গুগল ক্রোম এবং মাইক্রোসফট উইন্ডোজের মধ্যে প্রতিযোগিতা দীর্ঘদিন ধরে প্রযুক্তি জগতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। গুগল ক্রোম তার ব্যবহারকারীদের ধরে রাখতে নতুন আপডেট নিয়ে আসে, যা মাইক্রোসফট উইন্ডোজের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২০২৫ সালের শুরুতেই ক্রোমের নতুন আপডেট মাইক্রোসফটের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। গুগল ক্রোম বর্তমান বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ক্রোমের বাজারে শেয়ার ৬৬.৮৮%। এটি গত এক বছরে ১.৬৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, মাইক্রোসফট এজের বাজার শেয়ার মাত্র ১৩%, যা একই সময়ে ২% বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এজের বৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো, ক্রোমের সাথে প্রতিযোগিতা করার মতো পর্যায়ে এখনো এটি পৌঁছায়নি।
মাইক্রোসফট তাদের এজ ব্রাউজারের প্রচারের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। উইন্ডোজ ১১-এ ক্রোম ইনস্টল করার সময় ব্যবহারকারীদের সামনে বিজ্ঞাপন দেখানো বা নোটিফিকেশন দিয়ে এজ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করার মতো পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবুও, এই প্রচেষ্টা ব্যবহারকারীদের ক্রোম থেকে সরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেক ব্যবহারকারী এই ধরনের বিজ্ঞাপনকে বিরক্তিকর বলে উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুনঃ কেন গুগল ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি হতে যাচ্ছে ?
নিরাপত্তার দিক থেকে মাইক্রোসফট এজ কিছু ব্যবহারকারীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, বিশেষত কর্পোরেট পরিবেশে। মাইক্রোসফট আশা করে যে, কর্মক্ষেত্রে যারা এজ ব্যবহার করছেন, তারা হয়তো ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যও এটি পছন্দ করবেন। তবে ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ এখনো ক্রোমের উপর নির্ভর করছে, কারণ এটি ফিচার, পারফরম্যান্স এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতায় এগিয়ে রয়েছে।
গুগল ক্রোমের ব্যবহারকারীদের ধরে রাখার জন্য একাধিক কৌশল রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত আপডেট, উন্নত ফিচার এবং দ্রুত ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা। ক্রোমের ব্যবহারকারীরা এর ফিচারের প্রতি এতটাই অভ্যস্ত যে তারা ব্রাউজার পরিবর্তন করতে চান না। উদাহরণস্বরূপ, ক্রোমের একাধিক এক্সটেনশন এবং ব্যবহারকারীর ডেটা সিঙ্ক করার ক্ষমতা এটি আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে।
অন্যদিকে, গুগল ক্রোমের উপর বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা রয়েছে, বিশেষত গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো। গুগল ট্র্যাকিং কুকিজ নিয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে। তবে ব্যবহারকারীরা সাধারণত ফিচার এবং পারফরম্যান্সকে গোপনীয়তার তুলনায় বেশি গুরুত্ব দেন।
২০২৫ সালে গুগলকে একটি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টিট্রাস্ট ক্যাম্পেইন ক্রোমের উপর নজর রাখছে। গুগলকে হয়তো তার ব্রাউজার বিক্রি করতে বাধ্য করা হতে পারে। তবে গুগলের ব্যবহারকারীদের প্রতি আত্মবিশ্বাস রয়েছে, কারণ তারা তাদের ব্রাউজারের ফিচারের উপর নির্ভরশীল।
মাইক্রোসফট এজ এবং গুগল ক্রোমের প্রতিযোগিতা প্রযুক্তি জগতকে আরও উন্নত করার জন্য ভূমিকা রাখছে। যদিও এজ তার নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের জন্য কিছু ব্যবহারকারীকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে, তবে ক্রোমের ফিচার এবং পারফরম্যান্স এটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে রাখতে সাহায্য করছে। ইউরোপীয় কমিশন মাইক্রোসফট এজকে ডিজিটাল মার্কেট অ্যাক্ট (ডিএমএ) এর আওতায় আনতে এবং মাইক্রোসফটকে একটি গেটকিপার হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এটি মাইক্রোসফটের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
সামগ্রিকভাবে, গুগল ক্রোম এবং মাইক্রোসফট এজের মধ্যে প্রতিযোগিতা ব্যবহারকারীদের আরও ভালো সেবা প্রদান করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি প্রযুক্তি জগতকে ক্রমাগত উন্নত করার জন্য উৎসাহিত করে।