউই রোবটটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং মেশিন লার্নিং-এর মাধ্যমে কাজ করে। এটি তার নিজস্ব নিক্ষেপ করার শৈলী তৈরি করেছে যা মানুষের নিক্ষেপ শৈলীর চেয়ে ভিন্ন। টয়োটা-র প্রকল্প নেতা তমোহিরো নমি বলেছেন, “আমরা চেয়েছিলাম রোবটটি মানুষের মতো নিক্ষেপ করুক, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। পরিবর্তে, সিইউই তার নিজস্ব কার্যকর শৈলী শিখে নিয়েছে, যা তার কাঠামোর উপর ভিত্তি করে তৈরি।”
প্রযুক্তির বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নতি টয়োটা সিইউই প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে নতুন প্রযুক্তি যোগ করা হয়েছে। প্রথম দিকের সংস্করণগুলো শুধুমাত্র শুটিং দক্ষতায় সীমাবদ্ধ ছিল। তবে পরবর্তী সংস্করণগুলোতে, বিশেষ করে সিইউই৪ এবং সিইউই৫-এ, রোবটটি বল তোলা, ড্রিবল করা এবং চলাফেরার ক্ষমতা অর্জন করে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি যোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা রোবটটিকে আরও দক্ষ করে তুলবে।
টয়োটা-র উদ্দেশ্য টয়োটা এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র একটি মজার উদ্ভাবন হিসেবে তৈরি করেনি, বরং এটি প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে তুলে ধরার জন্য তৈরি করেছে। কোম্পানিটি চায় তাদের রোবট মানুষের মতো আরও বাস্তব দক্ষতা অর্জন করুক, যেমন দৌড়ানো এবং ডাঙ্ক করা। এটি শুধুমাত্র একটি বিনোদনমূলক উদ্ভাবন নয়; এটি প্রযুক্তিগত দক্ষতারও একটি চমৎকার উদাহরণ। বিশ্বে প্রতিযোগিতা রোবটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায় প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। টয়োটা সিইউই প্রকল্পের মাধ্যমে জাপানের প্রযুক্তিগত ক্ষমতা তুলে ধরার চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশও রোবটিক্সে অনেক উন্নতি করেছে, তবে সিইউই-এর মতো একটি বাস্কেটবল খেলার রোবটের উদাহরণ বিরল। এটি প্রমাণ করে যে প্রযুক্তি কেবল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নয়, বিনোদনের ক্ষেত্রেও বিপ্লব ঘটাতে পারে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সিইউই প্রকল্পের প্রধান, তমোহিরো নমি, ভবিষ্যতে রোবটটিকে আরও দক্ষ করে তুলতে চান। তিনি চান এটি দৌড়াতে এবং ডাঙ্ক করতে সক্ষম হোক। তার ভাষায়, “আমি এমন একটি রোবট তৈরি করতে চাই যা মজার এবং কারিগরির শক্তি প্রদর্শন করে। যদি এটি মাইকেল জর্ডানের মতো ডাঙ্ক করতে পারে, তবে তা দেখতে দারুণ হবে।” টয়োটা’র সিইউই প্রকল্প কেবল প্রযুক্তি উদ্ভাবনেরই একটি উদাহরণ নয়, এটি প্রমাণ করে যে নিত্যনতুন ধারণা কিভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে। ভবিষ্যতে এই রোবটের আরও উন্নতি দেখতে পাওয়া গেলে, তা প্রযুক্তির অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক বিশাল মাইলফলক হবে।
২০ বছর পর সম্ভাব্য মোবাইল ফোনের ১৫টি উদ্ভুত প্রযুক্তি এবং তাদের ব্যবহার