প্রসেসর কি? মোবাইল ও কম্পিউটার প্রসেসরের মধ্যে পার্থক্য

প্রসেসর কি?

প্রসেসর, যাকে আমরা সাধারণত CPU (Central Processing Unit) বলি, হলো এক ধরনের মাইক্রোচিপ যা কম্পিউটারের বিভিন্ন কার্যাবলী পরিচালনা করে। প্রসেসরকে যন্ত্রের মস্তিষ্ক বলা হয়, কারণ এটি যেকোনো তথ্যকে প্রক্রিয়াকরণ করে এবং ডিভাইসের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সমন্বয় করে। প্রসেসরের গতি ও ক্ষমতা নির্ভর করে ট্রানজিস্টরের উপর, যা তথ্য প্রক্রিয়াকরণে সাহায্য করে। প্রসেসরকে কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বলা হয়। এটি কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সব ধরনের নির্দেশনা অনুসরণ করে এবং কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু এই মস্তিষ্কটা আসলে কীভাবে কাজ করে? আসুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

প্রসেসর কিভাবে কাজ করে?

প্রসেসর বা CPU (Central Processing Unit) হল কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা নির্দেশনা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সমস্ত কাজ পরিচালনা করে। এটি মূলত তিনটি ধাপে কাজ করে: ফেচ (Fetch), ডিকোড (Decode), এবং এক্সিকিউট (Execute)। এই ধাপগুলো ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো:

১. ফেচ (Fetch): এই ধাপে প্রসেসর মেমোরি থেকে একটি নির্দেশনা (Instruction) নিয়ে আসে। প্রতিটি নির্দেশনা কম্পিউটারে সংরক্ষিত হয় মেমোরি (RAM) এর একটি নির্দিষ্ট অ্যাড্রেসে। প্রসেসরের ভিতরে থাকা একটি অংশ, যাকে প্রোগ্রাম কাউন্টার (Program Counter) বলে, এটি জানায় কোন অ্যাড্রেস থেকে পরবর্তী নির্দেশনা আনতে হবে। নির্দেশনা পাওয়ার পর, প্রোগ্রাম কাউন্টারটি আপডেট হয় এবং পরবর্তী নির্দেশনার জন্য প্রস্তুত থাকে।

২. ডিকোড (Decode): নির্দেশনা ফেচ করার পর, প্রসেসর সেটিকে বুঝে নেয়। এটি সম্ভব হয় কারণ প্রতিটি নির্দেশনা বাইনারি কোড আকারে থাকে, যা বিশেষ ধরনের কমান্ড দেয়। প্রসেসর এই বাইনারি কোডটি ডিকোড করে এবং নির্দেশনার অর্থ নির্ধারণ করে। এই ধাপে, প্রসেসর বুঝতে পারে যে তাকে কী কাজ করতে হবে, যেমন কোন ডেটার উপর গণনা করতে হবে বা কোন মেমোরি অ্যাড্রেস থেকে ডেটা আনতে হবে।

৩. এক্সিকিউট (Execute): ডিকোড করার পর, প্রসেসর নির্দেশনাটি কার্যকর করতে শুরু করে। এটি অঙ্কগণিত (Arithmetic), লজিক্যাল (Logical) অপারেশন, অথবা ডেটা স্থানান্তর (Data Transfer) হতে পারে। ALU (Arithmetic Logic Unit) এই ধাপের জন্য দায়ী, যা অঙ্কগণিত ও লজিক্যাল অপারেশন পরিচালনা করে।

প্রসেসরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ

  • রেজিস্টার (Register): রেজিস্টার প্রসেসরের ভিতরে ক্ষুদ্র মেমোরি অংশ, যেখানে প্রসেসর ক্ষণস্থায়ী ডেটা সংরক্ষণ করে।
  • ক্যাশ (Cache): ক্যাশ হলো খুব দ্রুতগতির মেমোরি যা প্রসেসরের খুব কাছে থাকে, যেখানে সাময়িকভাবে প্রয়োজনীয় ডেটা এবং নির্দেশনা সংরক্ষণ করা হয়। এটি প্রসেসরের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।

উদাহরণ: ধরা যাক, আপনি আপনার কম্পিউটারে ক্যালকুলেটর অ্যাপ ব্যবহার করে ৫ + ৩ এর সমাধান করতে চাচ্ছেন। ফেচ: ক্যালকুলেটর অ্যাপে আপনি যখন ৫ লিখছেন, তখন প্রসেসর সেই নির্দেশনা ফেচ করে। ডিকোড: প্রসেসর বুঝে নেয়, আপনাকে ৫ এবং ৩ যোগ করতে হবে। এক্সিকিউট: প্রসেসরের ALU এই যোগফলটি (৫+৩=৮) গণনা করে এবং আপনাকে রেজাল্ট দেখায়। এভাবে প্রতিটি ধাপে প্রসেসর দ্রুত কাজ সম্পাদন করে, যা একটি কম্পিউটারের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে।

 

মোবাইল প্রসেসর কি?

মোবাইল প্রসেসর হলো বিশেষ ধরনের প্রসেসর যা মোবাইল ডিভাইসের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি কম্পিউটার প্রসেসরের তুলনায় কম শক্তি গ্রহণ করে এবং ছোট আকারের ডিভাইসগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মোবাইল প্রসেসরগুলোর মূল কাজ হচ্ছে ডিভাইসের সব অ্যাপ্লিকেশন এবং ফাংশন পরিচালনা করা এবং কার্যকরভাবে ডেটা প্রসেস করা।

গেমিং এর জন্য সবচেয়ে ভালো প্রসেসর কোনটি? এই প্রবন্ধটি আপনার জন্য

গেমিং এর জন্য সবচেয়ে ভালো প্রসেসর কোনটি?

কম্পিউটার প্রসেসর এবং মোবাইল প্রসেসর এর মধ্যে পার্থক্য

কম্পিউটার প্রসেসর এবং মোবাইল প্রসেসরের মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে:

  • শক্তি গ্রহণ: কম্পিউটার প্রসেসর অনেক বেশি শক্তি ব্যবহার করে, যেখানে মোবাইল প্রসেসর কম শক্তি খরচ করে।
  • গতি: কম্পিউটার প্রসেসর সাধারণত মোবাইল প্রসেসরের চেয়ে দ্রুত।
  • আকার: মোবাইল প্রসেসর আকারে ছোট এবং কম জায়গা নেয়।
  • উদ্দেশ্য: কম্পিউটার প্রসেসর প্রধানত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন গেমিং, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি, যেখানে মোবাইল প্রসেসর ছোট কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।

মোবাইল প্রসেসর এর কাজ কি?

মোবাইল প্রসেসরের মূল কাজ হলো মোবাইল ডিভাইসের বিভিন্ন কার্যাবলী সম্পাদন করা। এটি ডিভাইসের অ্যাপ্লিকেশনগুলো চালানো, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, গেমিং, এবং মাল্টিমিডিয়া কার্যক্রম পরিচালনা করে। মোবাইল প্রসেসর সেই সমস্ত তথ্যকে প্রক্রিয়াকরণ করে যা আমরা মোবাইলে ইনপুট করি এবং এটি ডিভাইসের ডিসপ্লেতে সঠিক আউটপুট দেয়।

মোবাইল প্রসেসর কত প্রকার?

মোবাইল প্রসেসর বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, তবে সাধারণত দুই ধরনের প্রসেসর প্রচলিত:

  1. স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর: এটি Qualcomm দ্বারা তৈরি করা হয় এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিভাইসের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  2. মিডিয়াটেক প্রসেসর: এটি মিডিয়াটেক কোম্পানি দ্বারা তৈরি এবং সাধারন বা মিড-রেঞ্জ ডিভাইসের জন্য ব্যবহার করা হয়।

স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর কি?

স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর Qualcomm কোম্পানির তৈরি একটি জনপ্রিয় প্রসেসর সিরিজ যা স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং উচ্চ পারফরমেন্স প্রদান করতে সক্ষম। স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরগুলো সাধারণত প্রিমিয়াম ডিভাইসগুলোতে ব্যবহৃত হয়, এবং এর একটি বড় সুবিধা হলো শক্তি সাশ্রয়ী ডিজাইন।

মিডিয়াটেক প্রসেসর কি?

মিডিয়াটেক প্রসেসর হলো মিডিয়াটেক কোম্পানির একটি প্রসেসর সিরিজ, যা সাধারণত মধ্যম বাজেটের ডিভাইসগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়। মিডিয়াটেক প্রসেসরগুলো মূলত মাল্টিটাস্কিং, গেমিং এবং অন্যান্য কার্যাবলীর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি সাধারণত সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায় এবং ভালো পারফরমেন্স দেয়।

মিডিয়াটেক বনাম স্ন্যাপড্রাগন

মিডিয়াটেক এবং স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরের মধ্যে প্রধান কিছু পার্থক্য হলো:

  • পারফরমেন্স: স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর সাধারণত মিডিয়াটেকের তুলনায় ভালো পারফরমেন্স দেয়, বিশেষ করে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন ডিভাইসগুলিতে।
  • মূল্য: মিডিয়াটেক প্রসেসর সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়, যেখানে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
  • শক্তি সাশ্রয়: স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর শক্তি সাশ্রয়ে এগিয়ে, যার ফলে এটি ডিভাইসের ব্যাটারি লাইফ বাড়ায়।
  • উদ্দেশ্য: মিডিয়াটেক প্রসেসর সাধারণত মিড-রেঞ্জ এবং বাজেট ডিভাইসের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে স্ন্যাপড্রাগন প্রিমিয়াম ডিভাইসের জন্য জনপ্রিয়।

উপসংহার

প্রসেসর হলো যেকোনো ডিভাইসের কেন্দ্রীয় অংশ যা সমস্ত কার্যাবলী পরিচালনা করে। কম্পিউটার এবং মোবাইল প্রসেসরের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও, উভয়েরই মূল কাজ এক তথ্য প্রক্রিয়াকরণ। মিডিয়াটেক এবং স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর দুইটি প্রসিদ্ধ মোবাইল প্রসেসর, যাদের পারফরমেন্স এবং সাশ্রয়ী দামের কারণে বিভিন্ন বাজারে সমাদৃত। যেকোনো প্রসেসর বেছে নেওয়ার সময় আপনার ডিভাইসের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।

Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো