ইউটাহর এক ভূতুড়ে শহরের কাছাকাছি সন্ধান পাওয়া এক রহস্যময় উদ্ভিদের জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের চমকে দিয়েছে। এই উদ্ভিদটি কোনো জীবিত বা বিলুপ্ত উদ্ভিদের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বলে মনে হচ্ছে। ৫৫ বছর আগে প্রথম এই উদ্ভিদটি আবিষ্কার করার পর থেকেই এটি গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। ১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো ওথনিওফাইটন ইলংগাটাম (Othniophyton elongatum) নামক এই উদ্ভিদটির জীবাশ্মের সন্ধান মেলে। উদ্ভিদটির নামকরণের অর্থই হলো “এলিয়েন প্ল্যান্ট।” প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল যে, এটি জিনসেং পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। সম্প্রতি ফ্লোরিডা মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির প্যালিওবোটানির কিউরেটর স্টিভেন ম্যানচেস্টার এবং তার দল এই জীবাশ্ম নিয়ে আরও গভীর গবেষণা চালিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওবোটানি সংগ্রহে একটি অজানা উদ্ভিদের জীবাশ্ম দেখতে গিয়ে তিনি এই গবেষণার সূত্রপাত করেন। উল্লেখ্য, এই জীবাশ্মটি ওথনিওফাইটন ইলংগাটাম-এর উদ্ভিদের জীবাশ্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল।
আরও পড়ুনঃ ৭২ মিলিয়ন বছর আগের স্তন্যপায়ীর ফসিল আবিষ্কার
গবেষণায় দেখা গেছে, উভয় জীবাশ্মই একই উদ্ভিদ প্রজাতির। উভয়টি পূর্ব ইউটাহর গ্রিন রিভার ফর্মেশন থেকে খনন করা হয়েছিল। ৪৭ মিলিয়ন বছর আগে এই এলাকাটি একটি বৃহৎ হ্রদীয় বাস্তুতন্ত্রের অংশ ছিল, যেখানে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির উপস্থিতি ছিল। আগ্নেয়গিরির ছাই এবং হ্রদের তলদেশের পলল উদ্ভিদ, সরীসৃপ, মাছ এবং পাখির দেহাবশেষ সংরক্ষণে সহায়ক ছিল। এই কারণে জীবাশ্মগুলো অত্যন্ত ভালোভাবে সংরক্ষিত হয়েছে।
প্রথম জীবাশ্মে শুধুমাত্র পাতা ছিল, কিন্তু দ্বিতীয় জীবাশ্মে পাতা ছাড়াও ফুল এবং ফল সংযুক্ত ছিল। এর ফলে উদ্ভিদের গঠন সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়। ১৯৬৯ সালে পাওয়া জীবাশ্মটির পাতার শিরার বিন্যাস জিনসেং পরিবারের উদ্ভিদের সঙ্গে মিল থাকার কারণে একে ওই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন জীবাশ্মের বিস্তারিত গঠন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি কোনোভাবেই জিনসেং পরিবারের সদস্য নয়।
গবেষণা চলাকালে নতুন মাইক্রোস্কোপি প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে জীবাশ্মের আরও বিস্তারিত গঠন পরীক্ষা করা হয়। ফলের ভেতরে ক্ষুদ্র বীজের মাইক্রো-ইম্প্রেশন এবং ফুলের পুরুষ প্রজনন অঙ্গ স্ট্যামেন দেখা যায়। বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, এই উদ্ভিদে ফল পরিপক্ক হওয়ার পরেও স্ট্যামেন বিচ্ছিন্ন হয় না, যা আধুনিক কোনো উদ্ভিদে দেখা যায় না।
স্টিভেন ম্যানচেস্টারের মতে, এই বৈশিষ্ট্যটি অত্যন্ত অদ্ভুত এবং আধুনিক উদ্ভিদের সঙ্গে এর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে বিলুপ্ত উদ্ভিদের পরিবারের সঙ্গেও এর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর ফলে বিজ্ঞানীরা এই উদ্ভিদটিকে একটি নতুন এবং সম্পূর্ণ অজানা উদ্ভিদ পরিবার হিসেবে বিবেচনা করছেন। গ্রিন রিভার ফর্মেশন থেকে পূর্বে অন্য উদ্ভিদের জীবাশ্ম যেমন বনানজাকার্পাম ফল এবং পালিবিনিয়া পাতার সন্ধান পাওয়া গেছে, যা বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে। এই এলাকাটি উদ্ভিদ জীবাশ্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত।
এই উদ্ভিদের রহস্য সমাধানে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে, নতুন প্রযুক্তি এবং আরও জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া গেলে এই উদ্ভিদ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে। এই উদ্ভিদের জীবাশ্ম গবেষণার মাধ্যমে আমরা অতীতের পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। নতুন এই তথ্যগুলো শুধু উদ্ভিদবিদ্যায় নয়, বরং পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের ইতিহাস বুঝতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।