যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি অ্যাপলের এনক্রিপ্টেড ডেটায় প্রবেশাধিকারের দাবি জানিয়েছে অর্থাৎ কিছু নির্দিষ্ট অ্যাপল গ্রাহকদের তথ্য পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। এই দাবিটি এসেছে “ইনভেস্টিগেটরি পাওয়ার্স অ্যাক্ট” (IPA) আইনের আওতায়, যা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনুরোধে নির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করতে বাধ্য করে। তবে অ্যাপল বর্তমানে এমন একটি সিস্টেম ব্যবহার করে, যেখানে শুধুমাত্র ব্যবহারকারীই তার ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারেন, এমনকি অ্যাপল নিজেও এটি দেখতে পারে না। এই নতুন দাবির ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ অ্যাপল তার “অ্যাডভান্সড ডাটা প্রোটেকশন” (ADP) নামক নিরাপত্তা ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ডেটাকে এতটাই সুরক্ষিত করে যে, এটি একমাত্র ব্যবহারকারীই দেখতে পারেন। যুক্তরাজ্য সরকারের দাবি অনুযায়ী, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে এই এনক্রিপ্টেড ডেটার প্রবেশাধিকার প্রয়োজন হতে পারে। তবে এই প্রবেশাধিকারের সুযোগ থাকলে তা ভবিষ্যতে হইতো সাইবার অপরাধীদের হাতেও চলে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এই বিষয়টি প্রথম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীতে বিবিসিও এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (হোম অফিস) এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও তারা নিশ্চিত করেনি বা অস্বীকারও করেনি যে, এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, অ্যাপলও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে তাদের ওয়েবসাইটে গোপনীয়তাকে “একটি মৌলিক মানবাধিকার” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বিষয়টি বর্তমানে নতুন একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যেখানে সাইবার নিরাপত্তা ও ব্যক্তি স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। গোপনীয়তা সংক্রান্ত সংস্থা “প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল” একে “ব্যক্তিগত ডেটার ওপর নজিরবিহীন হস্তক্ষেপ” বলে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটির আইনি পরিচালক ক্যারোলিন উইলসন পালো বলেছেন, “এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত, যা গোটা বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।”
অ্যাপল অতীতেও এমন দাবির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছিল, তারা কখনোই তাদের ডিভাইসে “ব্যাকডোর” বা গোপন প্রবেশপথ তৈরি করবে না। কারণ, একবার যদি সরকার বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য এমন একটি প্রবেশপথ তৈরি করা হয়, তবে সাইবার অপরাধী ও হ্যাকাররাও সেটি খুঁজে পেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের নিরাপত্তা দুর্বলতা তৈরি করলে তা শুধু সরকারই নয়, বরং যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা ব্যবহার করতে পারে, যা ব্যবহারকারীদের তথ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
এটি প্রথমবার নয় যে, কোনো সরকার প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছে এনক্রিপশন ভাঙার দাবি জানিয়েছে। ২০১৬ সালে মার্কিন সরকার অ্যাপলকে এক বন্দুকধারীর আইফোন আনলক করতে বলেছিল। কিন্তু অ্যাপল আদালতের আদেশের বিরুদ্ধেও এটি করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে এফবিআই নিজস্ব উপায়ে ফোনটি আনলক করতে সক্ষম হয়। এরপর ২০২০ সালে আরও একটি ঘটনার সময় অ্যাপলকে পুনরায় এনক্রিপশন ভাঙতে অনুরোধ করা হয়, তবে তারা তখনও এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর এনক্রিপশন সুরক্ষা দুর্বল করা হলে অপরাধীরা সহজেই বিকল্প প্ল্যাটফর্মে চলে যেতে পারে, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলবে। বিশেষজ্ঞ লিসা ফোর্তে বলেছেন, “এই ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করলে অপরাধীরা নতুন পদ্ধতিতে তাদের কার্যক্রম চালাবে, কিন্তু সাধারণ জনগণের গোপনীয়তা হারিয়ে যাবে।”
শিশু সুরক্ষা সংস্থা এনএসপিসিসহ কিছু সংগঠন মনে করে, এনক্রিপশন শিশুদের জন্য ক্ষতিকর কন্টেন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে। তবে গোপনীয়তা রক্ষার পক্ষে থাকা সংস্থাগুলো বলছে, এটি মৌলিক ব্যক্তিগত অধিকারের লঙ্ঘন এবং একবার এই ধরনের নজরদারি অনুমোদন পেলে, সেটির অপব্যবহার হতে পারে।
অ্যাপল তৈরি করেছে রোবট ল্যাম্প যা মানুষের মত অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে