বিজ্ঞানীরা এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন যা প্রচলিত হিট পাম্পের তুলনায় আরও বেশি পরিবেশবান্ধব এবং কার্যকর। এই নতুন প্রযুক্তির নাম ম্যাগনেটোক্যালরিক হিট পাম্প। এটি প্রচলিত ভ্যাপার-কমপ্রেশন হিট পাম্পের মতোই কাজ করতে পারে, তবে এতে কোনো ক্ষতিকর গ্যাস বা রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা হয় না। পরিবেশের ক্ষতি কমাতে এই প্রযুক্তি একটি বড় পরিবর্তন এনে দেবে। ভ্যাপার-কমপ্রেশন হিট পাম্প অনেক বছর ধরে তাপ এবং শীতলীকরণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেন্ট গ্যাসগুলো বাতাসে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করে এবং কার্বন নিঃসরণ বাড়ায়। এমনকি এই গ্যাসগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। এই সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষকরা এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন যা রেফ্রিজারেন্ট ছাড়াই কাজ করতে পারে। ম্যাগনেটোক্যালরিক হিট পাম্প এই সমস্যার একটি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
আরও পড়ুনঃ পোর্টেবল রক্তচাপ মাপার যন্ত্র যা অটোমেটিক রক্তচাপ পরিমাপ করবে
ম্যাগনেটোক্যালরিক হিট পাম্প কীভাবে কাজ করে?
এই হিট পাম্পে তাপ স্থানান্তর করতে চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন ব্যবহার করা হয়। সাধারণত, ম্যাগনেটোক্যালরিক পদার্থ এবং স্থায়ী চুম্বকের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া তৈরি করে তাপকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সহজভাবে বললে, একটি স্থায়ী চুম্বক যখন ম্যাগনেটোক্যালরিক পদার্থের উপর কাজ করে, তখন সেই পদার্থের তাপমাত্রা বাড়ে বা কমে যায়। তারপর তাপ স্থানান্তর করতে একটি তরল ব্যবহার করা হয়। গবেষণার দলনেতা জুলি স্লটার বলেন, তারা প্রথমে একটি সাধারণ নকশা দিয়ে কাজ শুরু করেন। এরপর ধাপে ধাপে উন্নতি এনে ডিভাইসটির কার্যক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রযুক্তি প্রচলিত কমপ্রেশন পাম্পের মতোই কার্যকর হতে পারে।
গবেষণায় দুটি প্রধান পদার্থের ব্যবহার পরীক্ষা করা হয়: গ্যাডোলিনিয়াম এবং ল্যান্থানাম-আয়রন-সিলিকন (LaFeSi)। গ্যাডোলিনিয়াম সহজলভ্য এবং সহজে ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে, ল্যান্থানাম-আয়রন-সিলিকন পদার্থটি অনেক শক্তিশালী এবং এটি তাপ স্থানান্তরের ক্ষমতা বাড়ায়। তবে এই পদার্থের সহজলভ্যতা কম এবং এটি ব্যবহারের জন্য বেশি প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন হয়। গবেষকরা দেখিয়েছেন, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই পদার্থ দিয়ে হিট পাম্পের কার্যক্ষমতা আরও উন্নত করা যায়।
এই প্রযুক্তির সুবিধাসমূহ
- রেফ্রিজারেন্ট ছাড়া কাজ করে: প্রচলিত হিট পাম্পে ব্যবহৃত গ্যাসগুলোর কারণে পরিবেশের ক্ষতি হয়। কিন্তু ম্যাগনেটোক্যালরিক হিট পাম্পে এই গ্যাসের প্রয়োজন নেই।
- শক্তি সাশ্রয়ী: এটি বিদ্যুৎ খরচ কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদে খরচ বাঁচায়।
- কম রক্ষণাবেক্ষণ: এই প্রযুক্তিতে চলমান অংশ কম থাকায় এটি সহজে নষ্ট হয় না এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কম।
- দীর্ঘস্থায়ী কার্যক্ষমতা: ডিভাইসটি দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকরভাবে তাপ এবং শীতলীকরণের কাজ করতে পারে।
গবেষণার সময় গবেষকরা ম্যাগনেটোক্যালরিক হিট পাম্পের ওজন এবং খরচ কমানোর ওপর কাজ করেছেন। তারা স্থায়ী চুম্বকের পরিমাণ কমিয়ে এবং চৌম্বকীয় ইস্পাতকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে ডিভাইসটির ওজন কমিয়েছেন। তাদের মতে, যখন এই ডিভাইস ব্যাপকভাবে উৎপাদন করা হবে, তখন এটি প্রচলিত হিট পাম্পের মতোই সস্তা এবং সহজলভ্য হবে।
এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি পরিবেশের জন্য নিরাপদ। প্রচলিত রেফ্রিজারেন্ট গ্যাসের কারণে যে বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়, তা এই প্রযুক্তির মাধ্যমে এড়ানো সম্ভব। এছাড়া এটি বিদ্যুতের ব্যবহার আরও কার্যকরভাবে করতে পারে। ফলে এটি পরিবেশ রক্ষা করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক হবে।
ম্যাগনেটোক্যালরিক হিট পাম্প ভবিষ্যতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এটি ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ খরচ কমবে, পরিবেশের ক্ষতি কমবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে কার্যক্ষম থাকবে। গবেষকরা আশা করছেন, এই প্রযুক্তি খুব দ্রুতই বাজারে আসবে এবং এটি সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য হবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির এই নতুন উদ্ভাবন পৃথিবীর জন্য একটি বড় আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।