মেটা কোয়েস্ট ৩-এ উইন্ডোজ ১১ সংযোগের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে আগামী মাসে। মাইক্রোসফট এবং মেটা যৌথভাবে একটি নতুন প্রিভিউ ফিচার আনছে যা মেটা কোয়েস্ট ৩ এবং কোয়েস্ট ৩এস ব্যবহারকারীদের তাদের হেডসেটের মাধ্যমে উইন্ডোজ ১১ এর পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করার সুযোগ দেবে। এই ফিচার ডিসেম্বর মাসে প্রিভিউ হিসেবে প্রকাশিত হবে। এটি ব্যবহারকারীদের তাদের স্থানীয় উইন্ডোজ পিসি অথবা ক্লাউড ভিত্তিক উইন্ডোজ ৩৬৫ পিসির সাথে মসৃণভাবে সংযোগ করতে সাহায্য করবে।
এই নতুন সংযোগ ফিচারটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা কোয়েস্ট ৩ হেডসেটের মাধ্যমে তাদের স্থানীয় কম্পিউটার অথবা উইন্ডোজ ৩৬৫ এর সাথে একটি উচ্চ-মানের, একাধিক মনিটর সমন্বিত ওয়ার্কস্টেশন তৈরি করতে পারবেন। এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডে সংযোগ করতে সক্ষম। মাইক্রোসফটের মতে, এই ফিচারটি বিশেষ করে ব্যবসা এবং পেশাদার ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী যারা তাদের কাজের পরিবেশ উন্নত করতে চান। এর পাশাপাশি মেটার সাথে মাইক্রোসফটের এই নতুন অংশীদারিত্বটি সাধারণ কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মেটার লক্ষ্যপূরণেও সহায়তা করবে।
আরও পড়ুনঃ ফেসবুক মেটা (Meta) কোম্পানী নিয়ে এসেছে আইরন ম্যান গ্লাস “অরিয়ন এআর”
মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ বলেন, “এটি একটি সাধারণ কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম তৈরির পথ। এটি শুধুমাত্র গেমের জন্য নয়, বরং বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার, ভিডিও দেখা এবং সাধারণ একটি কম্পিউটারের মতো সব কাজ করার জন্য ব্যবহার করা যাবে।” মেটার এই উদ্যোগটি উইন্ডোজ ১১ এর সাথে আরো সন্নিকট সংযোগ স্থাপন করবে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কাজের প্যাকেজ হয়ে উঠবে।
উল্লেখযোগ্য একটি সুবিধা হল, এই সংযোগটি খুবই সহজ এবং ব্যবহারকারীরা শুধুমাত্র কীবোর্ডের দিকে তাকিয়ে কোয়েস্ট হেডসেটটি তাদের কম্পিউটারের সাথে পেয়ার করতে পারবেন। এটি একটি দ্রুত এবং স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া যা বর্তমানে মেটা এয়ার লিংকের মাধ্যমে পাওয়া রিমোট ডেস্কটপ অভিজ্ঞতা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এটি শুধুমাত্র একটি বর্ধিত অভিজ্ঞতা নয় বরং এটি ব্যবহারকারীদের জন্য কাজের পরিবেশকে আরো সহজ এবং কার্যকর করবে।
মেটা কোয়েস্ট ব্যবহারকারীরা পূর্বেই ভার্চুয়াল ডেস্কটপ এবং ইমার্সড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে পিসি ডেক্সটপ তাদের হেডসেটে সংযোগ করতে পারতেন। তবে মাইক্রোসফট এবং মেটার এই নতুন অংশীদারিত্বটি এই কাজকে আরো সহজতর এবং কার্যকরী করবে। কোয়েস্ট ব্যবহারকারীরা শুধুমাত্র কীবোর্ডের দিকে তাকিয়ে উইন্ডোজ অভিজ্ঞতা শুরু করতে পারবেন যা একটি সম্পূর্ণ উইন্ডোজ ১১ অভিজ্ঞতা তৈরি করবে।
এছাড়া, এই নতুন সংযোগের মাধ্যমে কোয়েস্ট ৩ সিরিজের ব্যবহারকারীরা তাদের হেডসেটে একাধিক ভার্চুয়াল মনিটর সেটআপ করতে পারবেন। এটি মেটার হেডসেটকে অ্যাপল ভিশন প্রো এর মতো প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় নিয়ে আসবে, যা এর আগে মুলত একটি গেমিং এবং বিনোদন মূলক হেডসেট হিসেবে পরিচিত ছিল। মেটা এবং মাইক্রোসফটের লক্ষ্য হল মিশ্র বাস্তবতার হেডসেটগুলিকে শুধু গেমিং এর বাইরে নিয়ে গিয়ে প্রোডাক্টিভিটি টুল হিসেবে রূপান্তর করা।
তবে এই ফিচারের মাধ্যমে কোয়েস্ট ৩ এর ভিশন প্রো এর মতো অপটিক্যাল ক্লারিটির অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে না। কোয়েস্ট ৩ এর রেজোলিউশন প্রায় ২৫ পিক্সেল পার ডিগ্রি, যেখানে অ্যাপল ভিশন প্রো এর রেজোলিউশন প্রায় ৩৪ পিক্সেল পার ডিগ্রি। এই বাড়তি তীক্ষ্ণতা বিশেষ করে ভার্চুয়াল স্ক্রিনের টেক্সট দেখতে অনেক সহায়ক। কিন্তু এটির উচ্চমানের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলি অ্যাপল ভিশন প্রো এর বিক্রয়ের গতিতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারেনি।
মাইক্রোসফটের ঘোষণার মাধ্যমে জানানো হয় যে, মেটা কোয়েস্ট ব্যবহারকারীরা শীঘ্রই তাদের হেডসেটের মাধ্যমে উইন্ডোজ ১১ এর সম্পূর্ণ সক্ষমতা পেতে পারবেন। কোয়েস্ট ৩ এবং ৩এস ব্যবহারকারীরা তাদের উইন্ডোজ ডেক্সটপকে তাদের হেডসেটের মাধ্যমে আসল দুনিয়ার দৃশ্যের উপর আচ্ছাদিত করতে পারবেন, যা তাদের কাজের অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করবে। এটি শুধুমাত্র গেমিং এবং বিনোদনের জন্য নয়, বরং কাজের জন্যও ব্যবহৃত হবে।
মাইক্রোসফট এবং মেটার এই নতুন উদ্যোগটি ব্যবহারকারীদের জন্য তাদের কাজের অভিজ্ঞতাকে আরো সহজ এবং কার্যকর করে তুলতে সাহায্য করবে এবং বর্তমান মিশ্র বাস্তবতার হেডসেটগুলিকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তিতে রূপান্তর করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।