দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পর আবারো টিকটক চালু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে

টিকটক সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর এবং গুগল প্লে স্টোর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, কারণ মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে চীনা মালিকানাধীন এই অ্যাপটিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তবে, কিছু আইনি প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলে এটি আবারও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপ স্টোরে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে।টিকটকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সকে মার্কিন আইন অনুযায়ী অ্যাপটির মালিকানা হস্তান্তর করতে হবে অথবা নিষিদ্ধ হতে হবে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিকটক নিষিদ্ধের কার্যকারিতা স্থগিত করেন, যার ফলে এটি আবারও মার্কিন অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে এখন।

এই জনপ্রিয় অ্যাপটির যুক্তরাষ্ট্রে ১৭০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। টিকটক সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে তার পরিষেবা বন্ধ করেছিল, যার ফলে হাজার হাজার ব্যবহারকারী নতুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুঁজতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই সময়ে অনেক ব্যবহারকারী “টিকটক রিফিউজি” নামে নিজেদের পরিচিত করাতে শুরু করেন এবং তারা বিকল্প হিসেবে চীনা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ রেডনোটে যোগ দেন।

অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে পুনরায় উপলব্ধ হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত। তার প্রশাসন টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিল, তবে পরে সেই নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা ৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। ট্রাম্পের প্রথম দফা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি টিকটক নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী ছিলেন, তবে পরবর্তীতে তার মনোভাব কিছুটা নমনীয় হয়। তিনি এক পর্যায়ে জানান যে, টিকটকের প্রতি তার “একটি বিশেষ অনুভূতি” রয়েছে। এমনকি টিকটকের সিইও শাউ চিউ ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

টিকটককে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালনা করতে হলে কয়েকটি শর্ত মানতে হবে। এর মধ্যে প্রধান শর্ত হলো মার্কিন বিনিয়োগকারীদের দ্বারা অ্যাপটির মালিকানা গ্রহণ করা। এই বিষয়ে আলোচনায় রয়েছেন কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, যেমন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ফ্রাঙ্ক ম্যাককোর্ট, শার্ক ট্যাঙ্কের বিনিয়োগকারী কেভিন ও’লিয়ারি এবং জনপ্রিয় ইউটিউবার মিস্টার বিস্ট (জিমি ডোনাল্ডসন)। যদি এই বিনিয়োগকারীরা একত্রিত হয়ে টিকটকের কিছু অংশ কিনতে সক্ষম হন, তবে এটি নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত হতে পারবে।

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, চীনা মালিকানার কারণে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ নয় এবং এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। তবে, বাইটড্যান্স এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। তাদের বক্তব্য, তারা কখনো মার্কিন ব্যবহারকারীদের তথ্য চীনা সরকারের সঙ্গে ভাগাভাগি করেনি।

টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। তবে অ্যাপটি পুনরায় স্টোরে ফিরে আসায় ব্যবহারকারীরা স্বস্তি পেয়েছেন। টিকটক মূলত ছোট ভিডিও তৈরি এবং শেয়ার করার জন্য জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিনোদন, শিক্ষা, ব্যবসায়িক প্রচার এবং অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। এটি বাংলাদেশেও অনেক জনপ্রিয় একটি অ্যাপ।

টিকটক নিষিদ্ধের সম্ভাবনার কারণে অনেক মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও উদ্বিগ্ন ছিল। যদি এটি পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়ে যেত, তবে অনেক মার্কিন কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং উদ্যোক্তার বড় ধরনের আয় কমে যেত। অনেকেই ইতোমধ্যে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম খুঁজতে শুরু করেছিলেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি আবারও সক্রিয় হওয়ায় ব্যবহারকারীরা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। যদি বাইটড্যান্স মার্কিন মালিকানার অধীনে টিকটক পরিচালনার বিষয়ে সমঝোতায় না পৌঁছায়, তবে এটি আবারও নিষিদ্ধ হতে পারে। তবে বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক সমাধান আসতে পারে বলে অনেকে আশা করছেন।

অবশেষে টিকটক সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে আমেরিকায়

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো