বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ এবং পাখি দেখার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে এক নতুন দিগন্ত, যা আমাদের অভিজ্ঞতাকে করেছে আরও উন্নত এবং সহজ। সম্প্রতি অস্ট্রিয়ার সুপরিচিত অপটিক্স কোম্পানি Swarovski Optik তাদের সর্বশেষ উদ্ভাবন “AX Visio” বাইনোকুলার প্রকাশ করেছে। এই বাইনোকুলারগুলোতে রয়েছে অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), যা আমাদের পাখি বা অন্য প্রাণী দেখার অভিজ্ঞতাকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এই প্রবন্ধে আমরা AX Visio বাইনোকুলার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, যা কিভাবে এই প্রযুক্তি কাজ করে এবং কিভাবে এটি প্রাকৃতিক দর্শনকে সহজ করে তোলে, সে সম্পর্কে জানবো।
বিশ্বের প্রথম এআই চালিত বাইনোকুলার: AX Visio
Swarovski Optik এর AX Visio বাইনোকুলার হলো বিশ্বের প্রথম AI-চালিত বাইনোকুলার। এতে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রাণী সনাক্ত করার ক্ষমতা এবং জিপিএস ডেটা দ্বারা জায়গা চিহ্নিত করার সুবিধা। AX Visio বাইনোকুলারগুলোর মধ্যে বিল্ট-ইন ক্যামেরা রয়েছে, যা ৯,০০০ এরও বেশি পাখি প্রজাতি সনাক্ত করতে পারে এবং এটি বাস্তব সময়ে প্রাণী সনাক্ত করে। শুধু পাখি নয়, কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং কীটপতঙ্গ সনাক্ত করার ক্ষমতাও রয়েছে এর মধ্যে, যা এটিকে বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণের জন্য অন্যতম একটি প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে তৈরি করেছে।
এই বাইনোকুলারগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর সহজ ব্যবহারযোগ্যতা। প্রযুক্তি নিয়ে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রাথমিক যে সংকোচ থাকতে পারে, তা AX Visio দূর করতে সফল হয়েছে। এর মোড-সিলেকশন চাকা ব্যবহার করে সহজেই বিভিন্ন মোডের মধ্যে পরিবর্তন করা যায়। এতে পাখি সনাক্তকরণ, স্তন্যপায়ী প্রাণী সনাক্তকরণ, প্রজাপতি এবং ড্রাগনফ্লাই সনাক্তকরণ, এবং ফটোগ্রাফি মোড রয়েছে। এই মোডগুলোর সাহায্যে এটি পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী, প্রজাপতি, এবং ড্রাগনফ্লাই সনাক্ত করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ এবার ঘুম হবে নিশ্চিত: চমৎকার একটি গ্যাজেট সুন্দর ঘুমানোর জন্য
পাখি সনাক্তকরণের ক্ষমতা
AX Visio বাইনোকুলার পাখি সনাক্তকরণের জন্য কর্নেল ল্যাব অফ অর্নিথোলজির Merlin Bird ID এর বিশাল পাখির ডাটাবেস ব্যবহার করে। স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং কীটপতঙ্গ সনাক্ত করার জন্য Sunbird ডাটাবেস ব্যবহার করা হয়। যদিও স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং উড়ন্ত কীটপতঙ্গ কেবলমাত্র ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাতে সনাক্ত করা যায়, পাখি সনাক্তকরণের সফটওয়্যারটি বিশ্বের যেকোনো স্থানে কাজ করে, এমনকি অ্যান্টার্কটিকাতেও।
GPS এবং অবস্থান চিহ্নিতকরণ ক্ষমতা
এই বাইনোকুলারের আরেকটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর GPS ব্যবহার করে সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করার ক্ষমতা। এতে বিল্ট-ইন GPS সেন্সর রয়েছে, যা সফটওয়্যারকে জানায় আপনি পৃথিবীর কোন স্থানে আছেন এবং কোন প্রাণীটি দেখছেন। এর ফলে সফটওয়্যারটি সহজেই অনুমান করতে পারে আপনি সম্ভবত কোন প্রজাতির দিকে তাকিয়ে আছেন। এটি বিশেষ করে তখন সহায়ক, যখন আপনি এমন একটি প্রাণী দেখেন যা আপনার চেনা নেই।
উচ্চ পারফরম্যান্স অপটিক্স
AX Visio বাইনোকুলারগুলো উচ্চ পারফরম্যান্স বিশিষ্ট অ্যানালগ লং-রেঞ্জ অপটিক্সের সাথে তৈরি, যা ১,০০০ মিটারে ১১২ মিটার পর্যন্ত ভিউ দেয়। এতে ১০ গুণ ম্যাগনিফিকেশন এবং ৩২ মিলিমিটার অবজেক্টিভ লেন্স রয়েছে। এর বিল্ট-ইন ক্যামেরা ১৩ মেগাপিক্সেল ফটো এবং ১০৮০পি ভিডিও ধারণ করতে পারে। এটি ব্যবহারকারীদের তাদের পর্যবেক্ষণ সরাসরি ধারণ করতে এবং নথিভুক্ত করতে সহায়তা করে।
প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণের সময়, AX Visio বাইনোকুলারের ব্যবহার বেশ সহজ। পাখি সনাক্তকরণের সময় এটি পাখিকে সঠিকভাবে ফোকাস করে এবং লাল রঙের একটি বৃত্ত প্রদর্শন করে। যদি পাখিটি বৃত্তের মধ্যে পুরোপুরি থাকে এবং সঠিক ফোকাসে থাকে, তবে একটি বোতাম চেপে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পাখির নাম স্ক্রিনে প্রদর্শিত হয়। এতে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক সনাক্তকরণ সম্ভব হয়, যদিও কিছু সফটওয়্যার আপডেট ইনস্টল করা বাইনোকুলারে এটি ৮০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত সঠিকতা দেয়।
এই বাইনোকুলারে প্রতি বছরে কয়েকটি ফার্মওয়্যার আপডেট আসে, যা ব্লুটুথের মাধ্যমে ডিভাইসে লোড হয়। আগস্টে একটি সাম্প্রতিক আপডেট ভিডিও স্ট্যাবিলাইজেশন যুক্ত করেছে। ভবিষ্যতে আরও আপডেটের মাধ্যমে সনাক্তকরণ সিস্টেমের নির্ভুলতা বাড়ানো এবং আরও প্রজাতির সনাক্তকরণের তথ্য যুক্ত করা হবে।
আরও পড়ুনঃ এআই (AI) স্মার্ট রিং: আপনার দৈনন্দিন কাজের ডিজিটাল সঙ্গী
এটি শুধুমাত্র পাখি সনাক্তকরণেই সীমাবদ্ধ নয়; AX Visio বাইনোকুলারগুলোর আরও কিছু অনন্য ফিচার রয়েছে যা এটিকে বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণের জন্য আরও উপযোগী করে তুলেছে। এর মধ্যে একটি হলো “শেয়ার ডিসকভারিজ” ফাংশন, যা ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট প্রাণীর অবস্থান শেয়ার করতে দেয়। এটি খুবই কার্যকর, বিশেষত যখন একাধিক ব্যক্তি একই স্থান থেকে প্রাণী পর্যবেক্ষণ করতে চায়। একজন ব্যবহারকারী প্রাণীর অবস্থান পিন করতে পারে এবং অন্য কেউ বাইনোকুলার হাতে নিয়ে স্ক্রিনের নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রাণীর স্থানে পৌঁছাতে পারে।
AX Visio বাইনোকুলারগুলোর সাহায্যে ছবি এবং ভিডিও ধারণ করা যায়। এগুলো Swarovski Optik Outdoor App এর মাধ্যমে IOS এবং Android ডিভাইসে দেখা যায়। এই অ্যাপ্লিকেশনে সনাক্তকৃত প্রাণীর তথ্য মেটাডেটায় সংরক্ষণ করা হয়। তবে, যখন ছবি আপনার মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করা হয়, তখন শুধুমাত্র অবস্থান সংক্রান্ত ডেটা অ্যাক্সেস করা যায়, সনাক্তকরণের তথ্য পাওয়া যায় না। ছবি এবং ভিডিওর মান বেশ ভাল, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার মতো যথেষ্ট। যদিও এটি পেশাদার মানের ফটোগ্রাফি সরবরাহ করতে পারে না, তবুও ছোট প্রিন্ট তৈরি করার জন্য বা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য যথেষ্ট।
এমন একটি ডিভাইস ব্যবহার করার সুবিধা হলো, আপনি একসাথে আপনার দেখা প্রাণী সনাক্ত করতে এবং তার ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে পারবেন, যা আপনাকে প্রয়োজনীয় মুহূর্তগুলো মিস না করেই দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করবে। AX Visio বাইনোকুলারগুলো শুধুমাত্র বন্যপ্রাণী সনাক্তকরণ এবং নথিভুক্ত করাই নয়, এটি আপনাকে প্রকৃতির সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করতে এবং সেই মুহূর্তগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে সহায়তা করে।
Swarovski Optik এর AX Visio বাইনোকুলারগুলো প্রযুক্তির সাহায্যে বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণকে আরও সহজ এবং উপভোগ্য করে তুলেছে। যদিও এটির দাম বেশ উচ্চ (প্রায় ৪,৬০০ ইউরো বা ৫,০০০ ডলারের বেশি), তবে এটি বন্যপ্রাণী এবং পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্য একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা প্রদান করতে সক্ষম। এর মাধ্যমে আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যকে আরও কাছ থেকে উপভোগ করতে পারবেন।
এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আমরা AX Visio বাইনোকুলার এবং এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। এই ধরনের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি আমাদের প্রাকৃতিক দর্শনকে আরও উন্নত করেছে এবং আমাদের পৃথিবীর বন্যপ্রাণী সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ দিয়েছে। Swarovski Optik এর এই ডিভাইসটি বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষকদের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করেছে, যেখানে প্রযুক্তি এবং প্রকৃতি একসাথে মিলিত হয়েছে।
ফেসবুক মেটা (Meta) কোম্পানী নিয়ে এসেছে আইরন ম্যান গ্লাস “অরিয়ন এআর”