দুটি কোম্পানি জোবি এভিয়েশন ও ভার্জিন আটলান্টিক একসঙ্গে মিলে যুক্তরাজ্যে তৈরি করেছে বৈদ্যুতিক এয়ার ট্যাক্সি । জোবি এভিয়েশন ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশে তাদের eVTOL (ইলেকট্রিক ভার্টিকাল টেকঅফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং) বিমান নিয়ে কাজ করছে, এবং যুক্তরাজ্য তাদের সপ্তম সম্ভাব্য বাজার হতে চলেছে এটি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, যাত্রীরা ব্যস্ত সড়ক পথ এড়িয়ে খুব কম সময়ের মধ্যে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। ভার্জিন আটলান্টিকের সাথে এই অংশীদারিত্ব যুক্তরাজ্যের প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীদের দ্রুত পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর এবং ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই সেবার সুবিধা পাওয়া যাবে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে।
জোবি এখনও যুক্তরাজ্যে এই সেবা চালুর নির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করেনি। তবে, তারা বলেছে যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) এবং যুক্তরাষ্ট্রে সেবা চালুর পরই যুক্তরাজ্যে কাজ শুরু হবে। বর্তমানে, তারা দুবাইতে তাদের প্রথম eVTOL বিমান সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২৫ সালের মাঝা মাঝি বা ২০২৫ এর শেষের দিকে দুবাইতে পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন হতে পারে। এছাড়া, নিউ ইয়র্ক বা লস অ্যাঞ্জেলসে ২০২৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে সেবা চালুর পরিকল্পনা ছিল, তবে নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন পেতে কিছুটা দেরি হতে পারে।
যুক্তরাজ্যে এই পরিষেবা চালুর আগে জোবিকে যুক্তরাজ্যের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (CAA) থেকে অনুমোদন নিতে হবে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে তারা এই অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিল। এছাড়া, জোবি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) থেকে টাইপ সার্টিফিকেশন পাওয়ার চেষ্টা করছে, যা বিমানের ডিজাইন অনুমোদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, জোবি যুক্তরাজ্যে ভার্জিন আটলান্টিকের একচেটিয়া বিমান পরিবহন অংশীদার হবে। এর অর্থ হলো, ভার্জিন আটলান্টিকের যাত্রীরা সরাসরি জোবির এয়ার ট্যাক্সি ব্যবহার করতে পারবে। জোবির সাথে ডেল্টা এয়ার লাইন্সের আগেও একটি পারস্পরিক একচেটিয়া চুক্তি হয়েছিল, যা যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর। যেহেতু ডেল্টা ভার্জিন আটলান্টিকের প্রায় অর্ধেক মালিক, তাই ভার্জিনের সাথে চুক্তিটি এই আগের চুক্তির অধীনে পড়বে।
এই সেবার মাধ্যমে যাত্রীরা স্থানীয় ভার্টিপোর্ট থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারবে, যা তাদের জন্য সময় ও সুবিধার দিক থেকে বড় পরিবর্তন আনবে। এই নতুন সেবার অধীনে, যাত্রীরা ভার্জিন আটলান্টিক অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সহজেই তাদের টিকিট বুক করতে পারবে।
eVTOL বিমানগুলোকে চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট অবকাঠামো প্রয়োজন, যা ‘ভার্টিপোর্ট’ নামে পরিচিত। ভার্টিপোর্ট হলো এমন জায়গা যেখানে eVTOL বিমান ওঠানামা করতে পারে এবং চার্জ করা হয়। এই সেবার মাধ্যমে শহরের ব্যস্ত রাস্তা এড়িয়ে অল্প সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছানো সম্ভব হবে। যেমন, সাধারণত লিডস থেকে ম্যানচেস্টারে যেতে গাড়িতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে, কিন্তু এই এয়ার ট্যাক্সি মাত্র ১৫ মিনিটে এই পথ অতিক্রম করতে পারবে।
বৈদ্যুতিক এয়ার ট্যাক্সি বাজারে প্রবেশের জন্য বড় বড় এয়ারলাইন্সের সাথে অংশীদারিত্ব করা অনেক কোম্পানির কৌশল। জোবির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, আর্চার এভিয়েশন, ইউনাইটেড এবং সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের সাথে অনুরূপ চুক্তি করেছে। এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে এ ধরনের অংশীদারিত্বের ফলে বিনিয়োগের সুযোগও তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, ডেল্টা ইতোমধ্যেই জোবিতে ৬০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। তবে, ভার্জিন আটলান্টিকের সাথে জোবির চুক্তিতে কোনো বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত নেই।
ভার্জিন জানিয়েছে যে তারা যুক্তরাজ্যে জোবির সেবা জনপ্রিয় করতে প্রচারণা চালাবে, নিয়ন্ত্রকদের সাথে কাজ করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলিতে অবকাঠামো গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। জোবির eVTOL বিমানটি একজন পাইলট, চারজন যাত্রী এবং কিছু লাগেজ বহন করতে পারবে। এটি প্রতি ঘণ্টায় ২০০ মাইল গতিতে উড়তে সক্ষম, যা প্রচলিত যানবাহনের তুলনায় অনেক দ্রুত।
জোবি শুধু যুক্তরাজ্যেই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়াসহ মোট সাতটি দেশে তাদের সেবা চালুর পরিকল্পনা করছে। জোবি এভিয়েশন ও ভার্জিন আটলান্টিকের অংশীদারিত্ব যুক্তরাজ্যে বৈদ্যুতিক এয়ার ট্যাক্সি সেবা চালুর পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই সেবা চালু হলে শহরের যানজট কমবে এবং বিমানবন্দর সংযোগ আরও সহজ হবে।
তবে, এই পরিষেবা পুরোপুরি চালু হতে হলে বেশ কিছু বাধা অতিক্রম করতে হবে। নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন, অবকাঠামো নির্মাণ, এবং যাত্রীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ। যদি এই পরিকল্পনা সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে আরও শহরে এয়ার ট্যাক্সি চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।
চীন এক অত্যাধুনিক চিপ তৈরি করেছে যা ভবিষ্যৎ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারে