সাম্প্রতিক সময়ে স্পেসএক্স প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। তাদের বৃহৎ স্টারশিপ রকেটের পঞ্চম পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের পরে মাত্র সাত মিনিটের মধ্যেই সুপার হেভি বুস্টার সফলভাবে ধরা পড়েছে লঞ্চ প্যাডে স্থাপিত যান্ত্রিক বাহু, যা “চপস্টিকস” নামে পরিচিত। এই সাফল্যটি মানবজাতির চাঁদ ও মঙ্গল অভিযানের পথে আরও এক ধাপ অগ্রসর করেছে। এমন একটি সময়ে, যখন দ্রুত পুনরায় ব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে, এই অর্জন স্পেসএক্সকে একটি বিশেষ অবস্থানে নিয়ে গেছে।
স্টারশিপ রকেটের এই পঞ্চম পরীক্ষামূলক ফ্লাইটটি শুরু হয়েছিল ৭:২৫ AM সেন্ট্রাল ডে লাইট টাইমে (১২:২৫ ইউটিসি) দক্ষিণ টেক্সাসের বোকার চিকা থেকে। এই রকেটটি প্রায় ৩৯৮ ফুট লম্বা এবং এর সুপার হেভি বুস্টার স্টেজের মধ্যে ৩৩টি র্যাপটর ইঞ্জিন রয়েছে। প্রতিটি ইঞ্জিন প্রায় ১৭ মিলিয়ন পাউন্ড থ্রাস্ট তৈরি করে এবং প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২০ টন মিথেন এবং তরল অক্সিজেন খরচ করে। নাসার স্যাটার্ন V রকেটের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তি ধারণকারী এই রকেটটি দ্রুতগতিতে আকাশের দিকে উঠতে থাকে এবং প্রায় ৩,৩০০ মাইল প্রতি ঘন্টায় গতিতে পৌঁছে যায়।
আরো পড়ুনঃ বিশ্বের প্রথম বিলাসবহুল মহাকাশ স্টেশন, দেখতে প্রায় একটি ফাইভ স্টার হোটেলের মতো
উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণ পর, স্পেসএক্সের সুপার হেভি বুস্টার তার ইঞ্জিনগুলির সাহায্যে পথ পরিবর্তন করে উপকূলের দিকে ফিরে আসে। তখন রকেটটি ৫৯ মাইল উচ্চতায় ছিল। রকেটটি তার ১৩টি ইঞ্জিন পুনরায় চালু করে, যা রকেটটিকে ধীরে ধীরে নীচের দিকে নামতে সাহায্য করে। স্পেসএক্সের লঞ্চ প্যাডের ‘মেকাজিলা’ যন্ত্রটি রকেটটিকে নিখুঁতভাবে দুইটি যান্ত্রিক বাহুর মধ্যে ধরে ফেলে, যার নাম দেওয়া হয়েছে “চপস্টিকস”। এই বিরল মুহূর্তটি শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতার নয়, বরং মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দ্রুত পুনরায় ব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরির একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
Liftoff of Starship! pic.twitter.com/WyNRN1fLbd
— SpaceX (@SpaceX) October 13, 2024
স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক টুইটারে এই প্রযুক্তির সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি জানান যে, সুপার হেভি বুস্টারটির ইঞ্জিনের কিছু অংশ তাপের কারণে বিকৃত হলেও, এটি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করার জন্য কোনো বড় বাধা নয়। তিনি আরও জানান, বুস্টারটি পরীক্ষার পর পুনরায় উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত, এবং এটি এক ঘন্টার মধ্যে পুনরায় উড়ানোর জন্য সক্ষম। এই প্রযুক্তি মহাকাশযাত্রার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে, যেখানে একাধিক রকেট উৎক্ষেপণ ও পুনরায় ব্যবহার অত্যন্ত দ্রুত সম্ভব হবে।
স্পেসএক্স এই সাফল্যের মাধ্যমে চাঁদ এবং মঙ্গলের অভিযানের জন্য স্টারশিপ প্রকল্পকে আরও শক্তিশালী করছে। মহাকাশের বাণিজ্যিক ব্যবহারে স্পেসএক্স এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। তাদের লক্ষ্য হলো, স্টারশিপ রকেটকে প্রতি ঘন্টায় পুনরায় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা, যা মহাকাশ ভ্রমণকে আরও সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য করবে।
এই সাফল্য স্পেসএক্সকে আরও জোরালোভাবে তাদের চাঁদ ও মঙ্গল অভিযানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যা শুধু মহাকাশ প্রযুক্তির উন্নয়ন নয় বরং মানবজাতির মহাকাশে টিকে থাকার নতুন সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করছে।
স্পেসএক্সের এই সাফল্য বৈজ্ঞানিক মহলে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে। এলন মাস্কের মহাকাশ নিয়ে যে বৃহৎ পরিকল্পনা ছিল, তা ধীরে ধীরে বাস্তব রূপ নিচ্ছে। প্রতিটি ধাপে তারা মহাকাশ যাত্রার ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তিগত সাফল্য অর্জন করছে, যা মানবজাতিকে এক নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
মার্ক জুকারবার্গের মেটাভার্স নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত: মেটাভার্স অবশেষে জীবনের চিহ্ন দেখাচ্ছে