তথ্য সংরক্ষণের প্রযুক্তিতে উন্নতির জন্য গবেষকরা ৩ডি ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন। এই মেমোরি প্রযুক্তি স্ট্যাক করা সেল ব্যবহার করে জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা উন্নত প্লাজমা প্রক্রিয়া ব্যবহার করে দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে গভীর ছিদ্র তৈরির একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। রাসায়নিক গঠনে পরিবর্তন এনে তারা এচিং গতি দ্বিগুণ করেছেন, যা ভবিষ্যতে আরও উচ্চ-ক্ষমতার মেমোরি স্টোরেজ তৈরির পথ সুগম করবে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে ছোট আকারের ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর মধ্যে বিশাল পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। তাই ডিজিটাল মেমোরি তৈরির পদ্ধতি উন্নত করা এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা পরমাণু পর্যায়ে মেমোরি তৈরির নতুন পদ্ধতি অনুসন্ধান করছেন, যা আগামী দিনে আরও ঘনত্বপূর্ণ স্টোরেজ গঠনে সহায়তা করবে।
৩ডি ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরি একটি বিশেষ প্রযুক্তি, যেখানে তথ্য সংরক্ষণের জন্য একাধিক স্তরে কোষ স্থাপন করা হয়। সাধারণ ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরির ক্ষেত্রে তথ্য একক স্তরে রাখা হয়, তবে ৩ডি ন্যান্ড প্রযুক্তি বহুতল ভবনের মতো কোষগুলোকে একের পর এক স্তরে সাজিয়ে তথ্য সংরক্ষণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এই মেমোরির উৎপাদন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো, সিলিকন অক্সাইড ও সিলিকন নাইট্রাইড স্তরে সুনির্দিষ্ট গহ্বর তৈরি করা। এটি প্লাজমার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, যেখানে আয়নিত গ্যাস পদার্থের সঙ্গে ক্রিয়া করে কাঙ্ক্ষিত ছিদ্র তৈরি করে।
এই গহ্বরগুলোর নির্ভুলতা বৃদ্ধি করতে গবেষকরা নানান রাসায়নিক পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্লাজমা ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র কিন্তু গভীর ছিদ্র তৈরি করা সহজ হয়। তবে প্রচলিত প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। নতুন গবেষণায় ক্রায়ো এচিং নামে একটি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় ও নির্দিষ্ট গ্যাস সংমিশ্রণে এচিং গতি বাড়ানো হয়। গবেষকরা আলাদা আলাদা হাইড্রোজেন ও ফ্লোরিন গ্যাস ব্যবহারের পরিবর্তে হাইড্রোজেন ফ্লোরাইড গ্যাস ব্যবহার করেছেন, যা এচিং প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে সহায়তা করেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, হাইড্রোজেন ফ্লোরাইড গ্যাস ব্যবহারের ফলে সিলিকন নাইট্রাইড ও সিলিকন অক্সাইড স্তরের এচিং হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সাধারণত, এচিং হার প্রতি মিনিটে ৩১০ ন্যানোমিটার থাকলেও নতুন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি বেড়ে ৬৪০ ন্যানোমিটার হয়েছে।
অন্য একটি পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা ফসফরাস ট্রাইফ্লোরাইড ব্যবহার করে সিলিকন ডাই অক্সাইড স্তরের এচিং হার চারগুণ পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও এটি সিলিকন নাইট্রাইডের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম কার্যকর ছিল, তবুও এটি এচিং প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

গবেষকরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক যৌগ, অ্যামোনিয়াম ফ্লোরোসিলিকেট, পর্যবেক্ষণ করেছেন। এটি এচিং প্রক্রিয়ার সময় গঠিত হয় এবং এচিং গতি কমিয়ে দিতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, পানি যোগ করলে এই যৌগের বন্ধন দুর্বল হয়ে যায়, ফলে এচিং প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়। এর ফলে, গবেষকরা আরও কার্যকর ও নিয়ন্ত্রিত এচিং প্রক্রিয়ার পথ খুঁজে পেয়েছেন।
এই গবেষণাটি কেবল ৩ডি ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরির উৎপাদন উন্নত করতেই সহায়ক হয়নি, বরং এটি মাইক্রোইলেকট্রনিক্স শিল্পের উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গবেষণায় পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে শিল্প ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা একসঙ্গে কাজ করেছেন। এতে পরীক্ষামূলক ও তাত্ত্বিক গবেষণার সমন্বয় ঘটানো সম্ভব হয়েছে।
প্রধান গবেষকরা আশা করছেন, এই গবেষণা আধুনিক সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আরও উন্নতি সাধন করবে। প্লাজমা প্রযুক্তির উন্নত ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যতে আরও ছোট ও শক্তিশালী চিপ তৈরি করা সম্ভব হবে। তথ্য সংরক্ষণের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটিং প্রযুক্তির বিস্তারের ফলে। এই গবেষণার মাধ্যমে উন্নত ৩ডি ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরি তৈরির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে, যা ভবিষ্যতে তথ্য সংরক্ষণের জন্য আরও কার্যকর সমাধান প্রদান করবে।
মেমোরি প্রযুক্তিতে নতুন উদ্ভাবন : এবার উচ্চগতির সঙ্গে বজায় থাকবে মেমোরির কার্যকারিতাও