বিটকয়েনের স্রষ্টা সাতোশি নাকামোতো—এই নামটি ২০০৮ সালে বিটকয়েনের শ্বেতপত্র প্রকাশের পর থেকে রহস্যময়ভাবে অদৃশ্য রয়েছে। সাতোশির আসল পরিচয় কখনো জানা যায়নি এবং অনেকেই চেষ্টা করেছেন এই ব্যক্তির সঠিক পরিচয় উন্মোচন করতে। বিটকয়েন আজকে একটি $১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ হয়ে উঠেছে, এবং মনে করা হয় সাতোশি নাকামোতো যদি এখনও তাদের ১.১ মিলিয়ন বিটকয়েন ধরে রাখেন, তবে তাদের সম্পদ প্রায় $৭০ বিলিয়ন ডলার।
সম্প্রতি, এইচবিও ডকুমেন্টারি নির্মাতা কালেন হোব্যাক একটি নতুন তথ্য সামনে এনেছেন, যেখানে তিনি পিটার টড নামক একজন বিটকয়েন কোর ডেভেলপারকে সাতোশি নাকামোতো হিসেবে সন্দেহ করেছেন। পিটার টড ২০১০ সাল থেকে বিটকয়েনের সঙ্গে জড়িত, তবে সাতোশির পরিচয় নিয়ে নানা রহস্যের কারণে তার নাম সামনে এসেছে। হোব্যাকের এই ধারণাটি “Money Electric: The Bitcoin Mystery” নামে একটি ডকুমেন্টারিতে উঠে এসেছে, যেখানে তিনি দাবি করেছেন যে সাতোশির নাম ব্যবহারের আসল কারণ সম্ভবত এমন একটি পরিচয় তৈরি করা, যা জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এতে বোঝানো হয়েছে যে, বিটকয়েনের পিছনে একজন পরিচিত ক্রিপ্টোগ্রাফার নয়, বরং একজন তরুণ ছিলেন, যিনি তখনও তার ফাইন আর্টস ডিগ্রি শেষ করছিলেন।
হোব্যাকের ধারণা হলো, ২০১০ সালে বিটকয়েন ফোরামে পিটার টডের নামে একটি পোস্ট ছিল একটি দুর্ঘটনাবশত প্রোফাইল থেকে করা, যা সাতোশির প্রকৃত পরিচয় আড়াল করতে একটি প্রচেষ্টা ছিল। টড ২০১৫ সালে একটি “replace-by-fee” ধারণা উপস্থাপন করেন, এবং হোব্যাকের মতে, এটি বহু বছর আগের পরিকল্পিত ধারণা হলেও এর বাস্তবায়নের জন্য একটি “কভার” দরকার ছিল।
হোব্যাক একটি চ্যাট লগ উল্লেখ করে বলেন, যেখানে টড নিজেকে “বিশ্বের শীর্ষ বিশেষজ্ঞ” হিসেবে দাবি করেছিলেন, যিনি কিভাবে বিটকয়েন ত্যাগ করবেন তা জানেন। তিনি বলেন, “আমি একটি ত্যাগ করেছি এবং সেটা হাতে করেই করেছি“—এটা হোব্যাক টডের সাতোশি হিসেবে স্বীকারোক্তি হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তবে টড এটি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, “এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।”
ডকুমেন্টারিটি প্রচারের আগে কিছু অংশ ফাঁস হয় এবং এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। টড তখন CoinDesk-এ দেয়া এক বিবৃতিতে সাতোশি নাকামোতো হওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন যে, হোব্যাক “আকস্মিকভাবে এমন তত্ত্বের দিকে ঝুঁকছেন যা কোনো ভিত্তি নেই।”
আরো পড়ুন: ব্লকচেইন টেকনোলজি কি? ব্লকচেইনের পুরো ইতিহাস
পিটার টড কে?
পিটার টড কানাডিয়ান ডেভেলপার, যিনি ২০১২ সাল থেকে বিটকয়েনের কোডে অবদান রাখছেন। তিনি নিজেকে “cryptochronomancer” হিসেবে পরিচয় দেন এবং বিটকয়েন ব্লকসাইজ যুদ্ধের সময় “ছোট ব্লকার” হিসেবে অবস্থান নেন। তিনি ব্লকসাইজ বাড়ানোর বিরোধিতা করেন, যেখানে তিনি এবং অন্যান্য ছোট ব্লকাররা বিটকয়েনের ১ মেগাবাইট সীমা বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। এর ফলস্বরূপ, বিটকয়েন ক্যাশ নামে একটি পৃথক ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি হয়।
টড “OpenTimestamps” এর প্রতিষ্ঠাতা, যা ব্লকচেইন টাইমস্ট্যাম্পিংয়ের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড ফর্ম্যাট প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে। তিনি আরও কাজ করেছেন বিভিন্ন বিটকয়েন ২.০ প্রোজেক্ট যেমন Counterparty, Mastercoin, এবং Colored Coins-এর উপর। এছাড়াও, ২০১৬ সালে এনএসএ (NSA) এর হুইসেলব্লোয়ার এডওয়ার্ড স্নোডেনের সাথে প্রাইভেসি কয়েন জিক্যাশ তৈরি করার সময় তিনি তার ব্যবহৃত কম্পিউটারটি ধ্বংস করেন।
তবে ২০১৯ সালে, টডকে প্রাইভেসি–টেক বিশেষজ্ঞ আইসিস লাভক্রাফ্ট যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। টড এর বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দায়ের করেন এবং ২০২০ সালে সেটি নিষ্পত্তি হয়।