চীনের সরকার গুগলের বিরুদ্ধে একটি অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্ত শুরু করেছে। এটি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ১০% শুল্ক আরোপ করার পর চীন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এই তদন্তসহ আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
গুগল ও চীনের সম্পর্ক বহু বছর ধরে জটিল। ২০০৬ সালে গুগল চীনে google.cn নামে একটি সার্চ ইঞ্জিন চালু করেছিল, যা চীনা আইন অনুযায়ী সেন্সর করা ছিল। ২০১০ সালে গুগল ঘোষণা দেয় যে তারা আর চীনা সরকারের সেন্সরশিপ মেনে চলবে না। এর পর চীন গুগলের সমস্ত সেবাকে ব্লক করে দেয়, যার মধ্যে জিমেইল, ক্রোম ব্রাউজার এবং গুগল সার্চ ইঞ্জিন অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে চীনের ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল’ সিস্টেমের কারণে দেশটির সাধারণ নাগরিকরা গুগলের সেবা ব্যবহার করতে পারেন না।
যদিও গুগলের পরিষেবা চীনে সহজলভ্য নয়, তবু কোম্পানিটি সেখানে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে। গুগলের বেইজিং, সাংহাই ও শেনজেন শহরে অফিস রয়েছে, যেখানে বিজ্ঞাপন বিক্রয় এবং ক্লাউড সেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা কাজ করেন।
চীনের বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ‘স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর মার্কেট রেগুলেশন’ গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে। যদিও তদন্তের নির্দিষ্ট কারণ জানানো হয়নি, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘোষণা করা হয়, যা এটিকে একটি প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হেচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তদন্তের মূল লক্ষ্য হতে পারে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম। চীনের বেশিরভাগ স্মার্টফোন ব্র্যান্ড, যেমন শাওমি, অপ্পো ও ভিভো, তাদের ডিভাইসে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে এবং গুগলকে লাইসেন্স ফি প্রদান করে। কিছু চীনা কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে গুগল তাদের বাজারে প্রভাব খাটাচ্ছে।
এই তদন্তের ফলে গুগলের চীনে কার্যক্রম কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তদন্তের ফলাফল প্রকাশ হতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। তবে অনেকেই মনে করছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের একটি অংশ এবং ভবিষ্যতে আলোচনার জন্য গুগলকে চাপের মধ্যে রাখা হতে পারে।
এ ধরনের অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্ত গুগলের জন্য নতুন নয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, ভারত ও তুরস্কেও গুগল বাজারে প্রভাব বিস্তারের কারণে জরিমানা গুনেছে। এর মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বেশ কয়েকবার গুগলকে প্রতিযোগিতা-বিরোধী কার্যকলাপের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে।
এই তদন্তের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনই নির্ধারণ করা কঠিন। গুগল যদি চীনের বাজারে আরও কার্যক্রম বাড়ানোর পরিকল্পনা করে, তবে এটি নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। অন্যদিকে, চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে ইতোমধ্যে অ্যান্ড্রয়েডের বিকল্প হিসেবে হারমোনি ওএস চালু করেছে। এটি দেখায় যে চীনা কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে গুগলের পরিষেবার ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে।