অ্যাপল কি এবার সম্পূর্ণরূপে পোর্টবিহীন আইফোন আনবে?

অ্যাপল অনেক দিন ধরেই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন নতুন পরিবর্তন আনছে। কিছুদিন আগেই তারা আইফোনের জন্য ইউএসবি-সি পোর্ট বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন আইনের জন্য। তবে সম্ভাবনা করা হচ্ছে অ্যাপল হয়তো ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ পোর্টবিহীন আইফোন বাজারে আনতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিশ্চিত করেছে যে, অ্যাপল চাইলে ইউএসবি-সি পোর্ট বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ পোর্টলেস আইফোন তৈরি করতে পারে এবং এটি আইনত বৈধ হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমানোর জন্য কমন চার্জার ডাইরেক্টিভ চালু করেছিল। এর ফলে সব স্মার্টফোন কোম্পানিকে একটি অভিন্ন চার্জিং পোর্ট ব্যবহার করতে বলা হয়। শুরুতে মাইক্রো-ইউএসবি পোর্ট ব্যবহার করার পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীতে ইউএসবি-সি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় সেটিকেই স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

অ্যাপল তার ম্যাকবুক ও আইপ্যাডের ক্ষেত্রে ইউএসবি-সি চালু করলেও আইফোনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লাইটনিং পোর্ট ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু নতুন আইন অনুসারে, অ্যাপলকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে আইফোনেও ইউএসবি-সি যুক্ত করতে হয়। এই আইনের কারণে অ্যাপল তাদের আইফোন এসই এবং আইফোন ১৪ মডেলের বিক্রি বন্ধ করে দেয়, কারণ এসব ডিভাইসে তখনও লাইটনিং পোর্ট ছিল।

ব্লুমবার্গের প্রযুক্তি বিশ্লেষক মার্ক গারম্যানের মতে, অ্যাপল প্রথমে তাদের নতুন মডেল আইফোন ১৭ এয়ার-এ কোনো ধরনের পোর্ট না রাখার পরিকল্পনা করেছিল। এতে তারবিহীন চার্জিং ও ক্লাউড-ভিত্তিক ডাটা ট্রান্সফারের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হতো ডিভাইসটি। কিন্তু কোম্পানিটি পরবর্তীতে ইউএসবি-সি রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, কারণ তারা আশঙ্কা করেছিল যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন আইন হয়তো এই পোর্টবিহীন ডিজাইনের অনুমতি দেবে না। তবে ইইউ-এর প্রেস অফিসার ফেদেরিকা মিকোলি নিশ্চিত করেছেন যে, আইন অনুসারে শুধুমাত্র তারযুক্ত চার্জিং পোর্ট থাকলেই সেটি ইউএসবি-সি হতে হবে। অর্থাৎ, যদি কোনো স্মার্টফোনে কোনো তারযুক্ত চার্জিং ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সেটির জন্য ইউএসবি-সি বাধ্যতামূলক নয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুধু তারবিহীন চার্জিং প্রযুক্তিকে আরও সমন্বিত ও একীভূত করার পরিকল্পনা করছে যাতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে কোনো বিভাজন না থাকে এবং ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমে। তাই অ্যাপল যদি সম্পূর্ণভাবে পোর্টলেস আইফোন তৈরি করতে চায়, তাহলে তা বৈধ হবে।

অ্যাপল ইতোমধ্যে তাদের নিজস্ব চার্জিং প্রযুক্তি ‘ম্যাগসেফ’ বাজারে এনেছে, যা কিউই২ (Qi2) নামে একটি সাধারণ চার্জিং স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে যদি অ্যাপল সম্পূর্ণ পোর্টলেস আইফোন আনে, তাহলে ম্যাগসেফের মাধ্যমে তারবিহীন চার্জিং সম্ভব হবে এবং এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে।

পোর্টলেস আইফোন কতটা বাস্তবসম্মত

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পোর্টলেস আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য কতটা সুবিধাজনক হবে?

  • চার্জিং: বর্তমানে তারবিহীন চার্জিং প্রযুক্তি ততটা দ্রুতগতির নয়, ফলে ব্যবহারকারীদের চার্জিংয়ে কিছুটা সময় বেশি লাগতে পারে। তবে ভবিষ্যতে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে এটি আরও কার্যকর হয়ে উঠবে।
  • ডাটা ট্রান্সফার: পোর্টলেস আইফোনে ডাটা ট্রান্সফার শুধু ওয়াই-ফাই ও ক্লাউডের মাধ্যমে সম্ভব হবে। যারা উচ্চগতির ফাইল ট্রান্সফারের জন্য তারযুক্ত সংযোগ ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এটি কিছুটা অসুবিধাজনক হতে পারে।
  • গবেষণা ও উন্নয়ন: অ্যাপল হয়তো আরও উন্নত প্রযুক্তি আনবে যা তারবিহীন চার্জিং ও ডাটা ট্রান্সফারকে আরও দ্রুতগতির করবে। এটি হলে পোর্টলেস আইফোন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

অ্যাপল নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সবসময় এগিয়ে থাকে। তাই ভবিষ্যতে হয়তো আমরা সম্পূর্ণ পোর্টবিহীন একটি আইফোন দেখতে পাবো, যেখানে চার্জিং ও ডাটা ট্রান্সফার পুরোপুরি তারবিহীন প্রযুক্তির মাধ্যমে হবে। যদিও এটি এখনই আসছে না, তবে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে এটি সময়ের ব্যাপার মাত্র।

অ্যাপলের নতুন সি১ (C1) মডেম প্রযুক্তি: এবার ব্যাটারি পারফরম্যান্স ২০% পর্যন্ত বাড়বে

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো