টু-ফোটন ভিশন এর মাধ্যমে অদৃশ্য জগৎ দেখা যাবে

মানুষের চোখ সাধারণত ৩৮০ ন্যানোমিটার থেকে ৭৮০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মি দেখতে পারে, যা বেগুনি থেকে লাল রঙের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে, গবেষকরা এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যা মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকা অবলোহিত (ইনফ্রারেড) আলো দেখার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই প্রযুক্তিকে বলা হয় “টু-ফোটন ভিশন,” যা চোখের ভেতরে এক বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করে।

সাধারণ দৃষ্টিশক্তিতে, একটি ফোটন চোখের রেটিনায় থাকা আলোক সংবেদনশীল কোষে (ফটোসেপ্টর) শোষিত হয় এবং সেটি মস্তিষ্কে একটি বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠায়। কিন্তু টু-ফোটন ভিশনে, একই সময়ে দুটি ফোটন একসঙ্গে শোষিত হয়, যা এমন একটি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো তৈরি করে, যা সাধারণত মানুষের চোখে পড়ার কথা নয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি অবলোহিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৮০০-১৩০০ ন্যানোমিটারের মধ্যে হয়, তাহলে তা চোখের ফটোসেপ্টরে দুটি ফোটন হিসেবে শোষিত হতে পারে এবং মস্তিষ্ক সেটিকে দৃশ্যমান আলো হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারে।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছে আইসিটিইআর (ICTER) নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, টু-ফোটন ভিশন প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাপ্ত আলো প্রায় ৬৭০ cd/m² (ক্যান্ডেলা পার বর্গমিটার) উজ্জ্বলতায় দৃশ্যমান হতে পারে, যা চোখের জন্য নিরাপদ মাত্রার লেজার শক্তির মধ্যে থাকে। এই গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল অবলোহিত আলোর উজ্জ্বলতাকে পরিমাপযোগ্য এককে প্রকাশ করা, যা আগে শুধুমাত্র দৃশ্যমান আলোর জন্য সম্ভব ছিল।

একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল টু-ফোটন আলোর উজ্জ্বলতা নির্ধারণ করা, কারণ সাধারণ পদ্ধতিতে দৃশ্যমান আলোর উজ্জ্বলতা পরিমাপ করা সম্ভব হলেও, অবলোহিত আলোর ক্ষেত্রে তা সম্ভব ছিল না। ICTER-এর বিজ্ঞানীরা একটি নতুন পদার্থবিদ্যাগত পরিমাপের ধারণা তৈরি করেছেন, যাকে বলা হয় “টু-ফোটন রেটিনাল ইলুমিনেশন।” এটি এমন একটি উপায়, যা অবলোহিত আলোর উজ্জ্বলতা পরিমাপে সহায়তা করে এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করে।

এই গবেষণার ফলে দুটি প্রধান ক্ষেত্রে অগ্রগতি সম্ভব হতে পারে: মেডিকেল ডায়াগনস্টিক এবং ভার্চুয়াল/অগমেন্টেড রিয়ালিটি (VR/AR)। টু-ফোটন ভিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত চক্ষু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব হতে পারে, বিশেষ করে স্নায়ু ও চোখের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে। অবলোহিত আলো ব্যবহার করে মস্তিষ্ক এবং চোখের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা যাবে, যা প্রচলিত দৃশ্যমান আলোক ব্যবহার না করেই করা সম্ভব হবে।

অন্যদিকে, ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়ালিটি ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। কারণ, এটি এমন এক পদ্ধতি, যা অবলোহিত আলোক ব্যবহার করে আরও বাস্তবসম্মত ও স্বচ্ছ অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারে। ফলে, ভবিষ্যতে টু-ফোটন রেটিনাল ডিসপ্লে তৈরি করা সম্ভব হবে, যা অগমেন্টেড রিয়ালিটি গ্লাসের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।

গবেষকদের মতে, টু-ফোটন ভিশনের উজ্জ্বলতা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে আরও নির্ভুল প্রযুক্তির বিকাশ সম্ভব হবে। এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান আলোর সঙ্গে টু-ফোটন আলোর সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন। তারা অবলোহিত আলোকে এমন এক মাত্রায় নিয়ে এসেছেন, যেখানে এটি দৃশ্যমান আলোর মতোই স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হলো, টু-ফোটন ভিশনের উজ্জ্বলতা সাধারণ আলোর তুলনায় ভিন্নভাবে কাজ করে। এখানে উজ্জ্বলতা নির্ভর করে লেজারের শক্তির উপর এবং এটি বর্গমূলের হারে বৃদ্ধি পায়। এর মানে হল, ছড়িয়ে পড়া আলো চোখে দৃশ্যমান হবে না, বরং শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হলে তবেই তা প্রতীয়মান হবে। ফলে, এই প্রযুক্তি চোখের দৃষ্টিশক্তির জন্য আরও উন্নত মানের চিত্র প্রদান করতে পারে।

এই গবেষণার মাধ্যমে নতুন এক পরিমাপযোগ্য একক তৈরি হয়েছে, যা টু-ফোটন আলোর উজ্জ্বলতা বোঝার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তির বিকাশ সম্ভব হবে, যা চোখের চিকিৎসা ও আধুনিক ডিসপ্লে প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে। গবেষকরা বলছেন, টু-ফোটন ভিশন নিয়ে আরও গবেষণা করলে এর ব্যবহারিক দিক আরও স্পষ্ট হবে এবং মানুষের দৃষ্টিশক্তির এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।

মানবজীবনের আয়ুকাল বৃদ্ধি করার এক ওষুধ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো