ইউরোপের একটি পরীক্ষামূলক কেন্দ্র সম্প্রতি হাইপারলুপ ভ্যাকুয়াম ক্যাপসুলের দীর্ঘতম যাত্রা সম্পন্ন করেছে, যা উচ্চগতির পরিবহনের ক্ষেত্রে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। এই উদ্যোগটি অনেক দিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক এই সফলতা প্রমাণ করে যে, এটি শুধুমাত্র একটি ধারণা নয়, বরং বাস্তবায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
লিমিটলেস প্রকল্পটি, যা “লিনিয়ার ইনডাকশন মোটর ড্রাইভ ফর ট্র্যাকশন অ্যান্ড লেভিটেশন ইন সাসটেইনেবল হাইপারলুপ সিস্টেমস” নামে পরিচিত, একটি ১:১২ স্কেলের মডেল। এর টিউবের ব্যাস মাত্র ৪০ সেন্টিমিটার (১৫.৭ ইঞ্চি) এবং ট্র্যাকের পরিধি ১২৫.৬ মিটার (৪১২ ফুট)। এই প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যে ৮২টি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ইলন মাস্ক কি চালু করতে যাচ্ছে এক্সমেইল (XMAIL)?
একটি পরীক্ষায় ক্যাপসুলটি ভ্যাকুয়াম টিউবের মধ্যে ১১.৮ কিলোমিটার (৭.৩ মাইল) পথ অতিক্রম করেছে, যা বর্তমানে ভ্যাকুয়াম পরিবহনের দীর্ঘতম দূরত্বের রেকর্ড। এ সময় ক্যাপসুলের গতি ছিল ৪০.৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (২৫.৩ মাইল প্রতি ঘণ্টা)। যদিও এই গতি খুব বেশি মনে না হতে পারে, তবে মডেলটি যদি পূর্ণ স্কেলে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি ১৪১.৬ কিলোমিটার (৮৮ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে এবং সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ৪৮৮.২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৩০৩.৪ মাইল প্রতি ঘণ্টা)। তুলনামূলকভাবে, চীন এয়ারস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (CASIC) সম্প্রতি একটি পরীক্ষায় ৬২৩ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৩৮৭ মাইল প্রতি ঘণ্টা) গতি অর্জন করেছিল। তবে এটি স্বল্প দূরত্বের পরীক্ষা ছিল, যেখানে লিমিটলেস প্রকল্পটি দীর্ঘ দূরত্বে স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করছে।
হাইপারলুপের মূল ধারণা প্রথমে ইলন মাস্ক ২০১৩ সালে একটি শ্বেতপত্রে উপস্থাপন করেছিলেন। এই প্রযুক্তি ভ্যাকুয়াম-সিলড টিউবের মধ্যে উচ্চ গতিতে চলা ট্রেন-সদৃশ যানবাহনের ধারণা দেয়, যা চুম্বকীয় লেভিটেশন এবং অতি-নিম্ন ঘর্ষণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই সিস্টেমে বায়ুচাপ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি থাকে, ফলে বায়ু প্রতিরোধ ও অন্যান্য বাহ্যিক প্রতিকূলতা কার্যত দূর হয়ে যায়। এর ফলে, যানবাহনগুলি প্রতি ঘণ্টায় ১,২০০ কিলোমিটার (৭৪৬ মাইল) গতিতে চলতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
ইউরোপের লিমিটলেস প্রকল্পের সফল পরীক্ষা দেখিয়েছে যে, হাইপারলুপ প্রযুক্তি এখনও বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। যদিও এটি পূর্ণ স্কেলে বাস্তবায়নের আগে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। চুম্বকীয় লেভিটেশন প্রযুক্তি, টিউবের নকশা এবং শক্তি ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলি এখনও পরীক্ষা এবং উন্নত করার প্রয়োজন।
হাইপারলুপ প্রকল্পটি শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি পরিবেশগত এবং আর্থিক ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। উচ্চ গতির এই পরিবহন ব্যবস্থা যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি দূষণ কমাতে সাহায্য করবে এবং জ্বালানি ব্যয়ও অনেকাংশে কমাবে। এটি ভ্রমণের সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে, যা দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রমের ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা। তবে, এর উন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন এখনও অনেক দূরের পথ। প্রকল্পটি পূর্ণ স্কেলে চালু করতে প্রচুর অর্থায়ন, প্রযুক্তিগত সমাধান এবং সরকারি নীতিগত সমর্থন প্রয়োজন। তবুও, ইউরোপের এই সাফল্য এবং অন্যান্য দেশের পরীক্ষাগুলি প্রমাণ করে যে, হাইপারলুপের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
এই প্রযুক্তি যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি ট্রান্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রির মুখ পাল্টে দিতে সক্ষম হবে। এটি কেবল দূরত্ব কমাবে না, বরং ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও পুরোপুরি পরিবর্তন করবে।
ইলন মাস্ক এর এক্স এবার নতুন এআই ছবি জেনারেটর টুল নিয়ে এসেছে “অরোরা”