স্টারলিংক ইন্টারনেট কি?
স্টারলিংক (Starlink) ইন্টারনেট হলো স্পেসএক্স কোম্পানির একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে ছোট ছোট স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। স্টারলিংক প্রধানত এমন এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়েছে যেখানে সাধারণ ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল ইন্টারনেট নেই বা খুব ধীর গতির।
প্রকল্পটি বিশ্বের অনেক স্থানে ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে সক্ষম হওয়ায়, বিশেষ করে গ্রামীণ বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে, এটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেবাটি পেতে একটি ছোট ডিসের মতো রিসিভার ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়, যা স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।
স্টারলিংক ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?
স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা একটি স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে। এখানে স্টারলিংক ইন্টারনেটের কাজ করার প্রক্রিয়া সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক: স্টারলিংক পৃথিবীর চারপাশে নিচু কক্ষপথে (Low Earth Orbit – LEO) হাজার হাজার ছোট স্যাটেলাইট স্থাপন করেছে। এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরতে থাকে এবং ইন্টারনেট সিগন্যাল প্রদান করে।
রিসিভার ডিভাইস: স্টারলিংক সেবা গ্রহণ করার জন্য ব্যবহারকারীদের একটি বিশেষ রিসিভার ডিভাইস (যা ছোট ডিসের মতো দেখতে) প্রয়োজন হয়। এই ডিভাইসটি স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট সিগন্যাল গ্রহণ করে।
ইন্টারনেট সংযোগ: স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত সিগন্যাল রিসিভার ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর রাউটারে পৌঁছে। এরপর রাউটারটি সেই সিগন্যালকে ওয়াইফাই বা ক্যাবল সংযোগের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ডিভাইসে (যেমন: মোবাইল, কম্পিউটার) পাঠায়।
স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন: স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, এবং পৃথিবীর বিভিন্ন নেটওয়ার্ক স্টেশনগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপন করে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দ্রুত সম্পন্ন হয়, যা উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করে।
স্টারলিংক ইন্টারনেট কে তৈরি করেছে এবং কখন?
স্টারলিংক ইন্টারনেট তৈরি করেছে স্পেসএক্স (SpaceX) আমেরিকান কোম্পানি, যার প্রতিষ্ঠাতা হলেন ইলন মাস্ক। স্পেসএক্স ২০১৫ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে। এরপর ২০১৮ সালে স্টারলিংকের প্রথম স্যাটেলাইটগুলো মহাকাশে পাঠানো হয়। ২০২০ সালে তারা প্রাথমিকভাবে কিছু ব্যবহারকারীদের জন্য ইন্টারনেট সেবা চালু করে।
স্টারলিংক ইন্টারনেট এর সুবিধা
দূরবর্তী এলাকায় ইন্টারনেট: স্টারলিংক এমন স্থানে ইন্টারনেট সরবরাহ করে, যেখানে প্রচলিত ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছায় না, যেমন গ্রাম বা পাহাড়ি এলাকা।
উচ্চ গতি: স্টারলিংক ইন্টারনেটের গতি অনেক বেশি, যা ভিডিও স্ট্রিমিং, গেমিং, এবং দ্রুত ডাউনলোড করার মতো কাজ সহজ করে।
সহজ স্থাপন: স্টারলিংক এর রিসিভার ডিভাইসটি সহজেই স্থাপন করা যায়, এবং এটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে।
ভবিষ্যতে উন্নতি: স্টারলিংক ক্রমাগত নতুন স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে, ফলে পরিষেবার গুণমান আরও উন্নত হবে এবং ইন্টারনেট গতি ও সংযোগ আরও ভালো হবে।
স্টারলিংক ইন্টারনেট এর খরচ কেমন?
স্টারলিংক ইন্টারনেটের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে। সাধারণত, এটি দুটি ধাপে খরচ হয়:
১। রিসিভার ডিভাইসের খরচ: প্রথমে স্টারলিংক কিট (ডিস এবং রাউটার) কিনতে হয়, যার দাম প্রায় $499 (মার্কিন ডলার) বা তার আশেপাশে।
২। মাসিক সেবা খরচ: এরপর প্রতি মাসে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রায় $110 থেকে $120 এর মতো খরচ হয়।
তবে খরচ এলাকা এবং দেশের উপর নির্ভর করে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
স্টারলিংক ইন্টারনেট এর গতি কেমন?
স্টারলিংক ইন্টারনেটের গতি বেশ ভালো। সাধারণত, এটি ১৫০ মেগাবিট পার সেকেন্ডের মধ্যে থাকে। এর মাধ্যমে সহজেই ভিডিও দেখা, গেম খেলা, এবং দ্রুত ডাউনলোড করা যায়। তবে কোথাও কোথাও এর গতি আরও বেশি হতে পারে, আবার কখনও একটু কমও হতে পারে।
স্টারলিংক ইন্টারনেট বাংলাদেশে কখন আসবে?
স্টারলিংক ইন্টারনেট বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা রয়েছে, তবে এটি এখনও চালু হয়নি। ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্টারলিংক সেবা চালু করছে। বাংলাদেশেও এই সেবা আসতে পারে, কিন্তু এর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও নীতিমালা ঠিক করতে হবে। এছাড়া, সেবাটি কবে চালু হবে বা কিভাবে পাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট তথ্য নেই। তবে ভবিষ্যতে এটি বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্টারলিংক ইন্টারনেট কোন কোন দেশে চালু রয়েছে?
২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্টারলিংক ইন্টারনেট বিভিন্ন দেশে চালু হয়েছে। ২০২০ সালে প্রথমবার স্টারলিংক সেবা যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়। এরপর ২০২১ সালে যুক্তরাজ্য, কানাডা, এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন জার্মানি, ফ্রান্স, এবং ইতালিতে চালু হয়। ২০২২ সালে স্পেন, এবং সাইপ্রাসে সেবা বিস্তৃত হয়। ২০২৩ সালে স্টারলিংক আফ্রিকায় প্রবেশ করে, যেখানে নাইজেরিয়া, কেনিয়া, এবং রুয়ান্ডায় সেবা চালু করা হয়। এছাড়াও মোজাম্বিক, জাম্বিয়া, এবং ঘানা সহ আরো কয়েকটি আফ্রিকান দেশেও এই সেবা চালু হয়েছে। স্টারলিংক সেবাটি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে চালু হয়েছে এবং এটি অব্যাহতভাবে বিস্তৃত হচ্ছে।
স্টারলিংকের মূল উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীর যে কোনো স্থানে, বিশেষ করে দূরবর্তী এবং গ্রামীণ এলাকায়, উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করা।
তথ্যসূত্র: Euronerd, Business Insider Africa