বর্তমানে স্মার্ট চশমা প্রযুক্তির নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি আমরা, যেখানে চশমার ডিজাইনগুলো হবে আরও স্লিম এবং দাম হবে আরও সাশ্রয়ী। প্রযুক্তিগত এই চশমাগুলোর নির্মাতারা ক্রমাগত নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাজারে প্রতিযোগিতা করছে। তারা এমন মডেল তৈরি করছে যা অনেক উন্নত প্রযুক্তির এবং আধুনিক ডিজাইনের। এখন স্মার্ট চশমায় লাইভ অনুবাদ, জিপিএস, ক্যামেরার মতো অনেক সুবিধা রয়েছে। স্মার্ট চশমার শিল্প এখন অনেক দূর এগিয়েছে। গুগল গ্লাসের বিশাল আকৃতির প্রযুক্তি বা এপসনের মোভারিওর ভারী ফ্রেমের যুগ এখন অতীত। বর্তমানে স্মার্ট চশমাগুলো দেখতে অনেকটাই সাধারণ চশমার মতো। এর মধ্যে রে-ব্যান মেটা উল্লেখযোগ্য, যা মার্ক জাকারবার্গের মেটা কোম্পানি তৈরি করেছে। এটি বর্তমানে বাজারে একটি জনপ্রিয় মডেল হিসেবে স্থান দখল করেছে।
আরও পড়ুনঃ এবার স্যামসাং নিয়ে আসতে যাচ্ছে তাদের নতুন এআর স্মার্ট গ্লাস
একটি সাম্প্রতিক মার্কেটস স্টাডি অনুযায়ী, স্মার্ট চশমা শিল্পের বৃদ্ধি অনেকাংশে উন্নত অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), এবং মিনিযাচারাইজেশন প্রযুক্তির কারণে ঘটছে। এই প্রযুক্তিগুলো স্মার্ট চশমার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে, প্রযুক্তিকে আকর্ষণীয় ফ্রেমে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে কিছু বিষয়ের সাথে আপস করতে হয়।
রে-ব্যান মেটা চশমার উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এটি ছবি এবং ভিডিও ধারণ করতে পারে, গান বাজাতে পারে এবং দৃশ্যমান বস্তুর তথ্য সরবরাহ করতে পারে। তবে এতে এআর ক্ষমতা নেই যা অতিরিক্ত ছবি বা তথ্য সুপারইমপোজ করে। মেটার প্রতিনিধি রবিন ডায়ার জানিয়েছেন যে ভবিষ্যতে এআর প্রযুক্তি যুক্ত হতে পারে, তবে এটি করা হলে বর্তমানে চশমার দামের দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।
মূল্য প্রতিযোগিতায়ও এই শিল্পে বড় ভূমিকা পালন করছে। গুগল গ্লাসের প্রথম মডেলের দাম ছিল প্রায় ১,৫০০ ডলার যা ২০১৩ সালে বাজারে এসেছিল। আর আজকের স্মার্ট চশমার দাম সাধারণ প্রিমিয়াম চশমার কাছাকাছি। রে-ব্যানের মেটা চশমার দাম শুরু হয় ৩০০ ডলার থেকে, যা একটি সাধারণ রে-ব্যান চশমার চেয়ে মাত্র ৫০ ডলার বেশি।
চীনা স্টার্টআপ ভিউ আরও কম দামে স্মার্ট চশমা সরবরাহ করছে। এর মডেলগুলোতে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং সঙ্গীত বাজানোর সুবিধা রয়েছে, এবং দাম মাত্র ২০০ ডলার। অন্যদিকে, কিছু নির্মাতা যেমন এক্সরিয়াল, অগমেন্টেড রিয়েলিটির উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা এমন চশমা তৈরি করছে যা স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা গেমিং কনসোলের ডিসপ্লে প্রজেক্ট করতে পারে। তবে, অ্যাপলের ভিশন প্রো এ বাজারে খুব বেশি সাড়া ফেলতে পারেনি কারণ এর ওজন, একটি সাধারণ চশমার তুলনায় অনেক বেশি ভাড়ি।
অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এর সমস্ত খুটি-নাটি
অগমেন্টেড রিয়েলিটির সাম্প্রতিক উন্নতিগুলি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটের ভারী আকৃতির পরিবর্তে সাধারণ সানগ্লাসের মতো হালকা এবং ব্যবহারবান্ধব ডিজাইন তৈরি করতে কার্যকর হয়েছে। যদিও এর জন্য ডিভাইসের সাথে একটি তারযুক্ত সংযোগ প্রয়োজন। মেটার একটি নতুন মডেল “অরিয়ন” বর্তমানে পরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে, যা ২০২৭ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া, এমন কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা চশমার ফ্রেমকে অতিমাত্রায় পাতলা এবং সাধারণ চশমার মতো রাখার চেষ্টা করছে। এই ক্ষেত্রে হ্যালিডে এবং ইভেন রিয়ালিটিস উল্লেখযোগ্য। হ্যালিডের ৪৮৯ ডলার দামের মডেলটি মার্চ মাসে বাজারে আসছে। এটি ব্যবহারকারীর দৃষ্টির উপরের কোণে লেখা প্রদর্শন করতে পারে। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কথোপকথনে পরামর্শ দিতে পারে, রিয়েল-টাইম অনুবাদ করতে পারে এবং একটি ডিসক্রিট টেলিপ্রম্পটার হিসেবে কাজ করতে পারে।
ইভেন রিয়ালিটিস আরও মিনিমালিস্টিক ডিজাইনের উপর জোর দিচ্ছে। কোম্পানির টম ওয়াং বলেন, “আমরা স্পিকার এবং ক্যামেরা বাদ দিয়েছি। চশমা চোখের জন্য, কানের জন্য নয়।”
স্মার্ট চশমার এই ক্রমবর্ধমান বাজার দেখাচ্ছে যে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও সহজলভ্য, কার্যকর এবং সবার জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এটি সাধারণ চশমার বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
ফেসবুক মেটা (Meta) কোম্পানী নিয়ে এসেছে আইরন ম্যান গ্লাস “অরিয়ন এআর”