বিশ্ব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো, যেখানে বেতার প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ১ টেরাবিট ডেটা স্থানান্তর করা সম্ভব হয়েছে। যুক্তরাজ্যের গবেষকরা বিভিন্ন বেতার প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এই নতুন রেকর্ড তৈরি করেছেন। গবেষণার এই অসাধারণ ফলাফল আমাদের ভবিষ্যতের উচ্চগতির বেতার সংযোগের ক্ষেত্রে এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
এই রেকর্ড সৃষ্টি করেছে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) একটি দল, যারা প্রায় এক টেরাবিট প্রতি সেকেন্ড (৯৩৮ জিবিপিএস) গতিতে ডেটা স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছে। এই স্থানান্তরটি একটি বিস্তৃত ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের মধ্য দিয়ে করা হয়েছে, যা ৫ থেকে ১৫০ গিগাহার্টজ পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি ঐতিহ্যবাহী বেতার প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছে, যেখানে বেতার সিস্টেমগুলি সাধারণত ৬ গিগাহার্টজের নিচে কাজ করে এবং ৫জি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ১০০ মেগাবিট প্রতি সেকেন্ড গতির মতো স্বাভাবিক ডাউনলোড স্পিড সরবরাহ করে। এই অসাধারণ গতি অর্জন করতে গবেষকরা ইলেকট্রনিক এবং ফোটনিক প্রযুক্তির একত্রিত ব্যবহার করেছেন। এই উদ্ভাবনী পদ্ধতি দ্বারা তাঁরা রেডিও তরঙ্গ এবং আলোক প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ডেটা স্থানান্তরকে আরও দ্রুততর করেছেন। এর ফলে অত্যন্ত দ্রুতগতির এবং স্থিতিশীল সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা বর্তমান বেতার নেটওয়ার্কগুলির চেয়ে হাজার গুণ দ্রুত।
আরও পড়ুনঃ 5G থেকে 6G: ভবিষ্যতের পথে
বর্তমান বেতার নেটওয়ার্কগুলি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির উপর নির্ভর করে, যা প্রায়শই ব্যবহারকারীদের ডেটা স্পিডকে সীমাবদ্ধ করে রাখে। একাধিক সংকেতের সংমিশ্রণে এই ফ্রিকোয়েন্সি প্রায়ই ব্যস্ত থাকে এবং এতে অন্যান্য সংকেতের সাথে সংঘর্ষ ঘটায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ইউসিএল দলের গবেষকরা রেডিও এবং আলোক প্রযুক্তির মিশ্রণ ঘটিয়েছেন, যা রেডিও তরঙ্গের সাথে আলোর মাধ্যমে আরও উন্নত ডেটা স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছে।
এতে করে একটি বিশাল ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডউইথ তৈরি হয়েছে, যা আগের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে। এর ফলে গবেষকরা একটি ১৪ জিবি আকারের আলট্রা এইচডি সিনেমা মাত্র ০.১২ সেকেন্ডে ডাউনলোড করতে সক্ষম হয়েছেন, যেখানে একটি সাধারণ ৫জি সংযোগে এটি করতে ১৯ মিনিট সময় লাগে।
এই নতুন প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে প্রমাণিত হলে, এটি উচ্চগতির সংযোগের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। গবেষকরা আশা করছেন যে, এটি শুধুমাত্র উচ্চগতির ফাইবার অপটিক ক্যাবল এবং অন্যান্য ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য নয়, বরং স্মার্টফোন এবং ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে ডেটা স্থানান্তরকে আরও উন্নত করবে। এর ফলে উচ্চ জনবহুল এলাকায় দ্রুত এবং স্থিতিশীল সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হবে।
গবেষণাটি এখনো পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ থাকলেও, গবেষকরা ইতিমধ্যে একটি প্রোটোটাইপ ডিভাইস তৈরি করার কাজ শুরু করেছেন, যা বাণিজ্যিকভাবে পরীক্ষিত হতে পারে। যদি সফলভাবে এটি বাণিজ্যিক পরিবেশে প্রয়োগ করা যায়, তাহলে পরবর্তী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা এই প্রযুক্তিকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে দেখতে পারবো। বিশেষ করে মোবাইল নেটওয়ার্কগুলো এই প্রযুক্তি থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে, যা উচ্চগতির এবং স্থিতিশীল সংযোগ প্রদান করতে সক্ষম হবে।